শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ত্রাণের জন্য হাহাকার

সারাদেশে বন্যায় ৩৬ জনের মৃত্যু : স্বাস্থ্য অধিদফতর লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি : খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তিব্র সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষের আর্তনাদ থামছেনা। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। বন্যায় তাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। বন্যার্ত এলাকায় ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। ঘটেছে টিলা ও পাহাড় ধসের ঘটনা। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট বিভাগে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা না থাকায় ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সুনির্দিষ্ট তথ্য এতদিন পাওয়া যায়নি। এসব সচল হওয়ার পরপরই একের পর এক আসছে মৃত্যুর সংবাদ। সরকারি হিসেবমতে ১৭ মে থেকে ২১ জুন পর্যন্ত বন্যায় মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। গতকাল থেকে ধীরগতিতে বাসা-বাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও খাবার পানির তিব্র সঙ্কট। বন্যায় ভেসে গেছে অনেকের ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্রসহ ধান-চাল ও গবাদিপশুর খাবার। পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে খামারের মাছ ও গবাদিপশু।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো বন্যা বিষয়ক এক বিবৃতিতে জানানো হয় সিলেট, ময়মনসিংহ এবং রংপুর বিভাগে ১৭ মে থেকে ২১ জুন পর্যন্ত মোট ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৭ মে থেকে ২১ জুন পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে বলা হয়, মৃত ৩৬ জনের মধ্যে বজ্রপাতে ১২ জন, সাপের কামড়ে একজন, বন্যার পানিতে ডুবে ১৭ জন এবং অন্যান্য কারণে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলাভিত্তিক মারা যাওয়া তালিকার শীর্ষে রয়েছে। সিলেট জেলায় ১০ জন, সুনামগঞ্জে ৫ জন, ময়মনসিংহে ৫ জন, নেত্রকোনায় ৪ জন, জামালপুর ৩ জন, শেরপুরে ৩ জন, মৌলভীবাজারে ৩ জন, কুড়িগ্রামে ২ জন এবং লালমনিরহাটে একজন রয়েছে।

ছাতক (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গত রোববার থেকে ধীরগতিতে বাসা-বাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু হয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বন্যা আর মানুষের কান্না একাকার হয়েছিল। বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে এক পুলিশ সদস্য ও নৌকা ডুবে শিশুসহ দুই উপজেলায় ১৬ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত ১৫ জুন থেকে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। ছাতক-সিলেট, ছাতক-দোয়ারা, দোয়ারায় ভায়া সুনামগঞ্জ, জালালপুর-লামা রসুলগঞ্জ, কৈতক-ভাতগাঁও, ছাতক-আন্ধারীগাঁও-জাউয়াবাজার, গোবিন্দগঞ্জ-বসন্তপুরসহ সবকটি সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এ কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে নিতে ছুটাছুটি করতে থাকে স্বজনরা। নৌকায়, সাঁতার কেটে, আবার কেউ কেউ ভেলায় চড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করে। এসময় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় নৌকাই ছিল মানুষের যাতায়াতের এক মাত্র ভরসা। ব্যবধান ছিল ২০ টাকা গাড়ি ভাড়ার পরিবর্তে নৌকা ভাড়া ৫শ’ থেকে একহাজার টাকা। এ সুযোগে নৌকার মালিক-শ্রমিকরা ফুঁলে গেছে। ফুঁলে গেছে অসাধু কিছু মুদি দোকানিরাও। তারা ৫ টাকার মোমবাতি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের কাছে বিক্রি করেছে ২০ টাকায়। শুকনো খাবারের মূল্য নিয়েছে দ্বিগুণ।

এদিকে, ছাতক-থেকে গোবিন্দগঞ্জে যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে খালেদ আহমদ এবং কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও গ্রামের তমাল আহমদ নামের এক প্রতিবন্ধি যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বাড়ি থেকে পরিবারের সাথে জাউয়াবাজার ডিগ্রি কলেজে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার পথে নৌকা ডুবে ৬ বছরের এক কন্যা শিশু নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের ২দিন পর শিশুর লাশ হাওরে ভেসে উঠে। এছাড়া দোয়ারাবাজার উপজেলায় গত ১৪ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত নৌকাডুবিসহ বিভিন্ন দূর্ঘটনায় অন্তত ১৩জন লোক মারা গেছে। এদের মধ্যে স্কুল পড়ুয়া দুই ভাই-বোনসহ এসএমপির পুলিশ কনস্টেবলও একজন রয়েছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার ইমাম উদ্দিন (৬৫) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখানের বাতাসের সাথে চারদিকে লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। নিখোঁজ আছেন কতজন তার কোন হিসেব মিলছেনা। ১৬ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন কাটিয়েছিলেন ছাতক-দোয়ারার মানুষ। ছিলনা মোবাইল নেটওয়ার্ক। অপরদিকে দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি রয়েছেন। বিভিন্ন দ্বিতল ভবনে ছাদে ছামিয়ানা টানিয়ে বসবাস করছেন মানুষ। হাট-বাজারের কোন দ্বিতল ভবন খালী নেই। সব ভবনেই মানুষ। কৈতক ২০ শয্যা হাসপাতাল, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর হাসপাতালে এখনও রয়েছে পানি।

নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি গতকাল মঙ্গলবারও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে নীলফামারী জেলার ২টি উপজেলার প্রায় ৪ হাজার পরিবার এখনও পানি বন্দি রয়েছে। নীলফামারীর ডালিয়া পাউবোর বন্যা পুর্বাভাস সর্তকীকরণ কেন্দ্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ও বিকেল ৩টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি । এদিকে পানির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। নীলফামারী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াছির আরেফীন জানান, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এছাড়া বন্যা দুর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে।

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভারি বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে সৃষ্ট বন্যায় নাসিরনগরের মেঘনা ও তিতাসসহ বেশ কিছু নদীর পানি ফুঁসে উঠেছে। মাছচাষিরা বলছেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই বন্যার পানি সব পুকুরের মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে প্রায় প্রায় ৭০০ বেশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি টাকার চেয়েও বেশি হবে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট পুকুরের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এর মধ্যে সোমবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক পুুকুরের মাছ ভেসে গেছে। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ছয় কোটি টাকা।

ইতোমধ্যে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে ৫০টি, চাপরতলা ৯০টি, ধরমন্ডলে ১২০টি, গোকর্ণ ইউনিয়নের ২০টি, কুন্ডা ইউনিয়নে ৪০টি, ভলাকুট ইউনিয়নের ৯০টি, ফান্দাউকে ৩০টি, নাসিরনগরে ১২০টি, চাতলপাড়ে ৩০টি ও বুড়িশ্বরে ১২০টি পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরে বন্যা ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানির প্রবল স্রোতে উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের চাঁনপাড়া ও গোর্কণ ইউনিয়নের কুকুরিয়া খালের উপর নির্মিত দুটি ব্রীজ ভেঙ্গে পড়ে গেছে। সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক গোর্কণ ইউনিয়নের কুকুরিয়া ব্রীজটি পরিদর্শন করেছেন। বন্যার কারণে উপজেলার ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া জানান, উপজেলায় প্রাথমিকের ১২৬টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টির চারপাশে পানি ও কিছু বিদ্যালয়ের ভিতরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বন্যার কারণে নাসিরনগর সদর,ভলাকুট ও ফন্দাউক ইউনিয়নের তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক পানি বন্দি হয়ে গেছে। প্রায় ৩০ কিলোমিটার পাকা-আধপাকা সড়ক তলিয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জনপদ। এরই মধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে উপজেলা সদরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। সব মিলিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।

অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে নাসিরনগরে মেঘনা, ধলেশ্বরী ও লঙ্গনের পানি বাড়ছে। এক সপ্তাহে মেঘনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে পাঁচ ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছে। এতে উপজেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আমনের ফসলি জমি, ১ হাজার পাট খেত ও মৌসুমি শাক-সবজি পানির নীচে তলিয়ে গেছে। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে গোখাদ্য, বিশুদ্ধ পানি আর শুকনো খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলায় প্রতি মুহূর্তেই পানি বাড়ার সাথে সাথে বাড়িঘর-রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত বন্যা দুর্গতের জন্য কোন ধরণের সহায়তাসহ শুকনো খাবার কিংবা ত্রাণ দেওয়ার বিষয়ে কোন আশ্বাস দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বন্যা দুর্গতরা
উপজেলার বুড়িশ্বর, গোয়ালনগর, ধরমন্ডল, গোকর্ণ, ভলাকুট, সদর ও চাপড়তলা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ওই সব ইউনিয়নের নিচু এলাকার প্রায় ৮০ ভাগ বসতভিটায় পানি ঢুকে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। কিছু কিছু এলাকায় বাজারে পানি আসায় বন্ধ রয়েছে দোকানঘর। এরই মধ্যে উপজেলার বেশ কয়েকটি বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক মানুষ। বুড়িশ্বর ইউনিয়নের শ্রীঘর এসএসডিপি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। তাদের অভিযোগ, এই পর্যন্ত সরকারিভাবে তেমন কোন সহায়তা আসেনি।
নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের বেরুইন গ্রামের সড়কে পানি উঠে যাওয়ার কারণে চলাচলসহ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দশ গ্রামের জনগণের।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় টাঙ্গাইলে যমুনাসহ তিন নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা, বাসাইল, নাগরপুর, কালিহাতী, ভূঞাপুর, গোপালপুরের চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলের দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভূঞাপুরের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে এসব এলাকার ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এসব গ্রামের বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। অপরদিকে জেলায় তিন হাজার হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কৃষি বিভাগ জানায়, জেলার পাঁচটি উপজেলায় আউশ, পাট, সবজি, তিল, রোপা আমনের প্রায় ৩ হাজার হেক্টর ফসলী জমি নিমজ্জিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, জেলার ভূঞাপুর, কালিহাতী, সদর, বাসাইল এবং নাগরপুর উপজেলার প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। যদি এক সপ্তাহের মধ্যে পানি নেমে যায় তাহলে আংশিক ক্ষতি হবে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা, নিকরাইল ও অর্জুনা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভাঙনকবলিত মানুষ। এদিকে উপজেলার গাবসারাসহ নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে চরাঞ্চলের অসংখ্য পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে গোবিন্দাসীর যমুনা ভেড়িবাঁধ (কালা সড়কে) পলি কাগজের ছাউনি তৈরি করে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা রাস্তাগুলো ভেঙে পানির তীব্র স্রোতে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অপরদিকে চরাঞ্চলে গবাদিপশু নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে বানভাসিরা। বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান। ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ। তলিয়ে যাচ্ছে পাট, আউশ ধানসহ বিভিন্ন ফসল।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কলাপাড়ায় উজানের ঢলে স্বাভাবিকের চেয়ে নদ-নদীর পানির উচ্চতা ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে লালুয়া ইউনিয়নের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১২ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে কয়েকশো হেক্টর ফসলী জমি। ভেসে গেছে বেশ কিছু ঘের ও পুকুরের মাছ। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। তাই ভাঙা বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ কিংবা মেরামতের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, এক সপ্তাহ ধরে স্বাভাবিকেরে চেয়ে আন্ধারমানিক, তেতুলিয়া ও রাবনাবাদ নদীর পানি ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই-তিনদফা জোয়ারে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে লালুয়া ইউনিয়নের চান্দুপাড়া, চর চান্দুপাড়া, পশরবুনিয়া, মুন্সিপাড়া, গাজীর খাল, মঞ্জুপাড়া, হাসনাপাড়া, চারিপাড়া, চৌধুরীপাড়া ও বানাতীপাড়া গ্রাম প্লাাবিত হয়েছে। অনেকস্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, মূলতঃ ভারতের পাহাড়ী ঢল এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানির উচ্চতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বৃষ্টি কমলে পানিও কিছু কমবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন