পাকিস্তানে বিচারক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে। ফলে যেকোনও সময় গ্রেফতার হতে পারেন তিনি। এই আশঙ্কা থেকে ইমরানের দলের শীর্ষ নেতারা তার কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির বাইরে হাজার হাজার সমর্থক অবস্থান নিয়েছেন। ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হলে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
২০ আগস্ট রাতে ইসলামাবাদের মারগাল্লা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সাত নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ইমরান খানের নামে। একই দিনে রাজধানী ইসলামাবাদে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি দেশের পুলিশ ও অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করেন। ধারণা করা হচ্ছে ইমরানকে জব্দ করতেই বর্তমান সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এঘটনার পরপরই পিটিআই শীর্ষ নেতারা আন্দোলনের নামার আহ্বান জানিয়েছেন নেতাকর্মী ও তার সমর্থকদের। পিটিআই ভাইস-চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, ‘যদি ইমরান খান গ্রেফতার হয় তবে তার দল প্রস্তুত রয়েছে আন্দোলনে নামতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জোট সরকার দলীয় প্রধানকে গ্রেপ্তার করার পরিকল্পনা করছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।’ ইমরানই তাদের ভরসা বলেও জানান তিনি। যড়যন্ত্রকারীদের পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কুরেশি।
এদিকে, গ্রেফতার এড়াতে সোমবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য আবেদন করেছেন ইমরান খান। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিটিআই আইনজীবী ফয়সাল চৌধুরী এবং বাবর আওয়ান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আবেদনটি দাখিল করেন। আবেদনে বলা আছে যে, যখনই তলব করা হবে ইমরান খান আদালতে হাজির হতে প্রস্তুত। আবেদনে আরো বলা হয়েছে যে, ইমরান খানের অতীতে কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই এবং কখনো কোনো অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হননি।
শনিবার রাতে ইসলামাবাদের মারগালা থানায় দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট আলী জাভেদ এজাহারটি দায়ের করেন। এজাহারটিতে বলা হয়, ইমরান খান তার বক্তৃতার মাধ্যমে জনগণের বিরুদ্ধে উত্তেজনা ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছেন। এজহার দায়েরের পরই ইমরান খানকে যেকোনো মুহূর্তে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে গুঞ্জন ওঠে। ইতিমধ্যে ইমরান খানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত এপ্রিল মাসে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর কড়া সমালোচকে পরিণত হন ইমরান খান। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান খান শনিবার অভিযোগ করেন যে, তার একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে আটক করার কারণে শনিবার একটি জনসভায় ইসলামাবাদের পুলিশ প্রধান এবং একজন নারী বিচারকের নিন্দা করেন ইমরান খান। তিনি অভিযোগ করেন, তার দলের সহকর্মীদের ওপর অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। ওই দুজন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় ইমরান খান বলেন, ‘তোমরাও প্রস্তুত থেকো, আমরাও তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’
ইমরানের বক্তব্যের পর তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার কথা জানায় পুলিশ। পুলিশের তদন্তকারীরা বলছেন, রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে ইমরান খান সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন ভঙ্গ করেছেন। পুলিশের তদন্ত শুরুর খবর জানার পর হাজার হাজার সমর্থক তার ইসলামাবাদের বাড়ির সামনে জড়ো হন। তারা ঘোষণা দেন, ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হলে তারা পুরো রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে।
এরআগে, শনিবার পাকিস্তানের গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঘোষণা দেয় যে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য থাকার কারণে ইমরান খানের বক্তব্য সরাসরি প্রচার করতে পারবে না দেশটির টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। তবে ইমরান দাবি করেছেন যে, সরকার তার ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করতে চাইছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন