উত্তর : নবী সঃ স্বীয় জীবদ্দশায় মহররম ও আশুরার ফজিলত, আমল বিষয়ে বলে গেছেন, যা একাধিক সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। অপরদিকে কারবালার ঘটনা ঘটেছে রাসুল সঃ এর ইনতেকালের অর্ধ শতাব্দি পরে অর্থাৎ ৬১ হিজরীতে। নবী সঃ মদিনায় হিজরতের পর দেখেন ইহুদীরা আশুরার রোজা রাখছে, তারা বললো এ দিন মুসা আঃ ফেরআউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে রোজা রেখেছিলেন,আমরা তার অনুসরণে রোজা রাখছি। তখন নবী সঃ বললেন মুসা আঃ এর অনুসরণের বিষয়ে তোমাদের চেয়ে আমরা বেশি হকদার এ বলে নবী সঃ রোজা রাখেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কে রোজা রাখার নির্দেশ দেন (বুখারী, মুসলিম)। নবী সঃ বলেছেন - রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হল মহররমের রোজা (মুসলিম)। নবী সঃ হুবহু ইহুদীদের মত ১০ তারিখে একটি রোজা না রেখে ৯তারিখ ও১০ তারিখ দুটি রোজা রাখতে বলেছেন( মুসলিম)। নবী সঃ বলেছেন আশুরার রোজার মাধ্যমে আশা করা যায় বিগত এক বছরের (সগিরা) গুনাহমাফ করে দিবেন(মুসলিম)। আমি একাধিক দরবারে মহররম ও আশুরা উপলক্ষে মাহফিলে গিয়ে আলোচনা শুনেছি। সেখানে একটিবারের জন্য ও তারা এ হাদিসগুলোর আলোচনা করেননি, এর আমলের ফজিলত ও মহররমের ইতিহাস বিষয়ে আলোচনা করেননি। পুরো আলোচনা জুড়ে ছিল ইমাম হোসাইন রাঃ কিভাবে শহীদ হয়েছেন সে বর্ণনা। শুধু তাই নয়, কতগুলো জাল ঐতিহাসিক বর্ণনা, বিষাদ সিন্ধুর ভুল বর্ণনা যেমন এক ইহুদী সীমারকে ইমাম হোসাইন রাঃ এর কর্তিত মাথা স্ব সম্মানে দাফনের জন্য ইমাম হোসাইনের মাথার বিনিময়ে নিজের ছেলে মেয়ে স্ত্রী সহ সকলের মাথা কেটে সীমারকে প্রদান করেন, এমন অনেক বানোয়াট কাহিনী বলে আবেগ সৃষ্টি করে এ উপলক্ষে বেশি মাহফিল করা বেশি হাদিয়া দেয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। আহলে বায়তের প্রতি ভালোবাসা ঈমানের দাবি। কিন্তু আমাদের আলোচনার অবস্থা যদি এমন হয় মানুষ মহররম ও আশুরা বলতে বুঝবে শুধু কারবালার ঘটনা, তাহলে মহররমের আমল বিষয়ে নবী সঃ এর হাদিসগুলো ঢাকা পড়ে যাবে। মহররম মাসে যেহেতু কারবালার ঘটনা ঘটেছে তাই মহরম ও আশুরার ফজিলত ও আমল এবং করণীয় বর্জনীয় সম্পর্কে আলোচনার সাথে সাথে কারবালার ঘটনার বর্ণনা, অন্যায়ের কাছে আপোষ না হওয়ার কারবালার শিক্ষা, ফাসেকের হাত থেকে, কোরআনের পরিপুর্ণ শাসন বলবৎ করেনা এমন লোকের হাত থেকে, সৎ লোকের নেতৃত্বের জন্য, কোরআনের পরিপুর্ণ শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের যে শিক্ষা কারবালা দিয়ে গেছে তা আলোচনা,আহলে বায়তের প্রতি ভালোবাসার গুরুত্বের আলোচনা সহ থাকলে ভালো হয়।
উত্তর দিচ্ছেন: অধ্যক্ষ মোঃ ইয়াছিন মজুমদার, ফুলগাঁও ফাযিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা, লাকসাম, কুমিল্লা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন