শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কুলাউড়ায় ট্রেন আটকে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৭:২৮ পিএম

দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে চা শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘটের ১৩ তম দিনেও মৌলভীবাজারের অধিকাংশ চা বাগানে কাজকর্ম হয়নি। চা শ্রমিকরা তাদের চলমান কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছে। বিকেলে কুলাউড়া উপজেলার কুলাউড়া স্কুল চৌমুহনী পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে লংলা ভ্যালির চা শ্রমিকেরা।

এ সময় গাজীপুর, রাঙ্গিছড়া ও কালিটি চা বাগানের ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা রেললাইন অবরোধ করে। এতে সিলেটগামী আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন এক ঘন্টা ২০ মিনিট আটকা পড়ে। বিকেল ৪ টায় ট্রেন আটকের খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমেদ সলমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুদাচ্ছির বিন আলী এবং অফিসার ইনচার্জ ওসি কুলাউড়া আব্দুছ ছালেক ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা চা শ্রমিকদের বুঝিয়ে বিকেল ৫ টায় রেললাইন অবরোধমুক্ত করেন। পরে সিলেট আখাউড়া লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে আমাদের নতুন সময় কে জানান কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মুহিব উদ্দিন।

এদিকে সিলেট ভ্যালির মালনীছড়া ও লাক্কুরতলা চা বাগানে কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দিলেও অধিকাংশ চা শ্রমিক তাদের কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছে। হবিগঞ্জ জেলার কোন চা বাগানে মঙ্গলবারও কাজকর্ম হয়নি।

এদিকে সোমবার কর্মবিরতি চলাকালে শ্রীমঙ্গলের কালিঘাট চা বাগানে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে চা শ্রমিক নেতা পরেশ কালিন্দীকে লাঞ্চিত করেছে শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন গত ২ দিনে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে। তবে অনেক শ্রমিককে কে বা কারা বিভ্রান্ত করছে। যে কারণে তারা কাজে যোগ দেয়নি। তিনি আরও জানান, চা শ্রমিকনেতাদের নিয়ে বাগানে বাগানে গিয়ে চা শ্রমিকদের কাজে ফেরার জন্য মোটিভেটেড করছেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া ও শ্রম অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ডিডি নাহিদ ইসলাম।

এদিকে, চা শিল্পে চলমান সংকট নিরসনে এবার উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান অধিদপ্তর। ঢাকায় আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সরকারি কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতাদের সভা আহবান করা হয়েছে। বিকাল তিনটায় শ্রম ভবনের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এমপি। সোমবার (২২ আগস্ট) শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল কাদের এ সংক্রান্ত এক নোটিশ জারি করেন। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে সভায় উপস্থিত থাকতে নোটিশের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, চা বাগান শ্রমিক ভবিষ্য তহবিল ট্রাস্টি বোর্ডের উপপরিচালক ও নিয়ন্ত্রক মো. নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, বালিশিরা ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি বিজয় হাজরা, সিলেট ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি রাজু গোয়ালা, মনুদলই ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ধনা বাউরী, লস্করপুর ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র গোঁড় ও লংলা ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি শহীদুল ইসলামকে যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে ৭৩ টি ফাঁড়ি বাগান সহ দেশের ২৪০ টি চা বাগানে চা শ্রমিকদের এই আন্দোলন শুরু হয়। প্রথমে ৪ দিন চা শ্রমিকরা ২ ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করে। পরে মালিকপক্ষ ১২০ টাকা থেকে ১৪ টাকা বাড়িয়ে মাত্র ১৩৪ টাকা মজুরী দেওয়ার প্রস্তাব দিলে আন্দোলন লাগাতার ধর্মঘটে রুপ নেয়। এই পরিস্থিতিতে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে ছুটে আসেন। কিন্তু দিনব্যাপী দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সুরহা করতে না পারায় সমঝোতা ভেস্তে যায়। পরে ঢাকায় আবারও ত্রিপক্ষীয় সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হয়।

সর্বশেষ গত শনিবার শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে এসে আবারও সভা করে ১৪৫ টাকা মজুরী নির্ধারণ করা হয়। এতে রাজি হয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। কিন্তু বিভিন্ন ভ্যালির শ্রমিকরা তা মেনে নেয়নি। ফলে মাত্র ৩ ঘন্টার ব্যবধানে তা প্রত্যাহার করে নেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। রোববার হবিগঞ্জ ও সিলেটে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন জোরদার করে সাধারণ চা শ্রমিকরা। ‘৩০০ টাকা মজুরী দে, নইলে বুকে গুলি দে’ এমন স্লোগান শুরু করলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বেড়ে যায় বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়। পরে সোমবার ২২ আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে শ্রমিকদের একাংশ আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরেন। আরেক অংশ এখনো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন