শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হ্যাসের সাথে বৈঠকে র‌্যাব ও এর কর্মকর্তাদের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হ্যাসের সঙ্গে ওই বৈঠক অনুষ্টিত হয়।

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন ইউএনের সঙ্গে তাদের একটি সমঝোতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আইজিপির যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা তো মনে করি, জাতি সংষ (ইউএন) তাকে (আইজিপি) দাওয়াত দিয়েছে, তিনি যাবেন। এর জন্য যেগুলো প্রয়োজন সেগুলোর তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি জেনে শুনেই যাবেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হ্যাস সাংবাদিকদের বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধে গঠিত বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল ভালো কাজ করছে, ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র আরও সহযোগিতা করতে চায় বলেও জানান তিনি।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দেশটিতে জাতিসংঘের আমন্ত্রণে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের সফর প্রস্তুতি চলছে। যেহেতু জাতিসংঘের আমন্ত্রণে এই সফর, তাই যুক্তরাষ্ট্র এখানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি র‌্যাবের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়েও কথা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দূতের সঙ্গে। তারা বলেছে, যেভাবে র‌্যাবের কাজ করা উচিত ছিল, সেভাবে কাজ করেনি বলেই তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা বলেছি, র‌্যাব বেআইনি কোনো কাজ করলে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। আমি বলেছি, এখন র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরাও কারাগারে আছেন, যারা গাফিলতি করেছেন। আমি একটা ইনসিডেন্টের কথা বলেছি, নারায়ণগঞ্জে যে সেভেন মার্ডার হয়েছিল, সেই অফিসারদের আজকে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হয়েছে। তারা হায়ার কোর্টে আপিল করেছেন, সে প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের যে সদস্য অন্যায় করছেন তাদেরও শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে।

বন্দুকযুদ্ধের নামে বিনা বিচারে হত্যার যে অভিযোগ ওঠে, সেটি নিয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি এও বলেছি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের ‘ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি সেলফ ডিফেন্সে গুলি করে থাকে। সেটা যথাযথ হয়েছে কি না, সেটা নিশ্চিত করার জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয় ঘটনার পর পরই। তিনি যদি মনে করেন এটা যথাযথ হয়নি, তাহলে সেই সদস্যকে ট্রায়াল ফেইস করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সে সময় বলেন, এটা তো তোমরা পাবলিক্যালি অ্যানাউন্স করো না। এর উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেগুলো করার সেগুলো আমরা করছি।

আর কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, উনি বলেছেন বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। ইলেকশন পর্যন্ত এটা ঠিক থাকবে কি না জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, প্রধানমন্ত্রীর কমিটমেন্ট তিনি একটি পিস ফুল এটমসফেয়ার কন্টিনিউ করবেন আপ টু ইলেকশন। লট অফ ডেমোনস্ট্রেশন হচ্ছে, লট অফ মিটিং হচ্ছে আমাদের এখানে কোনো ইয়ে নাই। তিনি আমাদের যেটা বলতে চেয়েছেন আমাদের সঙ্গে আমেরিকার যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, সেটা এগিয়ে নিতে এবং অন্য কোনো সেক্টরে তারা সহযোগিতা করতে পারে কি না, সেগুলো তিনি জানতে চেয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, তারা মানব পাচার বন্ধে কাজ করতে ইচ্ছুক। আমাদের নিরাপত্তার জন্য যদি কিছু প্রয়োজন হয় সেখানে সহযোগিতা করতে পারে। তারা আমাদের আগেই দু-তিনটি জায়গায় সহযোগিতার জন্য লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা খুব শিগগির সমঝোতা স্মারক সই করব, সেটা আমরা তাকে জানিয়ে দিয়েছি। এখন এগুলো শেষ পর্যায়ে আছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে আমি বলেছি, এ বিষয় তোমাদের সহযোগিতা আমরা লক্ষ করেছি। এই সমস্যা সমাধানে তারা তাদের কণ্ঠস্বর আরও শক্তিশালী করবে বলে আমরা মনে করি। তারা এ বিষয়ে তাদের যে সহযোগিতা এখন আছে, সেটা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। আমাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে তারা আগ্রহের কথা জানিয়েছে। বর্ডার এলাকায় কোস্টগার্ডকে আগে তারা সহযোগিতা করেছে, সেটা করার জন্য এবং আমাদের বিজিবির কিছু ইনঅ্যাকসেসেবল কিছু জায়গা আছে সেই জায়গায় কীভাবে স্ট্রং করতে পারি সে বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবের বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বরগুনায় গত সোমবার ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ এবং এরপর নেতা-কর্মীদের পুলিশের বেধড়ক পেটানোর ঘটনা ‘বাড়াবাড়ি’।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে র‌্যাব এবং এর সাত কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বেনজীর আহমেদ আগে র‌্যাবেই ছিলেন। তার বাহিনীটির সাবেক কর্মকর্তা হিসেবেই তিনি নিষেধাজ্ঞায় পড়েন। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর বেনজীর আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। দেশটিতে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের চিফ অফ পুলিশ সামিটে (ইউএনকপ) অংশ নিতে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে তার নামও রাখা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ প্রধানদের নিয়ে জাতিসংঘের তৃতীয় সম্মেলন শুরু হবে আগামী ৩১ আগস্ট। সম্মেলন চলবে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে এ সম্মেলন হবে। জাতিসংঘের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদসহ ছয় কর্মকর্তার সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন