এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম......। ১৯৭১ সালের ৭ ই র্মাচ যে উদ্দীপ্ত ভাষনে জেগেছিল গোটা জাতি।মাত্র নয় মাসের ভেতর লড়াকু জাতি হিসাবে নাম লিখিয়েছিল বিশ্বে, বীরের জাতি।বঙ্গালি মাথা নোয়াবার নয়।সে দেশ , সে জাতি দ্বারাই ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট রচিত হলো র্নিমম এক কালো অধ্যায়।ধানমন্ডি ৩২; আসলে বাড়ির নম্বর ছিল দশ, সড়কের নম্বর বত্রিশ।সড়কের নামেই পরিচিত ছিল বাড়িটি।নিয়মমত দশটা থেকে এগারটার ভেতর ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বার বাড়ির প্রতিটি কক্ষে আলো নিভে যায়।সবাই হারিয়ে যায় অন্য জগতে।কে কি কী স্বপ্নে বিভোর সেটা জানতে ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষা।রাতের আকাশে থোপ থোপ কালো মেঘ জমেছিল। রাত প্রায় শেষের দিকে।একটু বাদেই আরেকটা সকাল আসবে আলো নিয়ে।চারিদিক শুনশান নীরবতা। হঠাৎ ই হায়েনার বুলেটের গর্জন।ঘুম ভাঙ্গে একে একে সবার।বুলেটের শব্দে ঘুম ভাঙ্গা কতটা কষ্টের, আতঙ্কের; ভুক্তভোগী ছাড়া কে জানে?ঘুম ভেঙ্গে আবার রক্ত ঝরিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া.....! বঙ্গবন্ধু উঠলেন। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা উঠলেন।তার সংগ্রামী জীবনে তিনি স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন সবটুকু উজাড় করে; সব সময়। দেশ ও মানুষ নিয়ে তার স্বপ্ন ও যে কম ছিল না, কম ছিল না ভালোবাসা।বঙ্গবন্ধুর পূত্র শেখ কামাল ওঠলেন।শেখ জামাল উঠলেন। বঙ্গবন্ধুর কলিজার টুকরা শেখ রাসেল উঠলো। শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল উঠলেন। সদ্য বিবাহিত শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল উঠলেন। বাইরে মুর্হুমুর্হ গুলির শব্দ।চিৎকার আর গুলির শব্দ শুনে ঘুমভাঙ্গা চোখে শেখ কামাল নিচে নামলেন।তাকে নিচ তলায় গুলি করে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু ঘটনার ভয়াবহতা আচ করে আর্মি, পুলিশ সহ বিভিন্ন জায়গায় ফোন করেন। বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি। স্বাধীনতার এ মহানায়কের ফোন পেয়েও কেউ সেদিন সহযোগিতার হাত বাড়ায় নি। সাড়া মেলেনি। তার কিছুক্ষন পরই ৩২ নম্বার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বঙ্গবন্ধুর থাকার ঘরে প্রবেশ করে একদল পিশাচ। বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়ি দিয়ে টেনে হিচড়ে নিচে নিয়ে যায়। প্রিয় নেতার এক হাতে পাইপ আর এক হাতে দেশলাই।দ্বরাজ গলায় বলেন, তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাস।
নিঃশব্দ রাতের র্নিজনতা ভেদ করে কুকুরের ঘেউ ঘেউ, ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।শব্দ বাতাসে মিলিয়ে না যেতেই সামনে থেকে ব্রাশ ফায়ারের শব্দ।বাংলাদেশের স্বপ্ন আঁকা বুকটা ঝাঝরা হয়। সিড়িতেই লুটিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু।বুকের তাজা লাল রক্ত সিড়ি বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে নামে। সদ্য স্বাধীন দেশটা যেন হাহাকার করে ওঠে।কিছু পাখি গাছ থেকে ভয়ে পালিয়ে যায়।আপন নীড় ভুলে কিছু পোষা প্রানী দিক বিদিক ছোটাছুটি করে। বঙ্গবন্ধুর কবুতর খুব প্রিয় ছিল। কবুতর শান্তির প্রতীক। একটা খোপ ছিল কবুতরের। প্রিয় নেতার শেষ আর্তনাদ কী ওরা শুনেছিল!কেঁদেছিল?
বাড়িতে আর যারা ছিলেন, তাদের কাউকে নিজ কক্ষে, কাউকে ধরে নিয়ে বাইরে দাড় করিয়ে হত্যা করা হলো। ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়িটা যেন এক রক্ত নদী।
শিশু রাসেল।কিছু বোঝেনা, কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমি মায়ের কাছে যাব। একজন বলে ওঠে, চল তোকে তোর মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। রাসেল কে দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। মায়ের রক্তে গোসল শরীর।মায়ের বুকে আছড়ে পড়ে শিশু রাসেল, রাসেলের মা মা বুক ফাটা আর্তনাদে গলেনি হায়েনাদের মন। সেখানেই গুলিতে হত্যা করা হয় তাকে। শেষ রাতের মাত্র একশো মিনিটের পৈশাচিক ঘটনায় ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়িটা স্তদ্ধ হয়ে যায়। আকাশে মেঘ,ঝিরঝিরে বৃষ্টি। আকাশ কাঁদে?হয়তো কেঁদেছিল সেদিন। যিনি শুধু অসহায়, অধিকার হারা মানুষের কথা বলে, জেল জুলুম হাসি মুখে মেনেছেন, একটি স্বধীন বাংলাদেশ ছিল যার দু’চোখের স্বপ্ন তাকে বিদায় করে, একেবারে নির্মূল করে ওরা চেয়েছিল তার আদর্শ চিরতরে মিটিয়ে দিতে, ভুলিয়ে দিতে। শত্রæর হাসি অবিনশ্বর নয়, মিথ্যাও টেকেনা বেশিদিন। তাইতো আজও স্বাধীন দেশ প্রতি ১৫ আগস্ট শোকে মূহ্যমান।মোড়ে মোড়ে ধ্বনিত হয়, যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই.........।
বঙ্গবন্ধু তার আদর্শে আজও আছেন।
আগস্ট আসলেই কেউ কানে কানে যেন বলে দেয়, আদর্শে জেগে ওঠ, শোকে কাঁদো। জাগো বাঙ্গালি, কাঁদো।যেন শত কোটি প্রান হাহাকার করে বলে, নেতা তোমায় ভুলিনি, ছাড়িনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন