বৈরী আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ মহাসঙ্কটে পড়েছে। মাছ ধরার খরচ দিগুণ বাড়লেও সে তুলনায় সাগরে মাছ মিলছে না। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন মৎস্য আহরণে নিয়োজিত ট্রলার, বোট ও জাহাজ মালিকেরা। অনেক নৌযান ঘাটে অলস বসে আছে। কর্মহীন মৎস্যজীবীরা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে সাগরে আগের মত মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। তার উপর জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি যেন মরার উপর খাড়ার ঘায়ের অবস্থা। লক্ষ লক্ষ টাকার ধার দেনা করে সমুদ্রে মৎস্য আহরণের গেলেও ঘন ঘন দুর্যোগের কারণে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে জেলেদের। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে দিশেহারা সাগর উপকূলীয় জেলেরা। জেলে পরিবারগুলোতে চলছে নিরব কান্না।
দেশে আমিষের চাহিদার বৃহৎ অংশের জোগান দেয় সামুদ্রিক মাছ। বিগত অর্থ বছরে ৬ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ আহরণ করা হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে (জিডিপি) এ খাতের অবদান ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ করে দেশের অভ্যন্তরে আমিষের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি মৎস্য ও চিংড়ি আহরণ করে গভীর সমুদ্রে ট্রলারেই প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। আর এসব প্রক্রিয়াজাত মৎস্য রফতানি করা হচ্ছে বিদেশে। এর ফলে এ খাত দেশে আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছে। গত অর্থ বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মৎস্য ও চিংড়ি রফতানি হয়েছে। তবে আবহাওয়ার বৈরী আচরণের ফলে সমুদ্রে আগের মতো মাছ মিলছে না। এ ছাড়া খরচ বৃদ্ধির ফলে অনেকে লোকসানের ভয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে না। এতে চলতি অর্থ বছরে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ যেমন কমবে একই সাথে এ খাতে রফতানি আয়ও অনেক কমে যাওয়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে নানা কর্মকৌশল শুরু হয়েছে। প্রচলিত ও অপ্রচলিত সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণ করে খাবারের সমৃদ্ধিসহ বিদেশে রফতানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার জন্য গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলেদের নানা সঙ্কটের বিষয়েও সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সাগরে মৎস্য আহরণ সঙ্কট ও মৎস্যজীবীদের দুর্দশা নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট তুলে ধরা হলো।
চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সঙ্কটে পড়েছে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ। খরচ বেড়ে গেছে কিন্তু সে তুলনায় মাছ মিলছে না। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন মৎস্য আহরণে নিয়োজিত ট্রলার, বোট ও জাহাজ মালিকেরা। অন্যদিকে অতিরিক্ত খরচ পোষাতে গিয়ে মাছের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। বাজারে এখন মাছের দামে আগুন। জাতীয় মাছ ইলিশসহ অনেক মাছই সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এতে করে দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আট মাসের মাথায় দুই দফায় জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে নিয়োজিত ফিশিং বোট, ট্রলার ও জাহাজগুলো চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে নিয়োজিত বৈধ ফিশিং বোট ও ট্রলারের সংখ্যা ১২ হাজার। বৈধ ২৬৪টি মাছ ধরার জাহাজের মধ্যে সচল রয়েছে ২৩২টি। তবে এর বাইরে লাইসেন্স ছাড়া মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার ও জাহাজ রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এ সংখ্যা তাদের অজানা। বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশনের নেতারা জানান, বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব এবং নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণের সময়ও কমে গেছে। বছরে সর্বোচ্চ ১৬০ থেকে ১৭০ দিন মৎস্য আহরণের সুযোগ থাকে। অর্থাৎ বাণিজ্যিক ট্রলার ও বোটগুলো ২০০ দিন জেটিতে মৎস্য আহরণ ব্যতিরেখে কোনপ্রকার আয় ছাড়া বসে থাকতে হয়। কিন্তু এ সময়ও যাবতীয় খরচ চলমান থাকে। এছাড়া বিগত কয়েক বছরে ট্রলার ও বোট পরিচালনা ব্যয় তথা নাবিকদের বেতন-ভাতা, বাৎসরিক ডকিং চার্জ, মেরামত খরচ, পোর্ট চার্জ, রিভার চার্জ, মৎস্য অবতরণ ব্যয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় জ¦ালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে এ খাত শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছে গেছে।
মেরিন হোয়াইট ফিশ ট্রলার ওনার্স এসোসিয়েশন ও বোট মালিক সমিতির নেতারা জানান, গত বছরের শুরুতে ডিজেলের মূল্য যখন ৬৫ টাকা ছিল তখন একটি বাণিজ্যিক ট্রলারে মৎস্য আহরণের জন্য ৫২ লাখ টাকার জ¦ালানি তেলের প্রয়োজন হতো। ওই বছরের ৩২ নভেম্বর ডিজেলের মূল্য ৮০ টাকা নির্ধারণ করায় এ খাতে খরচ বেড়ে ৬৫ থেকে ৭২ লাখ টাকায় পৌঁছে। বর্তমানে ডিজেলের আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় এক বয়েজে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকার জ¦ালানি তেল লাগছে। বিশেষ করে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এতে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত ট্রলারের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
মাছ ধরার ট্রলার এফবি সাইদুর রহমানের মাঝি মো. সেলিম জানান, তার ট্রলার সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, কুতুবদিয়া এলাকায় মৎস্য আহরণ করে। গভীর সমুদ্রে টানা ১০ দিন মাছ ধরার পর চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট ফিশারিঘাটে আসেন তিনি। তার ট্রলারে ২০ থেকে ২২ জন মাঝি-মাল্লা রয়েছেন। ১০ দিনের সফরের জন্য তার ডিজেল প্রয়োজন হয় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার লিটার। আগে ১০ দিনে খরচ হতো দেড় লাখ টাকা। এখন এ খরচ সোয়া দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। জ¦ালানি তেলের মূল্য বাড়ার সাথে সাথে অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মূল্যও বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়েছে। তিনি বলেন, আগে ১০ দিনের জন্য খাবার বা রসদ লাগতো ১৩ থেকে ১৬ হাজার টাকার। ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন এ খাতে ব্যয় হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকা। মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ও ফিশিং বোট মালিক সমিতির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম ওরফে বাবুল সরকার বলেন, জ¦ালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়ানোর পরে মাত্র পাঁচ টাকা কমানো হয়েছে। এতে বাজারে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না। দাম কমপক্ষে প্রতি লিটার ৯০ টাকায় কমিয়ে আনা জরুরি।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকায় হাজার হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছে। একদিকে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি অপরদিকে মেঘনা ইলিশের অকাল চলছে। ফলে শত শত নৌকা ট্রলার নদীঘাটে অলস সময় কাটাচ্ছে। আর এতে করে উপকূলীয় ও দ্বীপাঞ্চলে দশ সহস্রাধিক জেলে বেকার হয়ে পড়েছে। জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ যাবত নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলীয় মেঘনা ও সাগরে ইলিশের অকাল চলছে। নদীতে তিন চারদিন অবস্থান করেও কাঙ্খিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া কিছু ইলিশ জালে ধরা পড়লেও এগুলো আকারে ছোট বিধায় ক্রেতারা কিনতে চাইছে না। এসব বিষয় বিবেচনা করে মাছ ধরা নৌকা ট্রলার মালিকরা বাধ্য হয়ে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে।
উপকূলীয় মৎসজীবি সমিতির সভাপতি আকতার হোসেন জানান, একটি মাছধরা ট্রলারে মাঝিমাল্লা ছাড়াও ১০/১২জন জেলে থাকে। একটি ট্রলার এক সপ্তাহ নদীতে অবস্থান করলে বিপূল পরিমাণ ডিজেল তেল ছাড়াও জেলেদের খাদ্য ও বেতন বাবত প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের তূলনায় খরচ দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া জেলেদের খাদ্য ও বেতন বাবত অনেক টাকা ব্যয় হয়। অথচ সে তূলনায় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ট্রলার মালিকরা াছ ধরা বন্ধ রেখেছে।
বরিশাল থেকে নাছিম উল আলম জানান, সাম্প্রতিক জ¦ালানী সহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সাথে বছর জুড়ে বিরূপ আবহাওয়ায় বরিশালের মৎস্যজীবীদের চরম দুর্দিন চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনে এবার আষাঢ়Ñশ্রাবনের বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির অভাবে নদী এবং সাগর উপকূলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের বেশী। ফলে মাছের বিচরন হ্রাসের মধ্যেই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি জেলে সম্প্রদায়কে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে। এবার ঘন ঘন লঘু চাপ ও নিম্ন চাপের প্রভাবে সাগর ও নদী উত্তাল হয়ে ওঠায় মৎস্য আহরনও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বরিশালের সবগুলো মাছের মোকামেই অনেকটা নিরব হাহাকার চলছে। যেসব আড়তদার জেলেদের নগদ অর্থ, জ¦ালানী ,বরফ এবং খাবার দিয়ে সাগর ও নদীতে মাছ ধরতে পাঠান তাদের মাঝেও হাতাশা কাজ করছে। জ¦ালানীর মূল্য বৃদ্ধির রেশ ধরে যদিও ইতোমধ্যে বাজারগুলোতে মাছের দামও প্রায় দেড়গুন বেড়েছে, কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় নদী ও সাগর উপকূলে বিচরণ কমে যাওয়ায় আহরিত মাছ বিক্রী করে আহরনÑব্যায় উঠছে না। পাথরঘাটা ও মহিপুরের একাধিক মৎস্য আড়তদার জানিয়েছেন, একটি মাঝারি ট্রলার সাগরে ৭ দিনের জন্য মাছ ধরতে গেলেও খোরাকি (খাবার খরচ), জ¦ালানি ও বরফ সহ লক্ষাধিক টাকা লাগছে। ১৫দিনের জন্য ব্যায় প্রায় দ্বিগুন। কিন্তু যে মাছ উঠছে তাতে ব্যায়ের অর্ধেক টাকাও আসছে না। মাছ না পেয়ে আড়তদার মহাজনদের মত জেলেরও বিপর্যস্ত।
খুলনা থেকে ডিএম রেজা জানান, পরপর একাধিক লঘুচাপে ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সাগর, হঠাৎ জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালীন পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় খুলনাঞ্চলের অর্ধলক্ষ জেলে পরিবার চরম দুরবস্থায় রয়েছে। ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকায় অনেক জেলেই মহাজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের সুদ নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালিয়েছে। সুদের টাকা শোধ করতে অনাহারে অর্ধাহারে তাদের দিন কাটছে। অন্যদিকে, সাগরে মাছ ধরতে গেলে আশানুরুপ মাছ মিলছে না। ফলে প্রতি সাগর যাত্রায় বড় অংকের টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে ট্রলার মালিক ও মহাজনদের। মালিক-মহাজনদের লোকসানের কারণে জেলেরাও পাচ্ছে না তাদের প্রাপ্য মজুরি।
খুলনা নতুন বাজার ট্রলার মালিক সমিতির সদস্য আমিনুল ইসলাম জানান, গত এক মাস ধরে সাগরে আশানুরুপ মাছ মিলছে না। ডিজেলের দাম বাড়ানোতে প্রতি সাগর যাত্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। মাছ বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে ট্রলার খরচ, জেলেদের টাকা-কোন কিছুই ঠিকমত পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
পটুয়াখালী থেকে মো: জাকির হোসেন জানান, একদিকে সাগরে মিছলে না কাংঙ্খিত ইলিশ অন্যদিকে জ্বালানি তেল সহ অন্যান্য উপকরনের মূল্য বৃদ্ধির ফলে দিশেহারা দক্ষিনাঞ্চলের হাজার হাজার জেলে। এ দিকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ের শেষে ২৩ জুলাই যখন জেলেরা দীর্ঘদিনের লোকসান কাটাতে নতুন উদ্যোমে সাগরে নামে মাছ শিকার করতে উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় প্রথমেই তারা ২৭ ও২৮ জুলাই একদফা দূযোর্গের কবলে পড়ে প্রথম ধাক্কা খায়। পরবর্তিতে ১৩ ও ১৪ আগষ্ট এবংসর্বশেষ ১৮ আগষ্ট উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় সাগরে মাছ শিকার করতে গিয়ে জেলার ২৫ টি ট্রলার নিমজ্জিত হয় ,এতে ৩৭০ জন জেলে সাগরে ট্রলার সহ ডুবে যায়।পরবর্তিতে ৩৫৫ জন জেলেকে মোংলা কোস্টগার্ড, সুন্দরবন সহ ভারতে উদ্ধার হয়, ১৫ জনের সন্ধান এখনো মেলেনি।
ভোলা থেকে মো. জহিরুল হক জানান, নানামুখী সমস্যায় দিন পার করছেন ভোলার উপকূলের জেলেরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করতে হয় বঙ্গোপসাগরে। মোকাবিলা করতে হয় প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ। এর উপর ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আরো বেশী বিপাকে পড়েছেন জেলেরা। লাখ টাকার বাজার করে একেকটি ট্রলার সাগরে পাঠানো হচ্ছে, সেই ট্রলার কাক্সিক্ষত মাছ না নিয়েই কূলে ফিরছে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোলার উপকূলের জেলেদের।জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্য’র ব্যায় বেড়েছে অনেক। সাগরে গিয়ে যে মাছ পাওয়া যায় তার দাম দিয়ে খরচের টাকাও উঠেনা। এ অবস্থায় মহাসঙ্কটে রয়েছে ভোলার জেলেরা।
বরগুনা থেকে জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা জানান, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাগর উপকূলীয় জেলা বরগুনার মৎস্যজীবিরা। ভরা মৌসুমেও মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ। অনেকটা খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে জেলেদের। ৬৫ দিনের মৎস্য অবরোধের পরে ধার-দেনা করে লাখ লাখ টাকা খরচ করে গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য গেলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে খালি হাতে চোখ মুছতে মুছতে ফিরতে হয়েছে সিংহভাগ জেলেদের। ঋণের বোঝা আকাশচুম্বী হওয়ায় চরম দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপকূলীয় জেলেরা। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজার হতে ভোক্তা পর্যন্ত। স্বল্প সংখ্যক আহরিত ইলিশ চলে গেছে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে মৎস্য শিকারি খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ এতে হুমকিতে পড়েছে মৎস্য পেশার সাথে জড়িত মানুষের জীবন জীবিকা।
লক্ষ্মীপুর থেকে এস এম বাবুল (বাবর) জানান, মেঘনায় ভরা মৌসুমে একদিকে ইলিশের আকাল অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে উপকূলের কয়েক হাজার জেলে পরিবার। ইলিশের দুর্দিন ও জালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেরা। ধার-দেনায় জড়িয়ে হতাশা বিরাজ করছে জেলেপল্লি গুলোতে। এতেকরে চলিত বছর ইলিশের ২৫ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বাজারে ইলিশের আমদানি কম থাকায় দাম অনেক চড়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন