বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

পথ নির্দেশ : সব কাজে বিসমিল্লাহ্ বলাই শ্রেয়

আলী এরশাদ হোসেন আজাদ | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সম্প্রতি ‘বিসমিল্লাহ্’র অবমাননা আশঙ্কায় এবং মহান আল্লাহ্র পবিত্র নাম স্মরণের আকাক্সক্ষায় ‘বিস্মিহী তা’লা’ বিভিন্ন চিঠি, প্রচারপত্র সাইনবোর্ড ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ‘বিসমিল্লাহ্’র বিকল্প ভাষার প্রচলন অনুসরণীয় যুগে ছিল না এবং ধর্মের নামে নতুনত্বকে বিদ’আত বলে। ‘বিদ’আত’ রোধে প্রিয়নবী (সা.) বলেন “যে ব্যক্তি আমার দ্বীনের মধ্যে এমন কোনো নতুন কথা সৃষ্টি করে, যা আসলে এরমধ্যে নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত বা বাতিল” (বুখারি)। তিনি (সা.) বলেন “প্রত্যেক বিদ’আত বা নতুনত্বই পথভ্রষ্টতা” (মুসলিম)। তিনি (সা.) আরো বলেন, “যে ‘বিদ’আতি’কে সম্মান দেখিয়েছে সে নিশ্চয়ই ইসলামের ধ্বংস সাধনে সাহায্য করেছে” (বায়হাকি)।
বিশ্বজনীন-জনপ্রিয়, সহজ-শাশ্বত জীবনদর্শন ও মানবধর্ম ‘ইসলাম’। কেননা, উদারতা, গতি, সাম্য, স্বীকৃতি, গ্রহণ-বর্জন মানদ-ে ইসলাম একটি আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক এবং যুক্তির অগ্রাধিকার নীতি ও ধর্মমতে বিশ্বাসী। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, “সহজ পথ অবলম্বন করো, জটিলতা করো না। সুসংবাদ জানিয়ে কাছে টানো, ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিও না” (বুখারি)।
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বুজুর্গ আলিম, ওয়ালি-আউলিয়া আর স্বনামধন্য পীর-মুর্শিদের মাধ্যমে। অথচ সাম্প্রতিককালে পরম শ্রদ্ধেয় আলিম-উলামাদের কারো কারো বক্তব্য-ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে নতুনত্ব ও আলাদা অবস্থান বিস্ময়কর মনে হয়। এসব ‘নতুনত্বের মোড়কে বিভ্রান্তিকর তত্ত্বে’র অন্যতম ‘বিস্মিহী তা’লা’র প্রচলন। জাহিলিয়্যাতের যুগে লোকদের অভ্যাস ছিল সব কাজ তাদের দেব-দেবীর নামে শুরু করা। এ চেতনা রহিত করবার জন্যই ‘বিসমিল্লাহ্’ বা সব কাজ আল্লাহ্র নামে শুরু করবার বিধান চালু হয়। পবিত্র কুরআনের প্রথম আদেশ “পাঠ করুন, আপনার প্রভুর নামে....” (আলাক : ০১)। এমন কি নারী-পুরুষের মিলনের সময়ও আল্লাহ্র নাম কিভাবে স্মরণ করতে হবে তা হাদিসের বর্ণনায় রয়েছে। ইসলামের শুভ সূচনার যুগে প্রিয়নবী (সা.) সব কাজ ‘বি-ইস্মিকা আল্লাহুম্মা’ বলে আরম্ভ করতেন এবং লেখার সময় একথা লেখাতেন। কিন্তু ‘বিসমিল্লাহ্’ নাজিল হওয়ায় সব কাজে আরবি ভাষায় ‘বিসমিল্লাহ্’Ñ পূর্ণবাক্য ব্যবহারের নিয়ম প্রবর্তন করা হয় (কুরতুবী; রুহুল মা’আনী)। তবে যেসব ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআনের বাণী ‘বিসমিল্লাহ্’র অবমাননার আশঙ্কা রয়েছে এমন ক্ষেত্রে ‘বিসমিল্লাহ্’ ব্যবহার না করা উচিত। এমন অবমাননার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী দায়ী থাকবেন। চিঠিপত্রে ‘বিসমিল্লাহ্’ লেখার কারণে অবমাননার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ‘বিসমিল্লাহ্’ না লিখে বরং লেখকের উচিত মনে মনে ‘বিসমিল্লাহ্’ পড়ে নেওয়া। (তাফসির মা’রিফুল কুরআন : ই. ফা. বা)। তবে আরবি বা বাংলায় ‘বিসমিল্লাহ্’র গাণিতিক চিহ্ন হিসেবে ৭৮৬ বা ‘বিস্মিহী তা’লা’ লেখার কোনো শরিআ’ সম্মত ভিত্তি নেই। তবে যেখানে অবমাননার আশঙ্কা নেই যেমনÑ মসজিদ, মাদ্রাসা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী গেইট, সাইনবোর্ড, অনারবোর্ড, সমৃতিফলক, ভিত্তিপ্রস্তর, বাড়ি-গাড়ির সামনে ইত্যাদি ক্ষেত্রে ‘বিসমিল্লাহ্’ লেখা অত্যন্ত বরকতময় এবং প্রত্যাশিত। এমন ক্ষেত্রে ‘বিস্মিহী তা’লা’ আলাদা পরিচিতি ও নতুনত্বের বিভ্রান্তি তৈরি করে কি না ভেবে দেখা উচিত। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন