‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে নতুন ৭ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন জোটের ঘোষণা দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র নয়, প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাবে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারবিরোধী লড়াই-সংগ্রামের বিকল্প নেই। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে আগামী দিনের সংগ্রামে অংশ নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আত্মপ্রকাশের দিনেই আগামী ১১ আগস্ট রাজধানীতে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে নতুন রাজনৈতিক জোটটি।
গণতন্ত্র মঞ্চের সাতটি দল হলো- আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন, ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ, রফিকুল ইসলাম বাবলুর নেতৃত্বাধীন ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও হাসনাত কাইয়ুমের নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
জোটের ঘোষণার পর আ স ম আব্দুর রব বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এই মঞ্চ গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্র, সংবিধান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারব্যবস্থা নিয়ে এই জোটের সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাবসহ দাবি রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের রূপরেখা তুলে ধরেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জোট নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম।
রূপরেখায় বলা হয়, বাংলাদেশে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো অবকাশ নেই। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন নয় বরং তারা আরও একটি একতরফা তামাশার নির্বাচনের ছক তৈরি করছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। এই অবস্থায় জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক রদবদল করবে, একজন নাগরিকের নির্বাচিত করার ও নির্বাচিত হবার অধিকার নিশ্চিত করতে দল নিবন্ধন আইন, নির্বাচন আইন ও বিধিমালার যথাযথ সংস্কার করবে এবং ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে ।
এক ব্যক্তির হাতে জবাবদিহিতাহীনভাবে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার ব্যবস্থার বদলে রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ যথা সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও সরকারের জবাবদিহিতার কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এমপিদের মতামত প্রদানের অধিকার খর্বকারী সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার। বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নিম্ন আদালতকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে। তার পরিচালনা ও তদারকি উচ্চ আদালতের হাতে ন্যস্ত করা, প্রধান বিচারপতিসহ বিচারক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ।
রূপরেখায় আরও বলা হয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ ব্যক্তির মতপ্রকাশ , ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থী উপনিবেশিক ও নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করা ; গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী আইন প্রণয়ন করা। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতিতে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জীবন ও মর্যাদা নিশ্চিত করা।
মাহমুদুর রহমান মান্না রূপরেখা তুলে ধরে বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গীয় পরিচয় ও শ্রেণী নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করা; রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও সাম্প্রদায়িক হামলার তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা। ওম হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা। বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাবেনা ্র এই নীতির ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার।
সকলের জন্য একই মানের শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিক্ষাকে জাতীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা, উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট কাজে এবং সকল নাগরিক সেবা পেতে ঝামেলামুক্ত ‹ একটেবিল নীতি ’ বা ‹ওয়ান স্টপ সার্ভিস› কার্যকর করা। বিদ্যুৎ খাতসহ সর্বত্র দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং পরিবেশসম্মত সাশ্রয়ী বিদ্যুতের জন্য বিদ্যুৎ খাতের পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো ।
কৃষক-শ্রমিকদের জন্য ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা ও ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রকৃতিবান্ধব উৎপাদনমুখি সংস্কারে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান। পাটকলসহ সকল বন্ধ কলকারখানা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ। শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য ন্যূনতম মর্যাদাপূর্ণ মজুরি ঘোষণা।
সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুলতে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ গণপরিবহনের ব্যবস্থা, বাসা ভাড়ার যৌক্তিক সীমা নির্ধারণ। প্রকৃত দরিদ্রদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করে তাদের সহায়তা দেয়া ও বেকারদের কর্মহীন মানুষের স্ব-কর্মসংস্থানে সহায়তা বা বেকারভাতা প্রদান। বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির জন্য সর্বত্র বিশেষ ব্যবস্থা ও তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐক্য ও জনগণের ভূমিকা । পালনের কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সমতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতি ও স্বীকৃত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক সমস্যাদির সমাধান করা। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন