শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

মিসরে সামরিক সরকারের নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত

ব্রাদারহুডের সাথে সমঝোতার চেষ্টা সিসি’র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিসরের সামরিক সরকারের নীতিতে কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলের দৃষ্টি কেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মূল্য সংযোজন কর পুনর্র্নির্ধারণ। সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক মুদ্রা ছাপানো এবং জ্বালানি তেলের ভর্তুকি দেয়া। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুদ- স্থগিতের বিষয়টি। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে একটি মামলায় দেশটির আদালত এ রায় দেন। আরব বসন্তের ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে গণবিপ্লবের পর মিসরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্যতম নেতা ড. মোহাম্মদ মুরসি। কিন্তু এর মাত্র এক বছর পর পশ্চিমা বিশ্বের প্ররোচনায় সে দেশের একটি গ্রুপ ক্ষমতা দখলের জন্য সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানায়। এরপর থেকেই মিসরের সামাজিক-রাজনৈতিক অঙ্গনের দৃশ্য অব্যাহতভাবে পাল্টাতে থাকে। ২০১৬ সালে সেনাপ্রধান আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসির নেতৃত্বে অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। প্রেসিডেন্ট মুরসিসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের তাৎক্ষণিক আটক করা হয়। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে দেশটির প্রাচীন এ দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এখন পর্যন্ত তাদের প্রায় এক হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং বিনা বিচারে জেলে পুরে রাখা হয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। জেলে তাদের নির্যাতনের অভিযোগও করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এ মাসেই ব্রাদারহুডের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা আহমদ বেলতাগির স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, তার স্বামীকে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হচ্ছে। শাসক সিসি যতদিন ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন, ঠিক তত দিনই প্রেসিডেন্ট মুরসি এবং তার সহকর্মীরা আটক রয়েছেন। হত্যা ও গোয়েন্দাগিরিসহ বিভিন্ন ছোট-বড় অভিযোগে মামলা দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে কয়েকজন নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ২০ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। তবে গত বছর তার ও অন্যান্য ব্রাদারহুড নেতার বিরুদ্ধে দেয়া মৃত্যুদ- বাতিল করেন হাইকোর্ট। একই মামলায় আরো কয়েক নেতার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। তবে মামলাগুলোর পুনরায় আপিলের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কাতারে রাষ্ট্রীয় তথ্য পাচার এবং ফিলিস্তিনের হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর যোগসাজশে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মুরসিকে ৪০ বছরের কারাদ- দেন একটি আদালত। এ দুই মামলার বিরুদ্ধে আপিল করেন প্রেসিডেন্ট মুরসি। পরে হামাসের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদ- রদ করা হয়।
ড. মুরসি ও অন্যান্য নেতার মৃত্যুদ-ের আদেশ দেয়া হলেও সম্ভবত তা কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেবেন না সিসি। কেননা মুসলিম ব্রাদারহুডের জনপ্রিয়তা মিসরের মাঠপর্যায়ের রাজনৈতিক দৃশ্যে এখনো যেকোনো ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। এর একটি উদাহরণ হলো, গত জুন মাসে সিসি লোহিত সাগরের দু’টি দ্বীপ সৌদি আরবের কাছে ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এ চুক্তির বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষকে সাথে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে ব্রাদারহুড। এ সময়ও প্রতিবাদকারীদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালানো হয়, শত শত মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবে এ মামলায় প্রায় অর্ধশত প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে দ-াদেশ বাতিল করা হয়েছে। এ দিকে সেনাবাহিনীর হাতে শত শত লোক নিহত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না সিসি। উচ্চ আদালত প্রেসিডেন্ট মুরসির মৃত্যুদ- বাতিল করলেও জেল থেকে তার মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে উচ্চ আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মামলার রায়ের পরিবর্তনের ফলে কেউ কেউ মনে করছেন, ব্রাদারহুডের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করছেন সিসি। ইকোনমিস্ট।   

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন