সাত মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলপথে ছোট-বড় ১০৫২টি দুর্ঘটনায় ১৭৮ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন এক হাজার ১৭০ জন। এসব প্রাণহানির মধ্যে গতকাল চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়ায় রেলপথে দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনও রয়েছেন।
দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সেভ দ্য রোডের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। শনিবার (৩০ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবেদনে রেলপথের এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই গেটকিপারদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
২৪টি জাতীয় দৈনিক, ১৮টি ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যম, ২২টি নিউজ পোর্টাল এবং সারা দেশে সেভ দ্য রোড-এর বিভিন্ন শাখার স্বেচ্ছাসেবিদের তথ্যর ভিত্তিতে তৈরি করা এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
এতে স্বাক্ষর করেছেন সেভ দ্য রোডের চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, জিয়াউর রহমান জিয়া, শওকত হোসেন এবং ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সহ-সভাপতি আনজুমান আরা শিল্পী।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে- ১ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬টি। এসব দুর্ঘটনার ১৪ জন নিহত এবং ৫২ জন আহত হয়েছেন।
১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১টি। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ১১১ জন, নিহত হয়েছে ২৭ জন। ১ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২২টি। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৮৬ জন, নিহত হয়েছেন ৩১ জন।
১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১১২টি। আহত হয়েছে ১৬৬ জন, নিহত হয়েছে ৪২ জন। মে মাসে আহত ২২১ জন, নিহত হয়েছে ২৩ জন; দুর্ঘটনা ঘটেছে ২১২টি।
জুন মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯৭টি। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ১৭২ জন। নিহত হয়েছেন ১৭ জন। আর জুলাই মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৪২টি। ঈদুল আযহার ঈদযাত্রাসহ বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছে ২৩২ জন, নিহত হয়েছে ২৪ জন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রেলের দুই হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ এক হাজার ৩৬১টি। সে হিসাবে প্রায় ৪৮ শতাংশ অবৈধ। এবং ৩৩টি ক্রসিং কে বা কারা ব্যবহার করছে, তা কেউ জানে না। এছাড়া বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর মধ্যে ৬৩২টিতে গেটকিপার নেই। অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোয় যেমন গেটকিপার নেই, নেই কোনো সুরক্ষা সরঞ্জামও।
এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সেভ দ্য রোডের পক্ষ থেকে সাতটি সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো হলো-
১. অবৈধ ক্রসিংগুলোর সমাধান করা
২. দুর্নীতিবাজ রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া।
৩. সরকারি লেজুড়ভিত্তিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নামে নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম বন্ধ করে রেলকে গণমুখী বাহন হিসেবে প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করা।
৪. যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ রেলওয়েকে বেসরকারি খাত থেকে মুক্ত করে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধায়নে পরিচালনার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৫. সচিব-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবরকম আরাম-আয়েশ বাতিল করে সারা দেশে রেলওয়ের উন্নয়নে নিবেদিত থাকা।
৬. যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো এবং সারা দেশের সব স্থানে কার্যকর সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা।
৭. প্রতি তিন কিলোমিটারে পর্যবেক্ষণের জন্য রেলওয়ে পুলিশের বিশেষ বুথ স্থাপন করা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন