বিগত প্রায় ৬ মাস ধরে চলচ্চিত্রের শিল্পী ও কলাকুশলীদের মধ্যে নানা বিতর্ক এবং নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো থেকে মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত হয়েছে এবং চলছে। এসব ঘটনার মধ্যেই একের পর এক অগ্রহণযোগ্য ঘটনায় কোনো কোনো শিল্পী জড়িয়ে পড়ছেন। সর্বশেষ জায়েদ খানের সঙ্গে ওমরসানির অপ্রীতিকর ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। এ ঘটনার সূত্র ধরে ওমর সানির স্ত্রীর অডিও বার্তা যেন ঘটনায় ঘি ঢেলে দিয়েছে। ওমর সানি ও মৌসুমীর সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে বলে আলোচনা হচ্ছে। আবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কোনো কোনো সদস্য, যাদের চলচ্চিত্রে নিজস্ব অবস্থান বলতে কিছু নেই, তারা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবের অবাধ সুবিধা নিয়ে লাইভ কিংবা আলোচনার নামে একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো থেকে শুরু করে এমনসব অশালীন ভাষা ব্যবহার করছেন, যাতে পুরো শিল্পী সমাজ তো বটেই চলচ্চিত্রেরও বদনাম হচ্ছে। এতে চলচ্চিত্র সাংবাদিকরাও বিব্রতবোধ করছেন। চলচ্চিত্রের সামগ্রিক নেতিবাচক সংবাদের কারণে তাদেরকে পারিবারিক, সামাজিক এমনকি পেশাগতভাবেও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা করার বিষয়টি হেয় হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে করণীয় হিসেবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের একদল নিয়মিত সাংবাদিক শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে গত মঙ্গলবার এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়। সভার সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন দৈনিক আজকালের প্রতিবেদক আহমেদ তেপান্তর। সভায় উপস্থিত হন সিনিয়র সাংবাদিক লিটন এরশাদ, দুলাল খান, কামরুল হাসান দর্পণ, আহমেদ সাব্বির রোমিও, জাহাঙ্গীর বিপ্লব, আবুল কালাম, নিথর মাহবুব, রাহাত সাইফুল, পান্থ আফজাল, রঞ্জু সরকার, আশরাফুল আলম আসিফ, রুহুল আমিন ভূঁইয়া, মুহিব আল হাসান, নাজমুল আহসান, মইনুল ইসলাম, লিটন মাহমুদ প্রমুখ। সভার শুরুতে কামরুল হাসান দর্পণ শিল্পী সমিতির সভাপতির কাছে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, বিগত কয়েক মাস ধরে চলচ্চিত্রের বিশেষ করে শিল্পীদের মধ্যকার নানা নেতিবাচক ঘটনা ঘটে চলেছে, যা শিল্পী সমাজের ভাবমর্যাদা থেকে শুরু করে পুরো চলচ্চিত্র সম্পর্কে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সচেতন মহলে সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। এতে আমাদের বিনোদন সাংবাদিক সমাজকেও বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। পুরো চলচ্চিত্র নিয়ে হাস্যরস ও সমালোচনা তৈরি করছে। বিগত কয়েক মাসে যেসব নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছে, তার প্রায় সবকটির সাথে শিল্পী সমিতির সদস্যরা কোনো না কোনোভাবে জড়িত। যে শিল্পীদের প্রতি দর্শকের প্রবল আকর্ষণ রয়েছে, যাদের অনেকে আইডল মনে করে, তাদের যেকোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ও অপকর্ম তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। চলচ্চিত্রেরও বদনাম হয়। এমনিতেই চলচ্চিত্রের চরম দুরবস্থা চলছে, তার মধ্যে শিল্পীদের এমন আচরণ ও অপকর্ম আরও খারাপের দিকে ঠেলে দেবে। কোনো শিল্পী ফেসবুক লাইভে কিংবা ইউটিউবে এসে এমনসব বিষয় নিয়ে হাজির হয় এবং যেসব অশালীন ভাষা ব্যবহার করে, তাতে পুরো চলচ্চিত্র সমাজকে দুর্নামের ভাগিদার করছে। তিনি বিগত ৬ মাসে যত ঘটনা ঘটেছে তার সবই নেতিবাচক। প্রশংসা করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি ইলিয়াস কাঞ্চনকে শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবে, এর সদস্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং তারা যাতে এমন কোনো কাজে জড়িয়ে না পড়ে, এ ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন করার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। শিল্পীদের মর্যাদা রক্ষায় সমিতির পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, শিল্পীরা যদি নিজেদের সুশৃঙ্খল ও আচরণে সংযত এবং মর্যাদা বজায় রেখে চলেন, তাহলে চলচ্চিত্রে অপ্রীতিকর ঘটনা যা সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত হয়, তা অনেকাংশে কমে যাবে। কারণ চলচ্চিত্রের অন্য যে কারোর চেয়ে শিল্পীদের ঘটনা সবচেয়ে বেশি দ্রুত ছড়ায় এবং মানুষের আগ্রহও সবচেয়ে বেশি। তাদের ছোট্ট ঘটনাও অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়। দুলাল খান ইলিয়াস কাঞ্চনকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনার উদ্যোগ ও আহ্বানই পারে শিল্পীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে, শিল্পী সমাজের মান-মর্যাদা রক্ষা করতে। সমিতির সভাপতি, সর্বোপরি শিল্পীদের অভিভাবক হিসেবে এ দায়িত্ব আপনার পালন করা উচিৎ। যেসব শিল্পী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা ইউটিউবে চলচ্চিত্রের সম্মান ক্ষুন্ন হয় এমন কথাবার্তা বলেন, তাদেরকে সতর্কবার্তা প্রদান ও সচেতন হওয়ার দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। কিছু শিল্পীর অগ্রহণযোগ্য আচরণ ও অপকর্মের কারণে পুরো চলচ্চিত্রের বদনাম মেনে নেয়া যায় না। আমরা যারা সাংবাদিকতা করি, তাদেরও এই বদনামের ভাগিদার হতে হচ্ছে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কর্মস্থলে ও সাংবাদিক সমাজেও তির্যক কথা শুনতে হচ্ছে। সর্বোপরি আমাদের সুস্থ সাংবাদিকতার জায়গাটি সংকুচিত হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতির উত্তরণে আপনার অগ্রণী ভূমিকা আমরা আশা করছি। সভায় উপস্থিত সাংবাদিকরাও একই মতামত প্রদান করেন এবং এ ব্যাপারে শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবে তার সদস্যদের সংযত হওয়া এবং তারকাসুলভ আচরণ বজায় রাখার ক্ষেত্রে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করার অনুরোধ জানান। ইলিয়াস কাঞ্চন ধৈর্য্য সহকারে সকলের বক্তব্য শোনার পর বলেন, আমিও কিছু শিল্পীর নানা নেতিবাচক ঘটনায় বিব্রত। আপনাদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমরা ইতোমধ্যে শিল্পীদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য মাধ্যমে যাতে শিল্পীসুলভ কথাবর্তা ও আচরণ করেন, এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছি। তাদের সচেতন হওয়ার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে আহ্বান ও সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অচিরেই এ ব্যাপারে মিটিং করে অফিসিয়ালি সমিতির সকল সদস্যদের এ বার্তা পৌঁছে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতাও প্রয়োজন। আপনাদের কাছে প্রত্যাশা, এমন কোনো সংবাদ পরিবেশন করবেন না, যাতে বিষয়টি আরও ব্যাপক আকার লাভ করে। আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। চলচ্চিত্রের কল্যাণে এর ইতিবাচক দিকগুলো বেশি করে তুলে ধরবেন বলে আশা করি। সমিতির সকল সদস্যদেরও আপনাদের মাধ্যমে আহ্বান জানাই, তারা যাতে তাদের মানসম্মান নিজেরা বজায় রাখেন। এমন কোনো কথা বা আচরণ করবেন না, যাতে শিল্পী সমাজের বদনাম হয়। যেকোনো সমস্যা ও সংকট সেটা ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক হতে পারে, তা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করব। সবশেষে ইলিয়াস কাঞ্চন সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান এবং চলচ্চিত্রের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন