শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ধীরগতি

প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ২ ডিসেম্বর, ২০১৬

আইয়ুব আলী : চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে করে পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক তৎপরতা। চলতি বছরের আগস্ট মাসে ডা: শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি, আবু সুফিয়ানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণার পর পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটিতে স্থান পেতে দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৯টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা: শাহাদাত হোসেন। তিন সদস্যের কমিটি গঠনের পর ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘোষণার প্রায় দুই মাস পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি নগর বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ওয়ার্ড কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায়ও দেখা দিয়েছে ধীরগতি। অদ্যাবধি নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে সফলভাবে সদস্য সংগ্রহ অভিযান সম্পন্ন হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়নি।
১৯৯৭ সালে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে সভাপতি, দস্তগীর চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ও এফ এইচ খান ফজুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ঘোষিত কমিটিই ছিল পূর্ণাঙ্গ কমিটি। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমকে আহŸায়ক করে এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হলেও সাংগঠনিক অবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০০৮ সালে পুনরায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট আহŸায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর অনেক সাংগঠনিক কর্মকাÐ করাসহ দলকে শক্তিশালী করার কথা থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে ওই আহŸায়ক কমিটি সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থ হয়।
২০০৯ সালে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। যাকে বলা হয়েছিল সুপার ফাইভ কমিটি। কিছুদিন পর দস্তগীর চৌধুরী ইন্তেকাল করলে সাংগঠনিক ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে। ওই সময় আন্দোলন-সংগ্রাম শুধু দলীয় কার্যালয়ভিত্তিক দৈনন্দিন কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছিল। এ সময় বিচ্ছিন্নভাবে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। পদ-পদবি ছাড়া কাজ করতে গিয়ে দলীয় অফিসেও প্রশাসনিকভাবে মূল্যায়িত হয়নি। নগর কমিটির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির পর নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা: শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি করে পুনরায় ৩ সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়।
নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অনেকেই এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২০ বছর ধরে নগর বিএনপির কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এ অবস্থায় নব্বইয়ের পরবর্তী ছাত্রনেতাদের অনেকের বয়স ৫০-এর ওপরে তারা কি সাবেক ছাত্রনেতা পরিচয় দেবে নাকি বিএনপি নেতা পরিচয় দেবে। এ প্রসঙ্গে এক ছাত্রনেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের থেকে অনেক জুনিয়র তারা কোনো প্রোগ্রামে অংশ নিলে প্রাপ্য সম্মানটুকু করেন না। অনেক সিনিয়র নেতা নীরবে অবসরে চলে গেছেন।
এ ধরনের অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে উপযুক্ত নেতৃত্ব গড়ে ওঠা দুষ্কর হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে অনেকে বয়োবৃদ্ধ হয়েছেন, অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। ডা: শাহাদাত হোসেন, আবু সুফিয়ান ও আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনের পর মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল শিগগিরই নগর কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হবে। কিন্তু তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আগামীতে দলকে সুসংগঠিত করতে হলে নগর বিএনপিতে ত্যাগী, সুশিক্ষিত, গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিষয়ে ডা: শাহাদাত হোসেন বলেন, সাংগঠনিক কিছু সমস্যার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি। তবে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ চলছে। নগর কমিটিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং সবাইকে সন্তুষ্ট রেখে ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র থেকে ১৭০ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়ায় পুনরায় নতুনভাবে কাজ করতে হচ্ছে।
এদিকে নগর কমিটির পূর্ণাঙ্গ করার আগে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন সভাপতি ডা: শাহাদাত হোসেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, এক নেতার এক পদ হলে ৪১ ওয়ার্ড থেকে ৮২ জনকে রাখতে হবে। তাই ওয়ার্ড কমিটিতে যারা দায়িত্ব পাবেন তারা নগর কমিটিতে আসতে পারবেন না। এক্ষেত্রে নগর কমিটি গঠনে সুবিধা হবে।
সভাপতি আগে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পক্ষে মত দিলেও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর আগে নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পক্ষে মত দিয়ে বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি শিগগির পূর্ণাঙ্গ কমিটি উপহার দিতে পারব। জানা যায়, কাউন্সিলের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে মনোনয়নপত্র বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডা: শাহাদাত হোসেন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর তাতে রাজি হননি। কারণ অনেক ওয়ার্ডে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত আহŸায়ক কমিটিও নেই। ফলে কাউন্সিলর কারা হবেন সে বিষয়টি নির্ধারণ হয়নি। অপরদিকে ৩৯টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে আহŸায়ক কমিটি গঠনের পর নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করলেও সেখানে অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী ফরম পূরণ করেননি। অন্যদিকে যাচাই-বাছাই না করে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল না এমন কিছু লোককে দিয়ে ফরম পূরণ করানোর কারণে দলে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ফলে তারা এখন অনেকটা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন বলে জানা গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন