শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন : কিয়াফা: এ বিদ্যায় বংশীয় পরিচয় জানা যায় কি?

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

উত্তর : কিয়াফা বলা হয় পায়ের ছাপ দেখে কিংবা শরীরের অঙ্গ-পতঙ্গ দেখে বংশীয় সম্পর্ক বলে দেয়া। আরব দেশে প্রাচীনকালে ‘কিয়াফা, একটি স্বীকৃত বিষয় ছিল। তখনকার সময়ে সবাই কিয়াফাবিদদের কথা খুব গুরুত্ব দিয়ে শুনতো ও বিশ^াস করতো। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রফুল্লচিত্তে গৃহে প্রবেশ করে বলতে লাগলেন, ‘হে আয়েশা! তুমি কি দেখনি, মুজাযযিয আল-মুদলিজী আমার ঘরে প্রবেশ করে উসামা ও যায়েদকে একটি চাদর মুড়ি দিয়ে তাদের মাথা ঢাকা ও পা বের করা অবস্থায় দেখতে পেল। সে বললো, এই পাগুলোর কতক অপর কতক থেকে। সহীহ্ বুখারী, হাদীস ২৩৪৯। একবারের ঘটনা। যায়েদ ইবনে হারেসা। যিনি নবীজির একজন সৌভাগ্যবান সাহাবী। তার পুত্র উসামা ইবনে যায়েদ। নবীজি বাপ-বেটা দু’জনকেই খুব ভালোবাসতেন। ওই সময় যায়েদ রা. কৃতদাস ছিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আযাদ করে দেন। যায়েদ এখন মুক্ত-স্বাধীন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিজ সন্তানের মতো আদর-সোহাগ দিতেন। আর তার পুত্র উসামাকে ভালোবাসতেন দৌহিত্র হাসন-হুসাইনের মতো। তারাও একটু সুযোগ পেলেই নবীজির কাছে ছুটে আসতো। যায়েদ রা. ছিলেন ফর্সা। তার ছেলে উসামা কৃষ্ণবর্ণের। পিতা-পুত্রের দেহের বর্ণের ভিন্নতার কারনে দুষ্টু কাফিররা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতো। কটু কথা বলতো। ‘তোমরা দু’জন পিতা-পুত্র নও’ এই কথা বলে বেড়াতো। যায়েদ রা. নীরব মনে সহ্য করতেন। তাঁর অন্তরে তখন প্রবেশ করেছিল ইসলামের দ্যুতি ও ঈমানের ফুলকি। তিনি ভালো করেই জানতেন, দুর্ভাগা কাফিররা পড়ে আছে জাহালাতের অন্ধকারকূপে। আমার ইসলাম গ্রহণÑএটাই তাদের বিদ্বেষের একমাত্র কারণ। কাফিরদের এই মিথ্যা অপবাদের কথা নবীজি শুনতে পেয়ে খুব কষ্ট পেতেন। ব্যাথিত হতেন। একদিনের কথা, নবীজি খুব প্রফুল্লচিত্তে হুযরায় প্রবেশ করলেন। আলো ঝলমল চেহারা থেকে নূরের জ্যোতি ঠিকরে পড়ছে। আয়েশা রা. এর কাছে গিয়ে বললেন, জান আয়েশা! আজ কী হয়েছে। যায়েদ ও উসামা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে ছিল। শুধু তাদের দু’জোড়া পা চাদরের বাহিরে দেখা যাচ্ছিল। এমন সময় মিদলাজ গোত্রের মুজাযযিয নামক ব্যক্তি তাদের পা দেখে বলল, এরা দু’জন পিতা-পুত্র। এ ঘটনায় রাসূল সা. অত্যন্ত খুশি হন এবং প্রিয়তামা আয়েশা রা. এর কাছে এই কথা আনন্দচিত্তে প্রকাশ করেন। কারণ ওই সময় আরবের কিছুসংখ্যক গোত্রের লোক, ‘কিয়াফা’ বিদ্যায় পারদর্শী ছিলো। যেহেতু একজন কিয়াফাবিদ যায়েদ ও উসামার পা দেখে বলে দিয়েছে যে, এরা দু’জন পিতা-পুত্র। তাই এখন কাফিরদের আর কটুক্তি করার সুযোগ থাকলো না। দু’জন নিরীহ মুমিন দুষ্ট কাফিরদের অত্যাচার থেকে বেঁচে গেলেন, এই দেখে নবীজির কোমল হৃদয় আনন্দে ভরে গিয়েছিল। চেহারায় মুচকি হাসর রেখা ফুটে উঠলো। সাহাবাদের প্রতি এই ছিল নবীজির দরদ-ভালোবাসা।

উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ জিয়াউল হক, খতিব মদিনা জামে মসজিদ শ্রীরামপুর, রায়পুরা, নরসিংদী। মিল্লা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন