সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নারী নির্যাতন চীনের আরেকটি মহামারী

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২২, ৪:৫৪ পিএম | আপডেট : ৮:৩৯ পিএম, ২১ জুন, ২০২২

২০১৪ সালের ঘটনা। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নানিং এর বাসিন্দা তাং পিংয়ের প্রথম সন্তানের বয়স তখন মাত্র ছয় মাস। সেসময় তার শিক্ষাবিদ স্বামী নিয়মিত তাকে মারধর করতেন। পিং মারাত্মকভাবে আহত হলেও লজ্জিত বোধ করতেন। ভাবতেন, তিনি হয়ত ভালো স্ত্রী হয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু প্রতিনিয়ত মারধরে পিং কী করবেন তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

বছর পাঁচ বছর আগে, আরেক দফা মারধরের শিকার হওয়ার পর তিনি পুলিশে অভিযোগ দেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাকে যা করা হয়েছে সেটি তেমন গুরুতর নয়। পরে পুলিশ তাতে আর আগ্রহ দেখায়নি। সেসময় থেকে নানা নির্যাতন সহ্য করার পর অবশেষে এই সপ্তাহে আইনগতভাবে বিচ্ছেদের প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি।
২০১৬ সালে চীনে পারিবারিক সহিংসতা বিরোধী আইন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ হয়নি। এ ধরনের সহিংসতাকে এখনও ট্যাবু হিসেবে ধরা হয়। পিংয়ের মতো অনেকেই নারীর প্রতি সহিংসতাকে প্রাথমিকভাবে পারিবারিক জীবনের অংশ হিসাবেই মনে করেন।
কিন্তু পিং আর এই অত্যাচার নীরবতা সহ্য করতে পারছিলেন না। গত সপ্তাহে উত্তর চীনের তাংশান শহরে এক নারীর ওপর ভয়াবহ হামলার কথা তুলে ধরে পিং বলেন, “গণমাধ্যমে উঠে আসা নারীর প্রতি সহিংসতার দিকে তাকান। এটি চীনের আরেকটি মহামারী।”
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে আবার খবরের শিরোনাম হতে শুরু করেছে। কোভিড মহামারীর ফলে সমস্যাটি আরও বেড়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, এটি একটি ‘ছায়া মহামারী’।
এক দশক আগে ভারতে নির্ভয়ার ট্র্যাজেডি থেকে শুরু করে গত বছর ব্রিটেনে সারাহ এভারার্ডের হত্যা পর্যন্ত, নারীদের প্রতি সহিংসতা বিশ্বের অনেক জায়গায় তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়েছে। তবে চীনে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুশীল সমাজে বিভাজনের ফলে সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা ক্যাম্পেইন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক নারীবাদী মানবাধিকার কর্মী লু পিন বলেন, “হ্যা, তাংশানে যা ঘটেছিল তা নিয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ এবং পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীদের প্রতি সহানুভূতি দেখায়; কিন্তু মৌলিকভাবে পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য আমাদের উচিত চীনে পদ্ধতিগত সমস্যা সমাধান করা।”
২০১৫ সালে ‘ফেমিনিস্ট ফাইভ’ এর নারীবাদীদের গ্রেপ্তারের পর চীন ছেড়েছিলেন লু পিন। তার ভাষ্য, “দুর্ভাগ্যবশত, যারা সত্যিকারের সামাজিক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিতে পারে- যেমন, মানবাধিকার কর্মী এবং তৃণমূল সুশীল সমাজের সংগঠক, এখন তাদের সরকারের বিরোধী বলে মনে করে কর্তৃপক্ষ।”
লু-এর মতো কর্মীদের উদ্বেগ, তাংশানের মতো ঘটনা আবার ঘটতে পারে। বছরের পর বছর ধরে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, অনলাইনে বিরূপ মন্তব্য এবং ভিডিওগুলো চীনে সাইবার স্পেস জুড়ে রয়েছে।
পিং বলেন, তিনি তার পরিচয় প্রকাশ ও স্বামীর নির্যাতনের ঘটনাটি অনলাইনে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলে অনেকে তাকে দোষারোপ করেন।
এরকম ঘটনার ক্ষেত্রে পিং-ই একমাত্র নারী নন। গত বছর জিয়াও মেইলি নামের এক চীনা নারীবাদী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছিলেন, রেস্তোরাঁয় এক ব্যক্তিকে ধুমপানে নিষেধ করায় তার দিকে ওই ব্যক্তি গরম ছুড়ে মেরেছিল। ওই ঘটনায় উল্টো জিয়াও ট্রোলের শিকার হয়েছিলেন। ওই ঘটনার জন্য উল্টো তাকে দোষারোপ করেন অনেকে। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, ‘আমি আশা করি তুই পড়বি’, ‘দুশ্চরিত্রা’।
জিয়াংয়ের অভিযোগ, ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো অনলাইনে নারীবিদ্বেষী বার্তা রোধে যথেষ্ট কাজ করছে না। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটকে জিয়াও বলেন, ‘উইবো সবথেকে বড় উস্কানিদাতা’।
দুই সন্তানের জননী তাং পিং বলেন, পারাবারিক সহিংসতার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার পর নানা কথা শোনা সত্ত্বেও তিনি তার স্বামীর সঙ্গে এখন বিচ্ছেদ চান। অন্য নারীদের তিনি দেখাতে চান, পারিবারিক সহিংসতা একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
গত বছর নির্যাতনের প্রমাণসহ বারবার অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ অবশেষে তার মামলা নেয় এবং বিচ্ছেদ ঘটানোর পরামর্শ দেয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন