আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
‘বিসমিল্লাহ্’ একটি পবিত্র সূচনা ধ্বনী এবং পবিত্র কুরআনের অংশ। তাই ‘বিসমিল্লাহ্’র কোন বিকল্প ভাষা হতেই পারে না। কেননা, ইসলামের সোনালি যুগে বিধর্মীরা আল্লাহ্র নাম পরিহার করবার জন্য ‘বিসমিল্লাহ্’ পরিহার করতো তাই এখন তা বর্জন মানে ঐ জাহিলিয়্যাতে ফিরে যাওয়ার প্রয়াস কিনা? অন্যদিকে ‘বিসমিল্লাহ্’ উচ্চারণে ‘আল্লাহ’ ‘রহমান’ ‘রাহীম’ তিনটি পবিত্র নাম সন্নিবেশিত। অথচ আল্লাহ্র নাম স¥রণের আকাক্সক্ষায় ব্যবহৃত ‘বিস্মিহী তা’লা’র মধ্যে ‘আল্লাহ্’ শব্দটিও অনুপস্থিত! প্রিয়নবী (সা.) ‘বিসমিল্লাহ্’ নাজিলের পর অন্য কোনো শব্দমালা ব্যবহার করেননি। তাই অবমাননার আশঙ্কায় ‘বিসমিল্লাহ্’ ব্যবহারের আমল ছেড়ে দেওয়া যায় না।
পবিত্র কুরআনে সাবা’র রাণী বিলকিসর সঙ্গে নবী সোলেমানের (আ.) পত্রালাপে ‘বিসমিল্লাহ্’র উল্লেখ রয়েছে। সুরা নাম্লের- ২৯Ñ৩৪ আয়াতের আলোচনায় ‘বিসমিল্লাহ্’র শক্তি ও রাণীর অসহায়ত্ব প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে নবী সোলেমানের (আ.) চিঠি এবং আমাদের নবী, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) চিঠির সূচনায় মহান আল্লাহ্র পবিত্র বাণী ‘বিসমিল্লাহ্’ লেখা প্রমাণ করে যে, চিঠিপত্রের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ্’ লেখা নবীদের আদর্শরীতি তথা সুন্নাত। সত্য কথা হলো সাবার রাণী বিলকিসের কাছে পাঠানো চিঠিতে ‘বিসমিল্লাহ্’ লেখা ছিল, আর রাণী ছিলেন অমুসলিম। মিশরীয় গবেষক ড. হামিদুল্লাহ্র মতে প্রিয়নবী (সা.) যাদের কাছে পত্র পাঠিয়ে ছিলেন তাদের সংখ্যা দু’আড়াই শ’র কম নয়। প্রিয়নবী (সা.) যেসব শাসকের কাছে পত্র দিয়ে ছিলেন তারাও ছিলেন অমুসলিমÑ এ ক্ষেত্রে অবমাননার আশঙ্কা, এমন কি দু’একটি ক্ষেত্রে দুঃখজনক ঘটনাও ঘটে কিন্তু প্রিয়নবীর (সা.) প্রত্যেকটি চিঠির শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ্’ পূর্ণ বাক্যটি পবিত্র কুরআনের ভাষা- আরবিতে লেখা ছিল। যার প্রমাণ এখনো বিশ্বের বিভিন্ন যাদু ঘরে সংরক্ষিত আছে। ‘বিসমিল্লাহ্’র প্রবল শক্তি ও বরকত রয়েছে। তাই মহান আল্লাহ্র বাণী ও বিধানের পবিত্রতা রক্ষা আমাদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা ও সচেতনতার বিষয়। কিন্তু একটি আশঙ্কার জন্য একটি আমল ছেড়ে দেওয়া যায় কি? অথচ বলা ও লেখায় ‘বিসমিল্লাহ্’র ব্যবহার হলো পবিত্র কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা। ‘বিসমিল্লাহ্’র কোন বিকল্প ভাষা হতে পারে না। অন্য কিছু লেখা বা বলায় আল্লাহ্র নাম স্মরণের তৃপ্তি ও বরকত লাভের একদম সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে আবহমান কাল থেকে প্রচলিত ব্যবস্থা ত্যাগ করা ও বদলে দেবার চেষ্টার মধ্যে কল্যাণ কতটুকু তাও গভীর ভাবে চিন্তা করবার বিষয় নয় কি? অন্যদিকে বলা হয় ‘...পূর্ববর্তী সব আসমানি কিতাবের সার নির্যাস রয়েছে আল কুরআনে। কুরআনের সার নির্যাস রয়েছে সূরা ফাতেহায়। সূরা ফাতেহার সার নির্যাস রয়েছে বিসমিল্লাহ্র মধ্যে... এরই সঙ্গে বিসমিল্লাহ্র ‘বা’ অক্ষরের মাহাত্ম অপরিসীম’ (আল মাজালেসুস্ সুন্নিয়া)। ইসলাম সব সময় সহজ, স্বাভাবিক ও সত্যের পথে সামগ্রিক ঐক্যের চেতনা দান করে। কিন্তু বর্তমানে ইসলামের কিছু বিষয়ে নতুন ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষকে অবাক করে। যেমন, (ক) কেউ কেউ ইদানীং চিঠিপত্রের সূচনায় ‘আসসালামু আলাইকুমে’র স্থলে লেখেন ‘মা’স্সালামাহ্’। (খ) তারাবিহ্ নামাজের রাকাআ’ত সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক (গ) নামাজের পরে মুনাজাত করা বা না করা (ঘ) মিলাদ ও দরূদ শরিফ পড়া না পড়া (ঙ) একই দিনে ঈদ বা রোজার সম্ভাব্যতা প্রচলন (চ) কেউ বা বলেন, মাযহাবের প্রয়োজন কী? ইত্যাদি। কেউ কেউ সূত্র ও প্রমাণ হিসেবে মক্কা-মদিনা ও আরবদেশের উদাহরণ টানেন। এমন ক্ষেত্রে দাঁড়ালো কীÑ তারাবিহ্, মুনাজাত, মিলাদ, মাযহাব, ‘বিসমিল্লাহ্’ সব কিছু প্রশ্নবিদ্ধ! এটাই যদি হয় তবে ইসলাম ও মুসলমানিত্ব কেমন রূপ পাবে?
মাজার, ফতোয়া, জিহাদ ইত্যাদি আজ ব্যবহার দোষে বিতর্কিত পরিভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সত্য কথা হলো জঙ্গিবাদ বলতে প্রচলিত অর্থে যা বোঝায় ইসলামের পবিত্র পরিভাষা জিহাদ বলতে তা বোঝায় না। জাতীয় জীবনে বহুল আলোচিত ‘ফতোয়াবাজী’ এবং ইসলামী অনুশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ‘ফতোয়া’ এক বিষয় নয়। আর মাজার ও উরশ- জিয়ারত ইত্যাদি নিয়ে যত কটাক্ষ তার জবাবে বলা যায় ঐ সব মাজারে যারা শুয়ে আছেন তাঁরাই তো আমাদের জন্য ইসলাম নিয়ে এদেশে এসে ছিলেন। যদি তাঁদের আদর্শ চর্চা করা হতো তবে বিতর্কের অবসান হতো।
বস্তুত ইসলামের সব তৎপরতার মূল শক্তি হলো পরকালমুখীতা কিন্তু বর্তমানে চলছে ইবাদত ও আমল বিমুখীতার প্রতিযোগিতা। বর্তমানে ধর্মের নামে নতুনত্বের চর্চা একটু বেশিই হচ্ছে। অথচ হটকারীতা ও অতি ভক্তিবাদের স্থলে সত্য, সহজ, স্বাভাবিকতার মধ্যম পন্থাই হলো প্রকৃত ইসলাম। প্রিয়নবী (সা.) বলেন “মধ্যম পন্থাই সর্বোত্তম পন্থা”। তাই সব বিভ্রান্তি ও বিতর্কের স্থলে ঐক্য, সম্প্রীতি, শ্রদ্ধা, স্বীকৃতির আদর্শে আল্লাহ্মুখী চেতনায় সব ধরনের ইবাদতবিমুখতা পরিহারই হলো ইসলাম ও মুসলমানের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কর্তব্য। মহান আল্লাহ্ বলেন, “আল্লাহ্কে ভয় করো, যে রূপ ভয় করা উচিত এবং প্রকৃত মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না, আর আল্লাহ্র (বিধানের) রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে যেও না”
(আল-ইমরান : ১০২)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন