শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

রাজাপুরে বসত বাড়ি দম্পতি ২ জন লাশ উদ্ধার, আহত ৩ ঘটনা রহস্যজনক।

রাজাপুর (ঝালকাঠি) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২২, ৬:৩০ পিএম


ঝালকাঠির রাজাপুরে সাতুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন তারাবুনিয়া চান্দের বাড়ি থেকে দম্পতি ২ জনের মরদেহ ও ৩ জনকে আহত অবস্হায় পুলিশ উদ্ধার করেছে।নিহতরা হলেন- দঃ তারাবুনিয়া গ্রামের জহুর আলী হাং পুত্র ফোরকান হাওলাদার(৪৫),ও নিহত ফোরকানের স্ত্রী মাহিনুর বেগম(৩৫)।আহতরা হলেন- দঃ তারাবুনিয়ার রুবেলের স্ত্রী মাহফুজা বেগম(৩২) কন্যা সারামনি(৩) ও নিহত ফোরকানের পুত্র মাইনুল (১৫)।আজ বেলা ১ টায় আহতের রাজাপুর স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে, এবংআজ বেলা ৩টায় নিহতদের সুরতহাল করে ঝালকাঠি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার সাতুরিয়া
ইউনিয়নের দক্ষিন তারাবুনিয়া খলিফা বাড়ি এলাকার রুবেলের ভবনে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সাতুরিয়ার আমতলা বাজারের ব্যবসায়ী ফোরকান হাওলাদার ছোট ভাই রুবেলের ভবনে বসবাস করতো। ঝড়ের কারণে কয়েক দিন ধরে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় শুক্রবার নতুন জেনারেটর কিনে বাড়িতে নিয়ে ভবনের মধ্যেই তা চালিয়ে ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করেন। রাতে খাবার খেয়ে ঐ জেনারেটরে এসি চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ভবনে ভবনে থাকা হতাহতরা।

রুবেলের স্ত্রী মাহফুজা বেগম জানান, জেনারেটরের বিদ্যুতের কারণে রাতে এসিতে কয়েক বার ছোট শব্দ হয় এবং ঘরে জেনারেটরের ধোয়া ও গ্যাসের গন্ধ পেয়ে রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তিনি বিছানা থেকে উঠতে গিয়েও শরীর ক্লান্ত অনুভব করে উঠতে পারেননি। পরে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তিনি আরও জানান, কয়েক দিনের ঝড়ে বিদ্যুৎ না থাকায় গতকাল নতুন একটি পেট্রোল চালিত জেনারেটর কিনে আনা হয় এবং তা দিয়ে এসিসহ ঘরের সব কিছু চালানো হয়। এসিও কয়েকদিন আগে বসানো হয়েছে। স্হানীয় সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ মাইনুল হক বলেন ও
নিহতের বড় ভাই সেলিম হাওলাদার জানান, আজ বেলা আনুমানিক১০টার দিকে নিকট আত্মীয়রা নিহতদের মোবাইল ফোন করলে কেহই মোবাইল রিসিভ করছে না,পরে প্রতিবেশীদের কাছে মোবাইল করলে তারা বেলা১১ টার দিকে ঘটনাস্হলের বাড়িতে এসে বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ দেখতে পায় এবং ডাকাডাকি করে কোন সারা শব্দ না পেয়ে থানা পুলিশে খবর দেয়। পরে এলাকাবাসী স্বজনরা এসে দরজা ও জানালা ভেঙে হতাহতদের ঘরে অচেতন অবস্হায় দেখতে পায়।

রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কতর্বরত চিকিৎসক আমির সোহেল জানান, ৩ জনকে অবস্থা উন্নতির দিকে। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের শ্বাসকষ্ট বা এমন কোন সমস্যা পরীক্ষীত হয়নি।

ঝালকাঠির সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (রাজাপুর সার্কেল) মাসুদ রানা জানান, স্বজন ও এলাকাবাসী দরজা ভেঙ্গে ভেতরে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। এর মধ্যে ব্যবসায়ী ফোরকান হাওলাদার ও তাঁর স্ত্রী মাহিনুর বেগমকে মৃত্যু অবস্থা পাওয়া যায় এবং ৩ জনকে অসুস্থ্য অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের উদ্ধার করে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে এসির গ্যাসক্রীয়ায় তারা মারা যেতে পারেন। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে। এ মৃত্যুর সাথে অন্য কোন ঘটনা বা রহস্য আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলী, পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান খান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাসুদ রানা সহ জেলা ও বিভাগীয় পুলিশের সিআইডি ইউনিট।
সরেজমিনে দেখা গেছে--ভবনের দুইটি রুমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) থাকলেও তার ইনডোর ও আউটডোর ইউনিট ছিলো অক্ষত। বৈদ্যুতিক সট সাকিট কিংবা বিস্ফোরনের দৃশ্যমান কোন আলামত চোখে পরেনি। পুলিশ প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছে এসি থেকে আর-২২ / আর-৪১০ গ্যাস নির্গত হয়ে এই পরিস্খিতি সৃষ্টি হয়েছে।

গ্যাস বিশেষজ্ঞরা জানান, এসিতে ব্যবহার করা হয় মনোক্লোরোডিফ্লুওরোমেথেন এইচসিএফসি - আর-২২ গ্যাস, কোনোটিতে ব্যবহার করা হয় আর-৪১০। এই দুই ধরনের গ্যাসের কোনোটিই আগুন জ্বলতে সহায়তা করে না। তবে আর-২২ গ্যাস আগুনের সংস্পর্শে এলে নিজের রূপ পাল্টে উৎপন্ন করে নতুন গ্যাস। এটি নিঃশ্বাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে তীব্র যন্ত্রণার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তবে ঐ ভবনে আগুন লাগার কোন আলামত দেখা যায়নি। আর-২২ গ্যাস আগুনে না পুড়েও যদি এই গ্যাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে কারো শরীরে যায়, তাহলেও তার ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন গ্যাস বিশেষজ্ঞরা। ঘটনাস্হলে আসা স্হানীয়দের ধারনা ঘটনাটি রহস্যজনক।

রাজাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ পুলক চন্দ্র রায় জানান, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, নিহত দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝালকাঠি মর্গে প্রেরণ করা হচ্ছে।রিপোর্ট লেখাপর্যন্ত মরদেহ রাজাপুর থানায় রয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন