ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটেছে। এতে তিস্তা অববাহিকার চর ও গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে।
আজ শুক্রবার (১৭ জুন) নীলফামারীর তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে সকাল ৬টায় নদীর পানি বিপদসীমার (৫২.৬০) ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পাশাপাশি রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে বন্যা কবলিত মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়ে। পানির চাপ মোকাবিলায় ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট ২৪ ঘন্টা খুলে রাখা হয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা। তিনি বলেন সকাল ৯টায় তিস্তার পানি কিছুটা কমে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুত্র মতে গতকাল বৃহস্পতিবার তিস্তার পানি বিপদসীমা বরাবর প্রবাহিত হলেও আজ বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই,খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, কৈইমারী, শৌলমারী ইউনিয়নের তিস্তার তীরবর্তী ও লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। কোথাও কোথাও গলা সমান ও হাঁটু পানিতে ডুবে আছে ঘরবাড়িসহ উঠতি ফসল। এতে চরাঞ্চলে চাষ করা বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে মসজিদপাড়া, টাবুরচর, পূর্বখড়িবাড়ি, বাঘের চর, জিঞ্জিরপাড়াসহ ছয়টি এলাকায় পানি প্রবেশ করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ। এই ইউনিয়নের স্বপন বাধের ৫০ ফুড বিধ্বস্থ্য হয়ে নদীর পানি প্রবেশ করে ২৮০ পরিবারের বসতঘর তলিয়ে দিয়েছে। এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েছে ইউপি চেয়ারম্যান।
স্বপন বাঁধ এলাকার বাসিন্দা সবুজ ইসলাম বলেন, গত বন্যায় আমাদের গ্রাম রক্ষা তিস্তা নদীর স্বপন বাঁধটি ভেঙে যায়। বছর পেরিয়ে গেলেও বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত হয়নি। এই বাধটি পিআইও অফিসের আন্ডারে। বাঁধ মেরামতের বরাদ্দ পেয়ে তিন দিনআগে ইউপি চেয়ারম্যান মেশিন লাগিয়ে বালু মাটি দিয়ে মেরামতের চেস্টা চালায়। কিন্তু একদিন পর কাজ বন্ধ রেখে ইউপি চেয়ারম্যান আর এদিকে আসেনি ও আমাদের কোন খবর নেয়নি। রান্না করে খাওয়ার মতো কোন পরিস্থিতি নেই। শুকনা খাবার বিতরন জরুরী হয়ে পড়লেও এখন কোন ত্রান এলাকায় পৌছেনি।
খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিখন বলেন, কিসামত, ছাতনাই ও দোহলপাড়া গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এসব পরিবারের অধিকাংশ বাড়ি হাঁটু পানিতে তলিয়ে রয়েছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেশ্বর, পূর্ব ছাতনাই ও খোকার চরের ৫ শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী জানান তার ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া, ছাতুনামা, ভেন্ডবাড়ি এলাকার ৫শত পরিবারের বসতঘর তিস্তার পানিতে তলিয়ে আছে।
খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান বলেন বাইশপুকুর ছোটখাতা, বানপাড়া, সুপারীটারী গ্রামের প্রায় ৫শতাধিক পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যেতে থাকে।বাসা-বাড়ি ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে উঁচুস্থানে আশ্রয় নিতে হয়েছে। গবাধীপশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। নিজেরাই শুকনা খাওয়া জোড় করে খেতে হচ্ছে। সরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি এখনো। ডিমলা উপজেলার নির্বাহীকর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, ১৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আপাতত তা বিতরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন