সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু দেশে এখনোই নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিশেষ করে কূটনৈতিক পাড়ায় তৎপরতা বেশি। এবার রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়েও ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। সরকারের মন্ত্রী, মাঠের বিরোধী দল বিএনপি, নির্বাচন কমিশনসহ (ইসি) সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ এবং নির্বাচন ইস্যুতে ধারাবাহিক সংলাপ করছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন মিশনের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারগণ। গত ২১ জুলাই প্রভাবশালী দু’টি দূতাবাসে বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে। একদিকে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘনঘন বৈঠক করছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে বিদেশি কূটনীতিকদের নড়াচড়ায় বিরক্ত হয়েই সতর্ক বক্তব্য রাখছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। এর বাইরেও পর্দার অন্তরালে আগামী নির্বাচন ইস্যুতে নানামুখী তৎপরতা চলছে বলে জানা গেছে। কূটনীতিকদের তৎপরতার সবকিছু সরকারের নজরে থাকলেও এটা তাদের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে গেছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ না করায় নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিদেশিদের সহায়তা চাওয়ার সংস্কৃতির চালু হয়েছে। যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা বিদেশিদের তৎপরতার বিরোধিতা করেন; আর যারা ক্ষমতার বাইরে থাকেন তারা বিদেশিদের সহায়তায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা চান। এটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। তবে কূটনীতিকদের এই তৎপরতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত রয়েছে।
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তুলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার লক্ষ্যে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা নানাভাবে চেষ্টা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দেন, সেখানে গিয়ে বৈঠক করে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার অনুরোধ করেন। সরকার ওয়াশিংটনে লবিস্ট নিয়োগের ঘোষণা দেন। আবার গত কয়েক মাসের চিত্রে দেখা যায় নির্বাচনের অনেক দিন বাকি থাকলেও বিভিন্ন বিদেশি দূতরা নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারের নানা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করে নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনা করেন। রাজনীতিকদের সৌজন্যে ডিনারেরও আয়োজন করতে দেখা যায় প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের। এমনকি নির্বাচন কমিশনের বৈঠক করে এবং নিজেদের নিজস্ব ওয়েবসাইড ও বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে সংলাপ করে। কিন্তু বিএনপিসহ কয়েকটি দল সে সংলাপ বর্জন করে। এ অবস্থায় গত ৮ জুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২৬ জুন সাক্ষাৎ করেন অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুর। এরপর গত ৩ জুলাই একসঙ্গে ১৪টি দেশের রাষ্ট্রদূত ইসির সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাইকমিশনের নেতৃত্বে অরগানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) ৩৮টি দেশের মধ্যে সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ডেনমার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, তুরস্ক এবং জাপানের রাষ্ট্রদূত ইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইসির সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের এসব ধারাবাহিক বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। তারা আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায় বলে জানিয়েছে। এজন্য তারা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা দেওয়ারও আশ্বাস দেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি কয়েক দফায় জানান তারা আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে দেখতে চাচ্ছেন। এর মধ্যে ৭ জুন ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আগামী বছরের শেষে নির্বাচন হওয়ার কথা। আমি আশা করব, গতবারের তুলনায় এবার ভালো, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার পদক্ষেপ নেবে।’
গত ১৩ জুলাই ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এবং আগের দিন ১২ জুলাই জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক জিন লুইস বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে গত ১৭ মার্চ জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টারের সাথে বিএনপি নেতাদের সাক্ষাৎ হয়।
জানতে চাইলে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টচার্য বলেন, আমাদের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপ প্রমাণ দেয় দেশের গণতন্ত্র কত নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে এবং আমরা সবাই মিলে আন্দোলন করেছি। তখন আওয়ামী লীগ বিদেশিদের কাছে ধর্না দিয়েছে এবং চিঠি দিয়ে নির্বাচনে বিদেশিদের প্রভাব কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। আমরা এর আপত্তি করেছিলাম; কিন্তু আওয়ামী লীগ শোনেনি। এটা ক্রণিং ব্যাধি হয়ে গেছে। দেশে গণতন্ত্রহীনতা, ফেয়ার নির্বাচন করতে অপারগতা, জনগণের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সম্পর্কহীনতার নজীর সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতার পর ৫১ বছরেও দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। ফলে তত্ত্বাবধায়ক এমনকি সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হয়েছে। পাকিস্তান আমলে ’৭০ সালের নির্বাচন ফেয়ার হয়েছে। অথচ ’৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩৫টি আসন জোর করে দখল করেছে। বঙ্গবন্ধু যে খন্দকার মোস্তাক আহমদকে জোর করে এমপি করলেন সেই মোস্তাক হত্যা করল বঙ্গবন্ধুকে। আমরা আসলে ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়ার অনুসঙ্গ হয়ে গেছি। গণবিচ্ছিন্নতা, গণতন্ত্রহীনতা নির্বাচনকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ব্যাধিকে আক্রান্ত। দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সংসদ কেউ জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি, পারছে না। আর মানবাধিকারের বিষয়টি তো রয়েছেই। পাকিস্তান আমালে সাংবাদিকদের কোমড়ে রশি বাঁধতে পারেনি। অথচ এখন নানান আইনের নামে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব। এমনকি রাজনীতিকদের হাতে দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে বিদেশিরা বাংলাদেশের রাজনীতি নাগ গলাবেÑ সেটাই স্বাভাবিক।
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি যতই বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলুক; এতে কোনও লাভ হবে না। যুক্তরাষ্ট্র যত বড় ক্ষমতাধর দেশই হোক না কেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে তাদের কোনও কিছু করার নেই।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি এখন মাঠে না, তাদের রাজনীতি এখন রাতের বেলা বিভিন্ন দূতাবাসে যাওয়া, আর লাল-নীল রঙিন পানি খাওয়া। বিভিন্ন দূতাবাসে এরা ঘুরে বেড়ায়, পার্টি করে, ঘরের মধ্যে পার্টি করে।’
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ জন এমপি ১৭ থেকে ১৯ জুলাই ঢাকা সফর করেন। তারা বিভিন্নজনের সঙ্গে বৈঠক করে। ১৯ জুলাই চীনের ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের (সংসদ) স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান লি ঝাংসু’র জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর ভার্চুয়াল বৈঠক করেন।
পশ্চিমা কূটনীতিকদের বিএনপির সঙ্গে ঘনঘন বৈঠকের খবর মিডিয়ায় প্রচারের পর ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী ছুটে যান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে। তাদের মধ্যে কি আলোচনা হয়েছে জানা যায়নি। তবে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলি যেদিন বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেদিনই ছুটে যান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের কাছে। এ সময় তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশেই নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে। আমাদের দেশেও নির্বাচন বিতর্কের ঊর্ধ্বে না। যেসব দেশ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্যদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দিচ্ছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাইরের কারোর কথা বলার কথা না। অন্য কোনও দেশের নির্বাচন নিয়ে যেমন আমার মন্তব্য করা দায়িত্ব নয়। তবে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারি।’
বিদেশি কূটনীতিদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বৈঠকের উদ্বেগ প্রকাশ করে ১৮ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনগণের ভোটে নয়, বিএনপি বিদেশি প্রভুদের তুষ্ট করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চায়। বিএনপি সরকার পরিবর্তন চায় অথচ নির্বাচনে আসে না। সরকার পরিবর্তন চাইলে তো নির্বাচনে আসতে হবে। নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।’
বাংলাদেশের নিরপেক্ষ নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক বিরোধ মীমাংসার জন্য প্রথম বিদেশিদের তৎপরতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক আবুল কালাম মনজুর মোরশেদের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক রাজনৈতিক সংকট নিরসনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ছুটে যান। অতঃপর ’৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ঐকমত্যের ভিত্তিকে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি থেকে সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করেন সংসদীয় সরকার প্রবর্তন করা হয়। অতপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে ঢাকায় আসেন কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল এমেকা এনিয়াকুর প্রতিনিধি হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান স্টিফেন। তিনি দীর্ঘ ৩০ দিন বিবাদমান দুইপক্ষের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান।
২০০৫ সালে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে রাজনৈতিক বিরোধ ভয়াবহ রূপ নেয়। বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুইয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল বিদেশি দূতাবাসগুলোতে সিরিজ বৈঠক করেন। জনমত উপেক্ষা করে বিএনপির এককভাবে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের চেষ্টা করেন। সে সময় রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ঢাকায় কর্মরত ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, ভারতের হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন, আমেরিকার রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস, পরবর্তীতে প্রেট্রিসিয়া এ বিউটিনিসসহ অসংখ্য বিদেশি কূটনীতিককে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়। সে সময় ঢাকাস্থ কূটনৈতিক কোরের ডিন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত শাহতা জারাব তো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ মেটানোর অন্যতম ব্যাক্তিতে পরিণত হয়ে উঠেছিলেন। যে কোনো রাজনৈতিক বিরোধ হলেই সবাই ছুটে যেতেন শাহতা জারাবের কাছে।
২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে ঢাকায় আসেন জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তিনি ‘অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত’ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে তার আলোচনায় ব্যর্থ হলে তিনি ফিরে যান।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, এ দেশের নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ নতুন নয়। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আওয়ামী লীগ বেশি দৌড়ঝাঁপ করেছে কূটনীতিক পাড়ায়। এখন কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশন, সরকারের মন্ত্রী এবং বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছে। তারা চায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি ক্ষমতায় আসুক। এ দাবি তো দেশের ১৭ কোটি মানুষের। ২০০৯ সাল থেকে এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে পশ্চিমারা জানতেন। তারা এখন জনগণের প্রতিনিধিকে ক্ষমতায় দেখতে চাচ্ছেন। পশ্চিমারা ছকে চলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এখনো মুরুব্বি মানেন। তারা এখন নিরপেক্ষ নির্বাচন চান এবং সব পক্ষকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে চাচ্ছেন। এটা করতে সময়ের প্রয়োজন তাই তারা দেড় বছর আগেই সে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। মূলত চীনকে সামনে রেখেই যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা চলছে। তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার বদল দেখতে চান। তারা আগে সরকারকে কিছু পরামর্শ দিয়েছিল; তা কাজে লাগেনি। এমনকি দিল্লির চোখে ঢাকাকে দেখতে চেয়েছিল; সেটাতে ভারত ফেল করেছে। মোদীর ভারত এখন নিজেই ভয়াবহ সংকটে। এ জন্য মার্কিনীরা নিজের চোখেই বাংলাদেশ দেখতে চায়। এটা বোঝা গেছে তাদের গত কয়েক মাসের তৎপরতায়। জো বাইডেন গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোর মধ্য দিয়ে বার্তা দিয়েছেন। পরে মানবাধিকার প্রশ্নে র্যাবের ৬ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। এতে বেশ কাজ হয়। জাতিসংঘ বাংলাদেশের কাছে মানবাধিকার বিষয়ক যে তথ্য চেয়েছিল ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে তা জমা দেয়া হয়নি। ফলে আরো একটা ধাক্কা আসতে পারে। এ কারণে মন্ত্রীরা কূটনীতিকদের তৎপরতায় কিছুটা ভীত হয়ে কথাবার্তা বলছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন