টানা বৃষ্টিতে খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের প্রাণহানির শঙ্কাও রয়েছে। ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় চারশতাধিক পরিবার। সে সাথে থামছে না পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন। প্রতি বছর বর্ষা এলেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও সারা বছর পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন নিয়ে প্রশাসন নির্বিকার
এদিকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে বেড়েছে মাইনী ও চেঙ্গী নদীর পানি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে প্লাবিত হবে নিমাঞ্চল। পাহাড় ধস মোকাবেলা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া ঝুঁকি এড়াতে মাইকিং করবে জেলা প্রশাসন।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, খাগড়াছড়ির জেলা সদরের শালবাগান, কদমতলী, কুমিল্লা, মোল্লাপাড়া, সবুজবাগসহ বেশ কিছু এলাকায় স্থানীয়রা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এছাড়া জেলার মাটিরাঙা, দীঘিনালা, রামগড়, লক্ষীছড়ি এবং মহালছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে স্থানীয়রা।
২০১৭ সালের এই দিন থেকে খাগড়াছড়িতে শুরু টানা বর্ষণে তিন জনের প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়। অথচ এখনো খাগড়াছড়ি জেলায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় চার শতাধিক পরিবার। বর্ষা মৌসুম আসায় পাহাড়ে বসবাসকারী এসব পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। খাগড়াছড়ি শহরের বিশেষ করে শহরের কলাবাগান, নেন্সিবাজার,মোল্লাপাড়া, কৈবল্যপিঠ, আঠার পরিবার, শালবন ও মোহাম্মদপুরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এভাবে পাহাড়ের ঢালে ঢালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে সহস্রাধিক পরিবার।
এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যেমন, মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি, রামগড়, মহালছড়ি, গুইমারার সিন্দুকছড়ি সহ অনেক জায়গায়ই বিগত বছরগুলোতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে শহরের বেশ কয়েকটি স্পটে পাহাড় কেটে বা পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ বেড়ে চললেও পাহাড় কেটে বাড়িঘর নির্মাণ বন্ধে প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। অপর দিকে পাহাড়ে পাদদেশে বসবাসকারীরা বলছে, থাকার জায়গা না থাকায় জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে তারা পাহাড়ের পাদদেশে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সরকার পুনর্বাসনের উদ্যোগে নিলে সরে যেতে রাজি তারা। খাগড়াছড়ি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অন্যত্র পুনর্বাসনের উদ্যোগ না নিলে ভয়াবহ প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে সাংবাদিকরা লেখালেখি করছেন। বর্ষা আসলে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেন। কিছু ত্রাণ দেন। আশ্বাস দেন পুনর্বাসনের কিন্তু এর পর কেউই খবর রাখেন না।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, সামনে বর্ষা আসছে। বর্ষায় পাহাড় ধসে ব্যাপক জীবন হানির শঙ্কায় বুকে কম্পন শুরু হয়েছে। তবে এককভাবে নয়, সম্মিলিত উদ্যোগে পাহাড়ে পাদদেশে ঝুঁকিপ‚র্ণভাবে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। পাহাড় কাটা বন্ধ ও পাহাড়ের ঢালে বসতি স্থাপন বন্ধের উদ্যোগ না নিলে যে কোন সময় প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে। তাই শুধু প্রতিশ্রতি নয়, উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন প্রত্যাশা সচেতন মহলের।
অপরদিকে, ঠিক ৫ বছর প‚র্বে ২০১৭ সালের ১৩ই জুন কাপ্তাই তথা পার্বত্য জেলা রাঙামাটির জন্য একটি বিভীষিকাময় দিন। কেননা ওইদিন ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে কাপ্তাইয়ে ১৮ জনের প্রাণহানী ঘটে। এখনো দিনটির কথা মনে পড়লে শিহরিত হয়ে উঠেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো। হয়তো কেউ ভাবেনি তখন এমন একটা দুঃসময় ঘনিয়ে আসছে। ২০১৭ সালের ১৩ জুন সকালে প্রথম কাপ্তাইবাসী শুনলো ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের কথা। এর পর থেকে একই দিন বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসতে লাগলো মৃত্যুর কথা। সেইদিন সকালে প্রথম দুঃসংবাদ আসে ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়ি হতে।
ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে সেইদিন ঐ এলাকার বসবাসরত নুরনবী সহ তার ছেলের গর্ভবতী স্ত্রী এবং তার শিশু পুত্র ঘটনাস্থলে পাহাড়ধ্বসে মারা যায়। ঘটনার পর পরই ফায়ার সার্ভিস সহ ঐ এলাকায় ছুটে যান তদান্তিন কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম এবং ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী। এরপর একে একে ওয়াগ্গার মুরালীপাড়া, রাইখালির কারিগর পাড়া এবং চিৎমরম হতে পাহাড়ধ্বস ও মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। সেইদিনের পাহাড় ধ্বসে কাপ্তাইয়ে প্রাণ হারায় সর্বমোট ১৮ জন।
পাহাড়ী ঢ়লে তলিয়ে যায় শত শত একর সবজি ক্ষেত, বিনষ্ট হয় বহু ঘরবাড়ী। দিনটি ছিলো একটি দুঃসপ্নের দিন কাপ্তাইয়ে বসবাসরত মানুষের। কিন্তু পাহাড় ধ্বসের ৫ বছর পার হলেও এখনো কাপ্তাইয়ের অনেক জায়গায় ঝুঁকিপ‚র্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। বিশেষ করে ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়নের ঢাকাইয়া কলোনিতে ঝুঁকিপ‚র্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। এইছাড়া ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মুরালীপাড়া, রাইখালী ইউনিয়নের কারিগর পাড়া, তিনছড়ি, মিতিঙ্গাছড়ি সহ দ‚র্গম অনেক জায়গায় ঝুঁকিপ‚র্ণভাবে বসবাস করছে অনেক পরিবার।
বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি হলে এদেরকে প্রশাসনের পক্ষ হতে আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে আসা হলেও এই সব পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে প‚র্নবাসন করা যায়নি। এদিকে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে যদি কাপ্তাইয়ের পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাস করা মানুষগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা না হয়, তবে আবারো এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন