বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও যাতায়াত ভাতা বাদ দিয়ে বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি আয় হলেই তাকে কর দিতে হয়। এই নিয়ম মেনে যারা করের আওতায় পড়েন, তাদের সবাইকে বার্ষিক আয়কর রিটার্ন অবশ্যই জমা দিতে হয় ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। তার সঙ্গে হিসাব করে কর পরিশোধ করতে হয়। তবে রিটার্ন দাখিল আর কর পরিশোধ দুটি এক নয়। কোনো ব্যক্তির আয় যদি করসীমা অতিক্রম না করে, তা হলে কর দিতে হবে না। শুধু রিটার্ন দাখিল করলেই চলবে। আয় যদি করসীমা অতিক্রম করে, তাহলেই তাকে কর পরিশোধ করতে হবে। এখানে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। তা হলো, রাজস্ব আদায় করা হয় করযোগ্য আয় থেকে। কারণ, আয়ের ওপর নানাভাবে রেয়াত বা করছাড় পাওয়া যায়। এসব সুবিধা বাদ দিয়ে ‘করযোগ্য’ আয় হিসাব করা হয়।
১৬ হাজার টাকার বেশি বেতন হলে কত টাকার কর দিতে হবে? সেক্ষেত্রে আপনার করযোগ্য আয়ই বা কত? এনবিআরের তথ্য মতে, সরকারি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ ও করপোরেশনে চাকরি করলে কোনও কর্মচারীর মূল বেতন যদি বছরের কোনও এক মাসে ১৬ হাজার টাকা বা এর বেশি হয়; তবে ওই কর্মচারীকে রিটার্ন দিতে হবে। এর মানে হলো, বছরে যেকোনো একবার মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা স্পর্শ করলেই এনবিআরের জালে পড়ে যাবেন আপনি। রিটার্ন দিলেও আয়ের ওপর কর আছে কি না, তা সরকারি কর্মকর্তা বুঝবেন কীভাবে? সাধারণত ১২ মাসের মূল বেতন, উৎসব বোনাস ও বৈশাখী বোনাস যোগ করে যদি তিন লাখ টাকার বেশি হয়; তবে কর দিতে হবে। করের হিসাব গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি বেতন আদেশভুক্ত একজন কর্মচারীর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস (যে নামেই হোক না কেন) করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে। এর বাইরে অন্যান্য ভাতা ও সুবিধাদি যেমন, বাড়ি ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, বাংলা নববর্ষ ভাতা ইত্যাদি করমুক্ত থাকবে। একজন সরকারি চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে হিসাবটা এ রকম হতে পারে। ধরুন, জীবন সাহেব সরকারি চাকরি করেন এবং জুন ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরে নিন্মোক্ত হারে বেতন ভাতাদি পেয়েছেন। তার মাসিক মূল বেতন ৩৫ হাজার ৫০০, চিকিৎসা ভাতা ৭০০ টাকা, উৎসব ভাতা ৭১ হাজার টাকা, বাংলা নববর্ষ ভাতা ৭ হাজার ১০০ টাকা, থাকেন সরকারি বাসায়।
মোট করযোগ্য আয়
যেহেতু জীবন সাহেব সরকারি কর্মচারি তাই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শুধু মূল বেতন এবং উৎসব ভাতা ছাড়া আর কিছুই করযোগ্য আয়ের সাথে যোগ হবে না। অর্থাৎ চিকিৎসা ভাতা এবং বাংলা নববর্ষ ভাতা সম্পূর্ণ আয়কর মুক্ত। আর তিনি যেহেতু সরকারি বাসায় থাকেন এবং এ বাবদ নগদ কোনও ভাতা পাচ্ছেন না তাই এই খাত থেকেও কিছু যোগ হবে না। তাহলে মি জীবনের বেতন থেকে মোট করযোগ্য আয় হবে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ০০০ টাকা (মূল বেতন ৩৫,৫০০*১২=৪,২৬,০০০ টাকা এবং উৎসব ভাতা=৭১,০০০ টাকা)। এই টাকার উপর তাকে আয়কর দিতে হবে।
কর দায় পরিগণনা
সাধারনত করমুক্ত সীমা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ কোন করদাতার যদি করযোগ্য আয় ৩ লাখ টাকা থাকে তাহলে তাকে কর দিতে হয় না। এখন ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে করহার শূন্য। পরবর্তী এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট টাকার ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর কেটে রাখা হয়।
কর রেয়াত গণনা
একজন করদাতা সর্বোচ্চ কত বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন তা আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-তে বলা আছে। সেখানে তিনটি অংকের কথা বলা হয়েছে। তবে একজন ব্যাক্তি করদাতা তার করযোগ্য আয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ হিসেবে দেখাতে পারবেন যার উপর নির্দিষ্ট হারে কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন। তাহলে করযোগ্য আয়ের উপর জীবনের সর্বোচ্চ বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১ লাখ ২৪ হাজার ২৫০ (৪,৯৭,০০০*২৫ শতাংশ) টাকা। ধরে নিলাম তিনি সম্পূর্ণ টাকাই বিনিয়োগ করেছেন। এই টাকার উপর তিনি ১৫ শতাংশ হারে কর রেয়াত পাবেন। তাহলে কর রেয়াতের পরিমাণ হবে ১৮ হাজার ৬৩৮ (১,২৪,২৫০*১৫ শতাংশ) টাকা।
নীট কর দায়
বেতন দেওয়ার সময় নিয়মমত উৎসে কর কেটে নেয়া হয়। ধরে নিলাম তার বেতন থেকে উৎসে মাসিক ৩০০ টাকা করে কর কেটে রাখা হয়েছে। তাহলে ১২ মাসে মোট ৩ হাজার ৬০০ টাকা উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে। তার মোট কর দায় ২৪ হাজার ৭০০ টাকা। এ থেকে উৎসে কর এবং কর রেয়াত মিলে মোট ২২ হাজার ২৩৮ (১৮,৬৩৮+৩,৬০০) টাকা বাদ দিতে হবে। বাদ দেওয়ার পর তার নীট কর দায়ের পরিমাণ হবে ২ হাজার ৪৬২ (২৪,৭০০-২২,২৩৮) টাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন