সূচনা : যুক্তি-বুদ্ধি, বর্ণনা ও বাস্তব অভিজ্ঞতাসহ যে কোন বিবেচনায় এ বিষয়টি সাধারণত শতসিদ্ধ যে, নারীর তুলনায় পুরুষের মধ্যে সৃষ্টিগত যৌন চাহিদা কয়েকগুণ বেশী।
বর্ণনা বা শরীয়তের বিচারে : শরীয়তের বিবেচনায় পুরুষের মধ্যে যৌন চাহিদা অধিক হওয়ার কারণেই শরীয়ত একজন পুরুষকে চারটি বিবাহের বা চার জন স্ত্রী রাখার অনুমতি প্রদান করেছে। নারীর মধ্যে যদি যৌন চাহিদা অধিক হত সেক্ষেত্রে ব্যাপারটি তার বিপরীতই হওয়ার কথা ছিল। যেক্ষেত্রে একজন স্ত্রী তার স্বামীর ডাকে সাড়া দিয়ে সহবাসের জন্য প্রস্তুত না হয় -তার জন্য মহানবী স. স্ত্রী-জাতির জন্য বহু সতর্কবাণী বর্ণনা করেছেন। বাস্তবে যদি নারী জাতির যৌন চাহিদা অধিক হত, সেক্ষেত্রে এসব ধমক ও সতর্কবাণী পুরুষের বেলায় বর্ণিত হওয়ার কথা ছিল।
বিবেক-বুদ্ধির বিবেচনায় : তার কারণ, পুরুষের সৃষ্টিজাত ও স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হল গরম যা যৌন চাহিদার কারণ হয়ে থাকে; পক্ষান্তরে নারীর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকে শীতল।
বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরীখে : তার কারণ, এমনটি কেউ বলবে না এবং সাধারণত তার উদাহরণও পেশ করতে পারবে না যে, নারী বা কোন স্ত্রী সহবাসের প্রতি আহ্বান করছে অথচ স্বামী বা পুরুষ লোকটি তা প্রত্যাখান করছে। কিন্তু এর বিপরীত পরিস্থিতি নিত্ত-নৈমিত্তিক ও অহরহ ঘটছে যে, স্বামী/পুরুষ আহ্বান করছে; অথচ স্ত্রী রাজি হচ্ছে না।
যুক্তি বিচারে : (ক). এভাবেও বিবেচনা করা যায় যে, জীব-জন্তুর মধ্যেও দেখা যায় একটি পুরুষ জন্তু অনেকগুলো স্ত্রী জন্তুর জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।
(খ). তা ছাড়া, স্ত্রী-জাতির মধ্যে যদি যৌন চাহিদা অধিক হত কিংবা সমান সমান হত, তা হলে সেক্ষেত্রে শহরের প্রতিটি অলি-গলিতে যিনা-ব্যাভিচারের বাজার গরম থাকতো। হাটে-বাজারে, মাঠে-ময়দানে, আনন্দ-বিনোদনের স্পটে প্রত্যেক পুরুষের নারীর প্রতি স্বভাবজাত আকর্ষণ হয়ে থাকে; মুত্তাকী লোকজনের ব্যাপারটি ব্যতিক্রম; আর ব্যতিক্রম তো ব্যতিক্রমই হয়ে থাকে। যদি একইরকম আকর্ষণ নারীদেরও হত, সেক্ষেত্রে তো কুকর্ম সম্পাদনে আর কোন ব্যাপারই প্রতিবন্ধক হত না। বিশেষ করে যেসব দেশ ও তাদের সরকারের দৃষ্টিতে কুকর্ম কোন অপরাধ হিসাবে আইনত পরিগণিত নয় এবং মেয়েদের পিতামাতা, অভিভাবকও বিষয়টিকে ঘৃণার নযরে না দেখে থাকে।
(গ). পবিত্র কুরআনের আয়াত- “ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী-তাদের প্রত্যেককে এক শত কশাঘাত করবে, আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত না করে,...”। সূরা নূর : আয়াত নং ০২। আয়াতটির তাফসীর-ব্যাখ্যায় কোন কোন তাফসীরকারক লিখেছেন, এখানে ‘ব্যভিচারিণী’কে অগ্রে উল্লেখের কারণ হচ্ছে, তার (নারী) মধ্যে যৌন চাহিদা অধিক হয়ে থাকে; কিন্তু এসব তাফসীরকারকদের ধারণা বাস্তবে সঠিক নয়। তার কারণ এমন ‘ধারণা’ বিবেক, বর্ণনা, যুক্তি, অভিজ্ঞতার পরিপন্থী। আহসানুল ফাতাওয়া : খ. ৫, পৃ. ৬৭; যাকারিয়া বুক ডিপো, দেওবন্দ, ভারত, ইত্যাদি দ্র.।
(ঘ). আরও বিবেচ্য যে, পুরুষের অধিক হারে স্বপ্নদোষ হওয়া এবং নারীদের সেই তুলনায় অনেকটা না হওয়াও অন্যতম বাস্তবতা -যা প্রমাণ করে যে, পুরুষের মধ্যে যৌন চাহিদা অধিক।
(ঙ). কোন কোন আলেমের ফিকাহর আলোচিত একটি বিষয়-মাসআলা’র কারণেও ভুল বুঝাবুঝির জন্ম হয়েছে। তা হল, পুরুষের নারীর প্রতি তাকানো নারীর পুরুষের প্রতি তাকানোর চেয়ে হালকা। যার কারণ হিসাবে বয়ান করা হয়ে থাকে, ‘নারীর মধ্যে যৌন চাহিদা অধিক’; তাই পুরুষের দিকে তাকানোর কারণে যদি পুরুষেরও যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পায়, সেক্ষেত্রে অধিক ফিতনা হতে পারে। পক্ষান্তরে, নারী যদি তাকায় সেক্ষেত্রে যেহেতু পুরুষের মধ্যে যৌন চাহিদা কম তাই ফিতনার আশঙ্কা কম’। এ বিষয়-বিধানটির এমন ব্যাখ্যাও একেবারে ভুল। প্রাগুক্ত।
বাস্তবতা হচ্ছে, পুরুষ ফিতনায় পড়ার ক্ষেত্রে যেহেতু তার সফলকাম হওয়া সহজ হয়ে থাকে; তার কারণ, পুরুষের কাছে উদ্দেশ্য চরিতার্থে বিভিন্ন উপায়-উপকরণ বিদ্যমান হয়ে থাকে যেমন : লজ্জা কম, চাহিদা অধিক, অন্তরের শক্তি ও অর্থ-সম্পদের আধিক্য, দৈহিক শক্তি ও স্বাধীনভাবে যাতায়াত -এসব বিষয় তার উদ্দেশ্য চরিতার্থে সহায়ক হয়ে থাকে।
পক্ষান্তরে নারীর দৃষ্টি পুরুষের প্রতি ততটা মারাত্মক হয় না। তার কারণ, প্রথমত তাদের মধ্যে কম চাহিদার কারণে ফিতনার সম্ভাবনা নেই বা কম, দ্বিতীয়ত ব্যতিক্রম ও ২/১টি ক্ষেত্রে নারীর তাকানো ফিতনার কারণ হলেও-সেক্ষেত্রে অধিক লজ্জার কারণে, দূর্বলচিত্ত ও দৈহিক দূর্বলতার কারণে এবং আর্থিক সংকটের কারণে, যাতায়াত-যোগাযোগ কষ্টসাধ্য হওয়ার কারণে -এ বিষয়গুলো এমন যে, এসবের কারণে নারী ইচ্ছা থাকলেও, তার মন্দ বাসনাকে পূর্ণতায় পৌঁছাতে পারে না।
আয়াতটিতে ব্যভিচারিণীকে অগ্রে উল্লেখের ‘কারণ’ এটাও যে, কম চাহিদা, অধিক লজ্জা, অধিক প্রতিবন্ধকতা এবং উপায়-উপকরণ কম হওয়ার পরও নারীর ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া অধিক মন্দ। তাই সেটিকে মন্দ হিসেবে দেখানোর জন্য তার নাম অগ্রে উল্লেখ করা হয়েছে; তার যৌন চাহিদা অধিক -সে জন্য নয়।
সুতরাং বিষয়টি প্রমাণিত হল যে, পুরুষের যৌন চাহিদার আধিক্য বিবেচনায় তার দাবী হল, তার জন্য একাধিক স্ত্রী থাকা প্রয়োজন।
(চ). এ ছাড়া, ক্রম-বর্ধমান নারীদের সংখ্যাধিক্য ও পুরুষের জনসংখ্যার হার হ্রাস পেতে থাকার বিষয়টি বিভিন্ন হাদীস-দলীলে বর্ণিত হওয়ার পাশাপাশি তা বাস্তবেও সত্য মর্মে দেখা যাচ্ছে। প্রথমত মেয়েশিশুর জন্ম হার অধিক বিবেচনায় এবং ছেলেশিশুর জন্ম হার কম বিবেচনায়; দ্বিতীয়ত বিশ্বব্যাপি যুদ্ধ-বিগ্রহ ও সংঘর্ষ-সংঘাতে অধিক হারে পুরুষের মৃত্যু-হার বাড়তেই থাকে।
সুতরাং একাধিক বিবাহের বিষয়-বিধানটি যদি মেনে না নেয়া হয়; সেক্ষেত্রে নারীদের সমতা বিধানে, চাহিদা পূরণে, দায়-দায়িত্ব গ্রহণে, সুরক্ষাদানে অতিরিক্ত পুরুষ পাওয়া যাবে কোথায়? (চলবে)
লেখক : মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন