উত্তর : বাচ্চাদের ঘুমানো বা কান্না থামানোর জন্য- চকলেট দেব, বাঘ আসছে, ভূত আসছে ইত্যাদি বলা অনুচিত। অনেক মা তার শিশুকে বলে থাকেন, তোমাকে আকাশের চাঁদ এনে দেবো, তারকা এনে দেবো ইত্যাদি। অথচ এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সাময়িক আনন্দদানকারী গল্পের মতো। এ সব মিথ্যা গল্প, কথা এবং আশ^াসের মাঝে কচি মনের সন্তান বেড়ে উঠলে একটা নেতিবচক প্রভাব তাদের উপর পড়তে শুরু করে; ফলে শিশু তরুণ বয়সের কোনো এক বাঁকে দুষ্টুমি মনে করে মিথ্যা কথা বলতে বা প্রতারণার মতো গর্হিত পাপ কাজে লিপ্ত হতে সামান্যও দ্বিধাবোধ করবে না। মূলত নারী-পুরুষের মধ্যে যে ধোকা দেয় সে ধোকাবাজ এবং প্রতারক। এ শ্রেণির মানুষ সাধারণত নিজের অজান্তে বা অসতর্ক হয়ে মিথ্যাবাদীতে পরিণত হয়।
পবিত্র কুরআনের ঘোষণা- ‘সত্য সমাগত মিথ্যা বিতাড়িত।’ হাদীসে এসেছে- ‘কোনো ব্যক্তি মিথ্যা বাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (যাচাই বাছাই ব্যতীত) তাই বলতে থাকে। অর্থাৎ ইতিবাচক পর্যায়ে বিবেচনা করলে মিথ্যাবাদী ব্যক্তিদের মুখ থেকে নির্গত ভিত্তিহীন কথনশৈলীর কোনো বাস্তবতা বা সত্যতা থাকে না। আর এটাই অন্যকে ধোকা দেয়ার প্রবেশপথ। এর মাধ্যমে পৃথিবীতে ফেতনা থেকে শুরু করে যে কোনো বৃহৎ ক্ষতি সম্পন্ন হতে পারে।
প্রতারণা বা ধোকা বিষয়ে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সা. এরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের ধোকা দেয় সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৫০১৩] [মুসলিম, হাদীস নং-১০১] [ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫] [আবু দাউদ খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৩]
এছাড়াও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের ধোকা দেয়া জায়েজ নেই। যে ব্যক্তি মুসলমানদের ধোকা দেয় সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ [দারেমী, হাদীস নং-২৫৮৩] সুতরাং উম্মতের মুহাম্মদির তালিকা থেকে বহিষ্কার হওয়ার জন্য এর চেয়ে আর জঘন্য অপরাধ কী হতে পারে! সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিরা কখনও মুসলমানকে ধোকা দেয় না। এ প্রসঙ্গে সূরা হূদের ২৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘যারা মুমিন, সৎকর্মপরায়ণ এবং তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়াবনত, তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।
মিথ্যা সব গুনাহর মূল বা প্রবেশদার। একটি মিথ্যা সংবাদ একটি জীবনকে সহজে বিনাশ করে দিতে পারে। কারণ মিথ্যা দ্বারা ধোকা আর প্রতারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ জন্য মিথ্যা আর ধোকা দেয়ার প্রবণতা বাদ দিয়ে সত্যকে তুলে ধরা চাই। অনেকেই শিশুদের সাথে বিভিন্ন উপায়ে মিথ্যে কথা বলে থাকেন। এটা একেবারেই অনুচিত।
অন্য দিকে একজনের পাপের কারণে পৃথিবীতে অনেক মাখলুক আযাবের সম্মুখিন হয়। তিনি আল্লাহ যখন পাকড়াও করবেন তখন আর রক্ষা পাওয়ার উপায় থাকবে না। পবিত্র কুরআনে সূরা নাহলের ৬১ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের সীমা-লঙ্গনের শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠে কোনো জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের সময় আসে তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরা করতে পারে না।’
উত্তর দিচ্ছেন : মিযানুর রহমান জামীল, সহকারী সম্পাদক- মাসিক আর রাশাদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন