বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নতুন অর্থ ব্যবস্থার দিকে হাঁটছে পৃথিবী

পতন ঘটছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বায়নের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ক্রমবর্ধমান পূঁজিবাদ এবং বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা হ্রাসের উদ্যোগ একটি গভীরভাবে সংযুক্ত এবং পরস্পর নির্ভরশীল বিশ্ব অর্থনীতির বিশ^ায়িত অর্থনীতি সৃষ্টি করেছে। যত বেশি পণ্য আরো দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অবিসংবাদিত অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি দেশগুলোর জন্য প্রথমে আশির্বাদ মনে করা হলেও সময়ের সাথে সাথে নেতিবাচক ফল নিয়ে এসেছে।

বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবীর সব দেশের অর্থনীতি পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। ফলে এক জায়গায় সমস্যা দেখা দিলে, বৈশ্বিক ব্যবস্থাতে তার প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্ধিত বিশ্বায়নে বিভিন্ন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সাথে যুক্ত হয়েছে অর্থনৈতিক বিশেষীকরণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে বন উজাড় এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং অন্যান্য ধরনের দূষণ। সেইসাথে রয়েছে কর্মহীনতা ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র চালিত বিশ্বায়নের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং মুক্ত বাণিজ্যের বিপরীতে দেশীয় শিল্পের নিরাপত্তাবাদের উত্থানে সৃষ্ট অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা, বাধাগ্রস্ত অবাধ বাণিজ্য, বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথ প্রবৃদ্ধি, উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা এবং পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে ভোগবাদ বিরোধী মনোভাব তৈরি করেছে। কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধসহ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বিশ্ব অর্থনীতির আরও ফাটল প্রকাশ করেছে। এবং একটি বিকল্প অর্থনৈতিক ধারা ও বিশ^ ব্যবস্থার দিকে ঞাচতে শুরু করেছে দেশগুলো, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে চীন। বিআরইউইজিইএল’র এলিসিয়িা গার্সিয়া বলেন, ‘আমাদের পূজিবাদী মডেলটি রাশিয়ার ও চীনের উত্থানের মুখে ভঙ্গুর প্রতিয়শান হয়েছে।’

মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনবাদী বাণিজ্য পরাশক্তিগুলোর বিপরীতে বিপরীতে চীন ও রাশিয়া অনেক দিন ধরেই আঞ্চলিক রাজনীতি জোরদার করার চেষ্টা করে আসছে। চীনের দ্রুত উত্থান, ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) এর মতো অর্থনৈতিক জোট প্রতিষ্ঠার ফলে মার্কিন শাসনের অধীন বিশ্বায়নের যুগের অবসান হতে পারে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। চীন এখন চীন এশিয়াকেন্দ্রিক একটি মেরু তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ তারই অংশ। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৮০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি কমেছে ২৫ শতাংশ এবং চীনের জিডিপি ১৮ শতাংশ বেড়ে মার্কির জিডিপির কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে চীনের সঙ্গে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও মালয়েশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যাপক হারে বেড়েছে। এসব দেশের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানও। মাইক্রোচিপ, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ফার্মাসিউটিকাল্স এবং খুচরা যন্ত্রাংশের বাণিজ্যে বিশে^ ছেয়ে গেছে চীন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এসব দেশের বাণিজ্য পাল্লা দিয়ে কমে গেছে। চীন এসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগভিত্তিক একটি সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় অঞ্চলভিত্তিক কমপক্ষে তিনটি মেরু সৃষ্টি হবে। এগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনকেন্দ্রিক এশিয়া। যদিও এখানে ভারত মার্কিন মিত্র হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য দেশটিকে ভারসাম্য বজায় রাখতে হচ্ছে। চীন ও রাশিয়ার সাথে তার গভীর বানিজ্য সম্পর্ক রয়েছে।

বাণিজ্য ছাড়াও বিশ্বায়ন মুক্ত ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। সেই জায়গাতেও সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। চীন ও রাশিয়ার সাফল্য দেখে বিভিন্ন দেশে সীমিত গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকারের মূলনীতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এ নতুন ধারায় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে দেওয়া হচ্ছে বৈধতার স্বীকৃতি। ফলে অঞ্চলভেদে বদলে যাচ্ছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা এবং কোনো একক নীতিতে বা একক পক্ষপাতিত্বে দেশগুলো আর তাল মেলাতে চাইছে না। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে বহুদেশ রাশিয়া বিরূপ হওয়া সত্বেও নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে এবং সমঝোতার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সমর্থনে কথা বলেছে। সম্প্রতি রাশিয়া-চীনের গভীর বন্ধুত্ব নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনকে বাদ দিয়ে বা যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে বিশ^ অর্থনীতিকে ভাবার কোনো সুযোগ নেই। বিশ^ অর্থব্যবস্থা যেদিকেই হাঁটুক, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ^ায়নের প্রতি অন্ধ মনোভাব প্রকাশ করছে না দেশগুলো। সূত্র : ডয়েচে ভেলে, ইন্টারনেট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Maruf Tofazzal ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:১৭ এএম says : 0
সরকারের চাপে বাংলাদেশের সব মিডিয়া দেখি এখন মার্কিন বিরোধী নিউজে তৎপর, মার্কিন সম্পর্কে দেশের জনগণের মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করার জন্য এই পদক্ষেপ সেটা বোঝার আর বাকি নেই । মার্কিনিরা আরো অন্তত বিশ বছর নিজেদের প্রভাব-প্রতি ধরে রাখতে পারবে সেই ক্ষমতা তাদের আছে,
Total Reply(0)
Rabbul Islam Khan ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:১৮ এএম says : 0
Very good step, go ahead
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন