বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রতারণার টাকায় একাধিক ৫ তলা বাড়ি, ফিসারিজ

সিসি ক্যামেরা বসিয়েও গ্রেফতার এড়াতে পারেনি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

অভিনব প্রতারণার অভিযোগে মূলহোতাসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবত ছেলে হলে মাদকসহ আটকের কথা বলে এবং মেয়ে হলে আপনার মেয়ে অসামাজিক কাজে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বলে প্রতারণা করে আসছিল। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে নিজ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসিয়েছিল প্রতারকচক্রের সদস্যরা। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ আলামিন ওরফে আমীন, ওরফে বিনিয়ামিন ও শরিফুল ইসলাম। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি, সিসি ক্যামেরার মনিটর, ডিভিআর, নগদ ২০ হাজার টাকা ও ১০০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে নিজ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসিয়েছিলেন আলামিন। ফলে অভিযানে গিয়ে পুলিশকে পড়তে হয় বেকায়দায়। গত ১৪ মাসে বিনিয়ামিনের একটি নম্বরে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, মোবাইল ও অ্যাজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ওপর পুলিশের খুব একটা নজরদারি না থাকায় এর মাধ্যমে প্রতারণা হচ্ছে। আর গ্রেফতার আলামিন যে পদ্ধতিতে কাজ করতেন, এতে যে কাউকে ফোন করলে সহজেই ঘাবড়ে যাবেন। ফলে চাওয়া মাত্রই টাকা পেয়ে যেত সে।
তিনি আরো বলেন, আলামিন একটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্টে ৮২ লাখ টাকা ও অপর অ্যাকাউন্টে ২৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এসব টাকা দিয়ে বিনিয়ামিন বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তার পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের দুইটি বিল্ডিং ও ১০ বিঘা জমির ওপরে মাছের ফিসারিজ রয়েছে।
তিনি বলেন, একটি ব্যক্তিগত নম্বরে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য গোপন করার দায় এড়াতে পারে না মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে নগদ ও বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করে আলামিনকে সরবরাহ করতেন মো. শরিফুল ইসলাম (২০)। এরপর সেই নম্বরগুলো ভিকটিমের কাছে পাঠালে ভিকটিম প্রতারিত হয়ে ওই নম্বরগুলোতে টাকা পাঠাতেন। তখন শরিফুল ইসলাম দোকান থেকে টাকা তুলে আলামিনকে দিতেন। সপ্তাহে শুক্রবার ছাড়া ছয়দিনই প্রতারণার কাজ করতেন তারা। এভাবে তারা গড়ে প্রতিদিন দেড় লাখ থেকে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন।
তিনি আরো বলেন, আলামিনের বাড়ির রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরাগুলো ইন্টাররনেট প্রটোকলের (আইপি) মাধ্যমে চলতো। বারবার তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর আমরা স্থানীয় ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বাড়ির ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে দিই। সাদা পোশাকে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানের আশপাশে অবস্থান নিই। ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার কারণে শুরুতে ফোনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে ফোনে গালিগালাজ করে। ২-৩ ঘণ্টা পরে সরাসরি এসে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। এই সুযোগে আমরা তাকে গ্রেফতার করি। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী শরীফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি, সিসি ক্যামেরা মনিটর, ডিভিআর, নগদ ২০ হাজার টাকা এবং ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আলামিনের বিকাশ ও নগদ নম্বর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার একটি বিকাশ নম্বরে ৮১ লাখ ৯১ হাজার ৭৯৮ টাকা ও নগদের একই নম্বরে ২৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৬০ টাকা লেনদেন হয়েছে। এছাড়া অন্য একটি বিকাশ নম্বরে ৮ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩৫ টাকাসহ মোট ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার লেনদেন করেছেন বিনিয়ামিন।
প্রতারণার কৌশল : মূল টার্গেট ভিআইপি মোবাইল নম্বর। আলামিন পুরাতন মোবাইল নম্বরগুলো টার্গেট করতেন। এরপর নম্বরগুলো হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে সার্চ দিয়ে পরিবারের ইতিহাস দেখে নিতেন। এরপর নিজেকে ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে ফোন করে তার ছেলে কিংবা মেয়ে পুলিশের হাতে আটক বলে জানাতেন।
ভিকটিমের ছেলে থাকলে বলতেন, সে ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে। তাকে ছাড়াতে হলে এখনই বিকাশ কিংবা নগদে ১ লাখ টাকা পাঠাতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট এই জরিমানা করেছেন। অন্যথায় তাকে কোর্টে চালান দেয়া হবে। আর মেয়ে হলে বলতেন, তার মেয়ে অসামাজিক কাজ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। দ্রুত বিকাশ কিংবা নগদে টাকা না পাঠালে তার মেয়েকে গণধর্ষণ করা হবে। ভিকটিম আতংকিত হয়ে দ্রুত প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। অভিভাবক তখন তার মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, মেয়ের মতো অভিনয় করে আম্মু আম্মু বলে চিৎকারের শব্দ শোনাতেন। শুধু তাই নয়, গ্রেফতারকৃত আলামিন আগ্নেয়াস্ত্রর ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন।
সূত্র মতে, বেশ কিছু দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভুয়া ডিবির পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে আতংকিত করে প্রতারণা চালাচ্ছিল আলামিনের নেতৃত্বাধীন চক্রটি। ভুয়া ডিবির তৎপরতায় বিষয়ে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) ও মামলা হয়। এর প্রেক্ষিতেই তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তে জানা যায়, ছয়টি বিয়ে করেছে আলামিন। এছাড়া তিনমাস এবং ছয়মাস মেয়াদি বিয়ে করেছেন অসংখ্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন