কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক হাসিবুর রহমান ওরফে রুবেল হত্যার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন কুষ্টিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকেরা। আজ শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকেরা হাসিবুর হত্যার ঘটনাটি প্রশাসনের ব্যর্থতা উল্লেখ করে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলমের প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দেন।
এদিকে আজ বেলা ১১টায় পৌর কবরস্থানে জানাজা শেষে হাসিবুরের লাশ দাফন করা হয়। জানাজায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান, মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলুসহ সর্বস্তরের সাংবাদিকেরা অংশ নেন।
দাফন শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসিবুর হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে কবরস্থান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সাংবাদিকেরা। মিছিলটি কলেজ মোড় হয়ে র্যাবগলি দিয়ে মজমপুর ট্রাফিক কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে তাঁরা কুষ্টিয়া–ঈশ্বরদী ও কুষ্টিয়া–ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। অবরোধে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, এডিটরস ফোরাম, টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও ক্যামেরা পার্সনদের সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কোনো ঈদ নেই, কোনো আনন্দ নেই। হাসিবুর হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা না হলে কুষ্টিয়া অচল করে দেওয়া হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনীদের না ধরতে পারলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু বলেন, প্রশাসনের গাফিলতির কারণে একজন মেধাবী উদীয়মান সাংবাদিককে হারাতে হলো। সমাবেশে সাংবাদিক নেতা মজিবুল শেখ, সোহেল রানা, হাসান আলী, শরীফ বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশের একপর্যায়ে সাংবাদিকেরা ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলমের প্রত্যাহার দাবি করেন।
অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে অন্তত এক কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি সাংবাদিকদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এ সময় সাংবাদিকদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হওয়ার পর থেকে ব্যাপক কাজ করেছে পুলিশ। অনেক দূর এগিয়েছে। যেকোনো সময় জড়িত ব্যক্তিদের ধরা হবে।
গত রোববার রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে হাসিবুর পত্রিকা অফিসে ছিলেন। তখন মুঠোফোনে একটি কল পেয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তাঁর মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তাঁর পরিবার। এর চার দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় নির্মাণাধীন গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচে গড়াই নদ থেকে হাসিবুরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
সাংবাদিক হাসিবুর রহমানের লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে খুনিদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জন্য প্রশাসনকে সময় বেঁধে দিয়েছেন সাংবাদিকেরা। এ ঘটনায় তাঁর পরিবার থানায় মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হাসিবুর কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি পাশাপাশি ঠিকাদারিও করতেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন