শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

শিক্ষকের মর্যাদা নষ্ট হলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে: ড. মশিউর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০২২, ৫:০০ পিএম

জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, কেউ যেন শিক্ষকের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি নষ্ট হবার মতো ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয় কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে। ভবিষ্যতে এরূপ কোনো কাজে কেউ নিজেকে সম্পৃক্ত করলে প্রয়োজনে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় গোটা পরিবারকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলবে। একটি আদর্শনিষ্ঠ সমাজব্যবস্থায় এরূপ অন্যায্য ও রুচিবহির্ভূত কাজ কোনোরূপেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। শনিবার (২৩ জুলাই) বিশ^বিদ্যালয়ের ২৪তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে সিনেট চেয়ারম্যানের অভিভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান। সিনেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সিনেটের চেয়ারম্যান ও ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মশিউর রহমান।

অভিভাষণে ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সত্যিকার অর্থেই এক চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে একই সঙ্গে একথাও সত্য যে, এ কাজটি সুচারুরূপে করা সম্ভব হলে দেশ ও সমাজে প্রকৃত এক পরিবর্তন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট একটি কার্যকর পর্ষদ। যার মাধ্যমে আপনাদের পরামর্শ, সহযোগিতা, দিকনির্দেশনা পাওয়া সম্ভব। নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে কাজ করা আমাদের জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু কতগুলো বিষয় হয়ে উঠে দুঃখজনক এবং অতীব পরিতাপের, যেমনটি সম্প্রতি ঘটেছে নড়াইল, সাভার এবং রাজশাহীর তিনটি কলেজে। আমি অত্যন্ত বেদনা, দু:খ ও ক্ষোভের সঙ্গে আপনাদের সকলকে সাথে নিয়ে এই অভিব্যক্তিই প্রকাশ করতে চাই-রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক আইন এবং আমাদের সমাজের প্রচলিত আদর্শকে লঙ্ঘন করে কেউ যেন শিক্ষকদের মর্যাদা নষ্ট না করে।’

ভিসি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সোনার বাংলায় বিগত ২৫ জুন আমাদের আত্মমর্যাদার ‘পদ্মা সেতু’র শুভ উদ্বোধন করলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সেতু আমাদের অহংকার, ভালোবাসা। এর মধ্যে রয়েছে আস্থা, গভীর দেশপ্রেম, আত্মবিশ^াস আর সততার চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হবার অনন্য দৃষ্টান্ত। সার্কভুক্ত দেশ শ্রীলংকা যখন কোভিড ভয়াবহতার নতুন পৃথিবীতে সংকটে নিমজ্জিত এবং এক অকার্যকরতা ও অনিশ্চয়তার পথে হাঁটছে, বাংলাদেশ তখন আস্থার সেতুর উদ্বোধনসহ নানা মেগা প্রজেক্ট নিয়ে এগিয়ে চলছে। তবু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কৃচ্ছ্র সাধন নিশ্চিত করে সকলকে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগুতে হবে, যেন বাংলাদেশকে অন্য কোনো পক্ষ ব্যর্থতার গ্লানিতে ফেলতে না পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিতভাবে সতর্ক থেকে দেশমাতৃকাকে নিয়ে যেতে হবে এক অনন্য নতুন উচ্চতায়। আমরা মাতৃভূমিকে গড়ে তুলতে চাই-বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত এক নতুন প্রবাহে। মানুষে মানুষে বৈষম্য কমিয়ে এনে এখানে গড়ে উঠুক সমতা প্রতিষ্ঠার এক নতুন সমাজ। প্রয়োজনে গড়ে উঠুক নতুন এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই। আর সে লড়াই হোক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠার। আমাদের আগামী প্রজন্ম হোক সুন্দরের সফলতায় ভরা বিশ^ নাগরিক- যার চিন্তা শক্তিতে ভরপুর থাকবে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মানবিক পৃথিবী গড়ার অভিপ্রায়। পৃথিবীর বঞ্চিত মানুষের মুক্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের আগামী প্রজন্ম হোক মুক্তির দিশারী। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ২৪তম এই সিনেট অধিবেশনে এই হোক আমাদের সম্মিলিত অভিপ্রায়-আত্মশক্তিতে ভরপুর, দেশপ্রেমের গভীর দীক্ষায় উজ্জীবিত আগামী প্রজন্ম গড়ে তুলবো দেশমাতৃকা সুরক্ষায়।’ বিশ^ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য সিনেট সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

সিনেট অধিবেশনে বিশ^বিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার বাজেট বক্তৃতায় বিশ^বিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এই অর্থবছরে ৭৫ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত সম্বলিত রাজস্ব ও উন্নয়নসহ সর্বমোট ৯৭৬ কোটি ১৪ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকার বাজেট পেশ করা হয়। এরমধ্যে পৌনঃপুনিক (রাজস্ব) বাজেট ৪৮৫ কোটি

৮৭ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য ৪৯০ কোটি ২৬ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এছাড়া ২০২১-২০২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও সিনেটে অনুমোদিত হয়।

কোভিড-১৯ এর কারণে গত দুই বছর সিনেট অধিবেশন অনলাইন প্লাটফর্ম জুমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারই সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন- সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, সাবেক চীফ হুইপ ও সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, বাংলাদেশ বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পিএসসির সাবেক সদস্য প্রফেসর ড. শরীফ এনামুল কবির, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য স্থপতি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ^বিদ্যালয় বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূর, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. সাজাহান মিয়া, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. হারুনর রশীদ খানসহ ২২ জন সিনেট সদস্য। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষসহ ৬০ জন সম্মানিত সিনেট সদস্য অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনের শুরুতেই সিনেট সচিব বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গের প্রতি শোক জ্ঞাপনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সিনেট অধিবেশন সঞ্চালনা করেন সিনেট সচিব।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন