জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করেন লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ। ইতোমধ্যেই বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। নির্ধারিত কোন সিস্টেমই যেন কার্যকর নেই। রাজধানীর সব এলাকায়ই অনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতেই বাসা ভাড়া আদায় করছেন মালিকরা। বাসা ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়তই যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় অসহায় ভাড়াটিয়াদের।
মাস শেষে তাদের দেখা যায় বেতনের বেশিরভাগ টাকায় চলে যায় বাসা ভাড়া বাবদ। বাকী টাকা দিয়ে সংসার চালাতে পুরোমাস কষ্টেই কাটাতে হয়। আর বছরের শুরুটা যেন ভাড়াটিয়াদের জন্য বড় আতঙ্কের। বেশিরভাগ বাড়ির মালিক নতুন বছরে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ভাড়ার বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দেন ভাড়াটিয়াদের কাঁধে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আবার যেন নতুন করে যোগ হয়েছে আরেক আতঙ্ক। জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে বাসা ভাড়ায়। কিন্তু জীবনযাপনের অংশ হিসেবে বাসস্থানের অর্থাৎ বাড়ি ভাড়া নিয়ে মানসিকভাবে প্রচণ্ড চাপ আর যন্ত্রণার মধ্যে থাকতে হয় ভাড়াটিয়াদের।
নগরীর কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাসা ভাড়া তো বাড়বেই, পাশাপাশি সব খরচ বৃদ্ধি পাবে। এতে ব্যয়বহুল এ শহরে টিকে থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে অনেকের মনে। বাসা ভাড়া বাড়ালে সেই রাগে যে বাসা পরিবর্তন করবো, সেটাও করা যায় না। কারণ বাসা পরিবর্তন করতে কমপক্ষে অতিরিক্ত ৫-৬ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। এছাড়া নতুন বাসায় কমপক্ষে এক মাসের অগ্রিম ভাড়া দিতে হবে। এত খরচ বহন করা কঠিন, তাই বাসা মালিকদের চাপিয়ে দেয়া ভাড়া বৃদ্ধির খড়্গ নিয়েই থাকতে হয় ভাড়াটিয়াদের।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের যে দাম বেড়েছে সেই তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ। সংগঠনটির অন্য এক পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকার ২৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়ার প্রায় ৫০ শতাংশ, ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাসা ভাড়া পরিশোধে। এ অবস্থায় গতকাল রাত ১২টার পর জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। বাড়তি দামের প্রভাব পড়বে জীবন যাত্রার সব ক্ষেত্রে।
রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকায় বসবাসকারী আরিফ মিয়া বলেন, আতঙ্কে আছি কখন এসে বাড়ির মালিক নোটিশ দেয় ভাড়া বাড়ানোর। কারণ নিত্যপণ্য এখন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে হয়তো বাসা ভাড়া বাড়াতে পারে চিন্তায় আছি। সবজি, মাছ মাংস, নিত্যপণ্যের দাম যেমন বাড়তি হবে, তেমনি গাড়ি ভাড়াও বেড়ে গেছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ যারা ঢাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে আছি তাদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে। অনেকে টিকতে না পেরে ইতোমধ্যেই ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করছেন।
বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে সব ক্ষেত্রেই পড়বে। জীবনযাত্রায় ব্যয়ও বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় ঢাকায় যারা ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকেন তাদের মধ্যে যারা নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ তারা আসলেই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ঢাকায় এত বেশি বাড়ি ভাড়া, এর মধ্যে নিত্যপণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এর সঙ্গে যদি জীবন যাত্রার ব্যয় আরও দফায় বেড়ে যায়, তাহলে তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন