সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মহামারীতে হজরত ওমরের (রা.) যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২০, ৩:৪৮ পিএম

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমলে সিরিয়া-প্যালেস্টাইনে দেখা দেয় মহামারী প্লেগ। খলিফা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে জানতে পারলেন, সিরিয়ায় মহামারী প্লেগ দেখা দিয়েছে। তাতে তিনি তাঁর সিরিয়া সফর স্থগিত করেছিলেন।এটি ছিল যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। মুসলিম উম্মাহর জন্য তা ছিল অনেক বড় শিক্ষণীয়।

৬৩৯ ঈসাব্দে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলামি খেলাফতের আমির।তিনি মদিনা থেকে ‘সারগ’ নামক অঞ্চলে পৌছলে সেনাপতি আবু উবায়দাহ রা. জানান যে, সিরিয়ায় প্লেগ তথা মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সে সময় তিনি সফর স্থগিত করেছিলেন।

করোনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে হজরত ওমর রা. সে ঘটনায় রয়েছে উদ্দীপনা। ঘটনাটি এমন- সিরিয়া মহামারী প্লেগ-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় হজরত ওমর প্রবীণ সাহাবাদের কাছে এ মর্মে পরামর্শ চান যে, তিনি সিরিয়া সফর করবেন নাকি মদিনায় ফিরে যাবেন? সাহাবাদের মধ্য থেকে দুটি মতামত জানানো হয়-
প্রবীণ সাহাবাদের পরামর্শ : কিছু সাহাবা মতামত দিলেন যে, আপনি যে উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন, সে উদ্দেশে সফর অব্যাহত রাখেন। অর্থাৎ সিরিয়ায় যাওয়ার পক্ষে মত দেন। আবার কিছু সাহাবা বললেন, ‘খলিফার সিরিয়া যাওয়া উচিত হবে না।

আনসার ও মুহাজিরদের পরামর্শ সভা : হজরত ওমর রা. প্রবীণ সাহাবাদের কাছ থেকে দুটি মতামত পাওয়ায় পুনরায় পরামর্শের জন্য আনসার ও মুহাজির সাহাবাদের ডাকলেন। তারাও মতপার্থক্য করলেন।

প্রবীন কুরাইশদের পরামর্শ সভা : খলিফা ওমর রা. সবশেষে প্রবীণ কুরাইশদের ডাকলেন। তারা কোনো মতানৈক্য না করে সবাই এ মর্মে মতামত ব্যক্ত করলেন যে- সিরিয়ার সফর স্থগিত করে আপনার মদিনায় প্রত্যাবর্তন করা উচিত। আপনি আপনার সঙ্গীদের মহামারী প্লেগের দিকে ঠেলে দেবেন না।
হজরত ওমর রা. প্রবীণ কুরাইশদের মতামত গ্রহণ করে সিরিয়া সফর স্থগিত করে মদিনায় ফিরে গেলেন। খলিফার মদিনায় ফেরত যাওয়া দেখে সেনাপতি হজরত উবায়দাহ রা. বললেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আপনি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদির থেকে পলায়ন করে ফিরে যাচ্ছেন?’

সেনাপতি হজরত আবু উবাইদাহর রা. কাছ থেকে এ কথা শুনে হজরত ওমর রা. কষ্ট পেলেন। প্রিয় মানুষের কাছে যেভাবে আপনজন কষ্ট পায়। কেননা হজরত আবু উবায়দাহ রা. ছিলেন খলিফার অনেক পছন্দ ও ভালোবাসার পাত্র। তাছাড়া সেনাপতি আবু উবায়দাহ রা. ছিলেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবাদের অন্যতম।

তখন হজরত ওমর রা. বললেন, ‘হে আবু উবায়দাহ! এ কথাটি তুমি না বলে যদি অন্য কেউ বলতো! তিনি সেনাপতির কথার উত্তরে বললেন- ‘হ্যাঁ’, আমরা আল্লাহর এক তাকদির থেকে আরেক তাকদিরের দিকে ফিরে যাচ্ছি।’ হজরত ওমর রা. সেনাপতি আবু উবায়দাহকে এ কথা বুঝাতে একটি উদাহরণ তুলে ধরেন এবং বললেন-
‘তুমি বলতো, তোমার কিছু উটকে তুমি এমন কোনো উপত্যকায় নিয়ে গেলে যেখানে দুইটি মাঠ আছে। মাঠ দুইটির মধ্যে একটি মাঠ সবুজ শ্যামলে ভরপুর। আর অন্য মাঠটি একেবারে শুষ্ক ও ধূসর। এখানে উট চরানো নিয়ে বিষয়টি কি এমন নয় যে, ‘তুমি সবুজ-শ্যামল মাঠে উট চরাও। আর তা আল্লাহর নির্ধারিত তাকদির অনুযায়ীই চরিয়েছ। আর যদি শুষ্ক মাঠে চরাও, তা-ও আল্লাহর তাকদির অনুযায়ী চরিয়েছ।

এ উপমায় হজরত ওমর রা. সেনাপতিকে এ কথাই বলতে চাচ্ছেন যে, হাতে সুযোগ থাকতে ভালো গ্রহণ করার মানে এই নয় যে, আল্লাহর তাকদির থেকে পালিয়ে যাওয়া।’
সে সময় হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা. একটি হাদিস বর্ণনা করেন। সে হাদিসের বর্ণনায় হজরত আবু উবায়দাহর রা. জিজ্ঞাসার পরিপূর্ণ সমাধান ওঠে এসেছে।
হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. রাসুলুল্লাহ সা.’র একটি হাদিস শোনালেন। আর তাহলো- ‘তোমরা যখন কোনো এলাকায় মহামারী প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়েও যেও না।’ (বুখারি)
হজরত ওমর রা.’র মাহামারী আক্রান্ত অঞ্চলে যাওয়ার সমাধান যেভাবে এ হাদিসের মাধ্যমে এসেছিল, এ হাদিসের ওপর যথাযথ আমলই বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
غلام كبريا ২০ মার্চ, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
كلام مرة مضبوط
Total Reply(0)
Mohammad rofiqul islam ৪ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩২ পিএম says : 0
ঐ সময় কি জুমা এবং মসজিদে জামাত বন্ধ ঐ সময় কি মসছজিদে জুমা ও জামাতে সালাত আদয় বন্ধ হয়েছিলো? ইন শা আল্লাহ জানাবেন কেমন? ইন শা আল্লাহ জানাবেন!
Total Reply(0)
কামরুজ্জামান বিন সোলাইমান ৬ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৪৩ পিএম says : 0
মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ২৫ নাম্বার সূরা, ফুরক্বানের-৩৩ নং আয়াতে বলেন, (হে নবী) আপনার নিকট আসে এমন কোন বিষয় নিয়ে যার উদাহারন আমি এই মহাগ্রন্থে উপস্হাপন করিনি।শুধু তাই নয়, তার পূর্ণ ব্যাখ্যাসহ নাযিল করেছি। এই আয়াত পর্যালোচনা করলে ইসলাম যে মহা মানবের মাধ্যেমে পূর্ণতা পেয়েছে তিনি এ সকল বিপর্যয় মুহূর্তগুলোতে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন তাই হতে পারে মুসলিম উম্মার জন্য স্রেয়। ইসলাম যেমন কারোর ব্যক্তির অভিরুচির ফসল নয়,তেমনি মানবীয় কোন খেল তামাশার বিষয়ও নয়। ইসলামী অনুশাষন আল্লাহ এবং তদীয় রসূল (সা;) কতৃক প্রনিত। যেখানে আবেগ আর বাস্তবতার নিরিখেই ইসলামের পরিপূর্ণতা এসেছে। আবেগ দিয়ে ইসলাম চলেনা বরং ইসলাম দিয়ে আবেগ চলে। যার উদাহারণ র্ব্তমান কোভিড-১৯ যা বক্ষমান আরটিক্যাল। হযরত ওমর (রা:) ও এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন স্বয়ং সাহাবীগণের উপস্হিতিতেই কোরআন ও হাদীস পর্যালোচনার মাধ্যেমে। সবশেষে, প্রার্থণা জানাচ্ছি প্রতিপালকের নিকট, যিনি দিয়েছেন এ মহামারী। তিনিই যেন ফিরিয়ে নেন। রহমত করেন মানবজাতীর উপর। আমিন
Total Reply(0)
কামরুজ্জামান বিন সোলাইমান ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:১৭ এএম says : 0
মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ২৫ নাম্বার সূরা, ফুরক্বানের-৩৩ নং আয়াতে বলেন, (হে নবী) আপনার নিকট আসে এমন কোন বিষয় নিয়ে যার উদাহারন আমি এই মহাগ্রন্থে উপস্হাপন করিনি।শুধু তাই নয়, তার পূর্ণ ব্যাখ্যাসহ নাযিল করেছি। এই আয়াত পর্যালোচনা করলে ইসলাম যে মহা মানবের মাধ্যেমে পূর্ণতা পেয়েছে তিনি এ সকল বিপর্যয় মুহূর্তগুলোতে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন তাই হতে পারে মুসলিম উম্মার জন্য স্রেয়। ইসলাম যেমন কারোর ব্যক্তির অভিরুচির ফসল নয়,তেমনি মানবীয় কোন খেল তামাশার বিষয়ও নয়। ইসলামী অনুশাষন আল্লাহ এবং তদীয় রসূল (সা;) কতৃক প্রনিত। যেখানে আবেগ আর বাস্তবতার নিরিখেই ইসলামের পরিপূর্ণতা এসেছে। আবেগ দিয়ে ইসলাম চলেনা বরং ইসলাম দিয়ে আবেগ চলে। যার উদাহারণ র্ব্তমান কোভিড-১৯ যা বক্ষমান আরটিক্যাল। হযরত ওমর (রা:) ও এমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন স্বয়ং সাহাবীগণের উপস্হিতিতেই কোরআন ও হাদীস পর্যালোচনার মাধ্যেমে। সবশেষে, প্রার্থণা জানাচ্ছি প্রতিপালকের নিকট, যিনি দিয়েছেন এ মহামারী। তিনিই যেন ফিরিয়ে নেন। রহমত করেন মানবজাতীর উপর। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন