গাজীপুরে প্রাইভেটকারে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধার ও মামলা দায়েরের তিনদিন অতিবাহিত হলেও এ ব্যাপারে কুল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনা উদঘাটনে সিআইডি, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে মাঠে নেমেছে।
টঙ্গী শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুজ্জামান রানা জানান, শিক্ষক দম্পতি হত্যার প্রতিবাদে এবং বিচার ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা শনিবার দুপুরে স্কুলের সামনে মানববন্ধন করেছে। এছাড়া স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা কালো ব্যাজ ধারণ এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
শনিবার দুপুরে বিসিক এলাকার একটি রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।
আগেরদিন শুক্রবার রাতে এ ব্যাপারে অজ্ঞাতদের আসামি করে গাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই আতিকুর রহমান।
নিজেদের প্রাইভেট কারে বাড়ি থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিখোঁজের একদিন পরে বৃহস্পতিবার ভোরে গাছা থানার বগারটেক এলাকায় তাদের প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এদিন বিকালে ময়নাতদন্তের পর দুইজনেরই ফুসফুস ও কিডনীতে জমাট রক্ত দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শাফি মোহাইমেন। খাদ্যে বিষ ক্রিয়া বা অন্য কোন কারণে এধরণের লক্ষণ দেখা যায় বলে তিনি জানান। তবে ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রকৃত তাদের মৃত্যুর কারণ জানা যাবে বলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সিসি ক্যামেরায় ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা যায়, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিট। হায়দারাবাদ ব্রীজ পার হতেই একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলতে থাকে। এঁকেবেঁকে কিছুক্ষণ চলার পর এমএম পেইন্টিং কারখানার সামনের সড়কের বামপাশে থেমে যায়। এরঠিক আগেই গাড়িটির ডান পাশের একটি দরজাও খুলে যায়। তবে অস্পষ্টতার কারণে গাড়ি থেকে কেউ নেমেছে কিনা বিষয়টি পরিষ্কার নয়। এদিকে নিহতের স্বজনদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
নিহত জিয়াউর রহমান মামুন টঙ্গী শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জলি পার্শ্ববর্তী আমজাদ আলী সরকার গার্লস উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। বুধবার ছুটির পর বাসায় ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুজ্জামান রানা জানান, আমাদের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান অত্যন্ত ভালো লোক ছিলেন। স্কুলে সবার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল। কারো সঙ্গে কোন বিষয়ে তার বিরোধিতা ছিল না। আমরা হেড স্যার ও তার স্ত্রী হত্যার বিচার চাই। জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সম্ভাব্য ও সংশ্লিষ্ট সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হলেও এ ঘটনা উৎঘাটনে আমরা খুব আশাবাদী এবং শীঘ্রই এর একটা কুল-কিনারা করতে পারবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন