বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

ক্যাম্পাস ও আমাদের তারুণ্য

মো. ওয়াহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মানুষের কর্মব্যস্ত জীবনে একমাত্র মজাদার অবসর আড্ডা। কর্মক্ষেত্র আর পরিবেশ অনুযায়ী একেকজনের আড্ডা একেক জায়গায় হয়ে থাকে। কেউবা অফিস পাড়ায়, কেউবা চায়ের দোকানে, কেউবা কলেজ বিশ্বদ্যিালয়ের ক্যাম্পাসে। কমবেশি সব বাঙালিই আড্ডা ভালোবাসেন। ছাত্রজীবনে আড্ডাটা একটু বেশি আনন্দের। আর সেই আড্ডা যদি হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তা হলে তো কোন কথাই নেই চলবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এক ধরনের মিনি রাষ্ট্র বলা চলে। রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, সামাজিক কর্মকা-, প্রেম-ভালোবাসাসহ প্রায় সব কিছুরই চর্চা হয় এখানে।
আড্ডা-বন্ধুত্ব-গান-পড়াশোনা এই নিয়ে মেতে আছে বিদ্রোহের তূর্যবাদক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যে প্রাণের এক যুগোপযোগী ক্যাম্পাস জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসটি যেন বন্ধুত্ব, আড্ডা, শিল্প, সাহিত্য ও ভালোবাসার ছোঁয়ায় ঘেরা। কখনো গানে গানে ছড়িয়ে পড়ে তারুণ্যের উন্মাদনা, কখনো ছোটখাটো খেলায় মেতে ওঠে তারুণ্য ভরা সবুজ প্রাণ।
ক্লাসসহ নানা ব্যস্ত সময় গড়িয়ে পড়ন্ত বিকালে কিংবা ক্লাসের ফাঁকে ক্যাম্পাসে ফুটে উঠে এক দারুণ প্রতিচ্ছবি। শিক্ষার্থীদের আড্ডা পরিণত হয় তারুণ্যের এক উচ্ছ্বাসী মিলনমেলায়। ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধানে নব-নির্মিত জয়বাংলা ভাস্কর্য্য চত্বর, বটতলা, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, চুরুলিয়া মঞ্চ,শব্দ মঙ্গল, গাহি সাম্যের গান মুক্ত মঞ্চ, পূবের হাট, ক্যাফে চক্রবাক, শেওরাতলা, চারু দ্বীপ, শহিদ মিনার চত্বর, আবেগের মোড়, জ্ঞানের গলি, আর নতুন রাস্তায় পাশে সবুজ ঘাসে বিকেল হলেই দেখা যা প্রেমিক-প্রেমিকার জুটি। গল্প, গান, বই, ল্যাপটপ, অ্যাসাইনমেন্ট আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে ‘খোরাকি’ রেস্তোরাঁর কফির কাপ নিয়ে আড্ডা, হাতে হাত রেখে বন্ধুত্বের পরম উষ্ণতায় মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে পড়ে চাঁদের হাঁটে।
বিশ্ববিদ্যালয় কেবল বড় বড় ডিগ্রি অর্জন আর ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, মিড, থিসিস আর পরীক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকবে, এই ধারণা মানতে নারাজ তারুণ্যের মিছিল করা এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে আড্ডা, গান, বিতর্ক, নাচ, খেলা, সমসাময়িক বিষয়ের আলাপ-আলোচনা, মত ও যুক্তির মাতামাতি। বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে থাকবে সাংস্কৃতিক বলয়। এর সবই আছে এই ক্যাম্পাসে। আর এসবের জন্যই দিনকে দিন সবার নজর কেড়েছে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।
হৃদয়, ইভান, মৌ, হাসনাত, ওয়াহিদরা আড্ডায় মগ্ন হয়ে সবসময় যে কেবল হাসি-আনন্দের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে, তা কিন্তু নয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও আলোচনা করে তারা। যেমন আজকের আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল ‘বিশ্ব ফটোগ্রাফি’ বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কিছু ফটোগ্রাফারদের ফটোগ্রাফি নিয়ে চলেছে তাদের আড্ডা। এভাবে তাদের মতো আড্ডা পাগল অন্যান্য তরুণেরাও জমিয়ে আড্ডা দিতে পারে পড়াশুনার ফাঁকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে, খেলার মাঠে চলছে এখনো উন্নয়ন কর্মকা-। তবু থেমে নেই খেলা প্রেমিদের ছোটাছুটি। সেখানেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগীয় খেলাসহ অন্যান্য খেলা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে থেকে তিন কিলোমিটার ভিতরে নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত নামাপাড়ার বটতলায় ৪২ একর জমিতে ২০০৬ সালের ৯ মে ৪টি বিভাগ নিয়ে ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আসতে হয়েছে আজকের এই দৃষ্টি নন্দিত ক্যাম্পাসটিকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরাতন ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক বলয় হিসাবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। তারই প্রেক্ষিতে প্রতিটি জাতীয় উৎসব, কবি সাহিত্যিকদের পদচারণা ও দেশীয় সাংস্কৃতিক কর্মকা- জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিকো আজাদ, ইবনুল হায়দার রাকিব, তানিম, রাইসা বলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের আড্ডার মাধ্যমে আমরা নিজেদের জ্ঞান ভা-ার কে সৃষ্টিশীল, সৃজনশীল ও তথ্য সমৃদ্ধশালী হিসেবে তৈরি করতে পারি। পড়াশুনার পাশাপাশি মনের বিস্তর পরিধি কে আরও বড় পরিসরে বিস্তৃত করতে আড্ডার মাধ্যমে পড়াশোনা, সাংস্কৃতিক চর্চা, আলোচনা, যুক্তি ও বিতর্কের গুরুত্ব অপরিহার্য।
ছবি : হৃদয়

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন