বেশ কিছুদিন ধরেই চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে নাটক ও সিনেমায় বনবিভাগের ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে মামলা’ এবং প্রদর্শনী বন্ধ চেয়ে আইনি নোটিশ দেয়া নিয়ে শিল্পী-নির্মাতাদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়া মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার সেন্সর না পাওয়া নিয়েও বিক্ষুদ্ধ শোবিজ অঙ্গন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীরা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন্দি হয়ে গল্প বলার স্বাধীনতা চেয়ে, ‘বাংলা চলচ্চিত্র বা কনটেন্টে সেন্সরশিপের খড়গ: গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে সেন্সর বোর্ড বাতিল করাসহ ৫ দফা দাবী তারা তুলে ধরেন। ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের রিুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং ‘হাসিনা এ ডটারস টেল’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা পিপলু আর খান। হাওয়া চলচ্চিত্র নিয়ে করা মামলা প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাস্তব দুনিয়ায় সংঘটিত কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে যে আইন বলবৎ হয়, তা যদি ফিকশনাল রিয়ালিটি তথা তৈরি করা বাস্তবতার ওপর প্রয়োগ করা হয়, তাহলে শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত-চলচ্চিত্র কিছুই করা সম্ভব না। হাওয়া চলচ্চিত্রে যে শালিক পাখি দেখানো হয়েছে, তা একটি তৈরি করা বাস্তবতার অংশ। সে ক্ষেত্রে বাস্তব দুনিয়ার জন্য প্রণীত আইন দিয়ে আমরা কীভাবে ফিকশনাল রিয়ালিটিকে বিচার করবো? সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, হাওয়া চলচ্চিত্রে যে জনগোষ্ঠীর জীবন দেখানো হয়েছে, তা বাস্তব উপস্থাপনার জন্য তাদের সহজাত ভাষাভঙ্গির রীতিকে তুলে ধরা হয়েছে। এতে চলচ্চিত্রের সংলাপে যতটুকু গালি উঠে এসেছে তা চলচ্চিত্রায়নের প্রয়োজনেই। এ কারণে দৃশ্যায়িত হয়েছে হত্যা ও মৃত্যু দৃশ্যগুলো। এ সব দৃশ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বাস্তব দুনিয়ার জন্য প্রণীত আইন দিয়ে কি এই ফিকশনাল রিয়ালিটিকে আমরা বিচার করতে পারবো? সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, বাংলা চলচ্চিত্র বিকাশের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক একটা পরিবর্তন ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে। এমন সময় হাওয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হলো। ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি পাচ্ছে না দুই বছর ধরে। তরুণরা নতুন সহস্রাব্দের চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে। শিল্পের বাস্তবতা থাকতে হবে। শিল্পের ভাষা যেটা, সেটা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা থাকতে হবে শিল্পীর। সংবিধানেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্রের কাহিনী রচয়িতা এবং চিত্রনাট্যকার গাউসুল আলম শাওন বলেন, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের এখনই সময়। আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ভাষা কিংবা সংস্কৃতি একটি চলমান বিষয়। কোনো প্রতিক্রিয়াশীল আইন দিয়ে এটাকে আটকে রাখতে গেলে তা জাতির জন্য ভয়ংকর হতে পারে। চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধানে দেয়া হয়েছে। কিছু মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অসাংবিধানিক উপায়ে হরণ করা যাবে না। দাবি আদায়ে প্রাথমিক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে। জানানো হয়, সেপ্টেম্বরে একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলোতে স্মারকলিপি দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবী উত্থাপন করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১. হাওয়া চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ২. ‘শনিবার বিকেল’ চলচ্চিত্র কেন সেন্সর ছাড়পত্র পেল না তার সু¯পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। ৩. বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড বাতিল করতে হবে এবং প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেট আইনের ক্ষেত্রে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চলচ্চিত্র সার্টিফিকেট আইন প্রণয়ন করতে হবে। ৪. প্রস্তাবিত ওটিটি নীতিমালার ক্ষেত্রে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ওটিটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ৫. চলচ্চিত্র বা কনটেন্ট বিষয়ক কোনো মামলা দায়ের করার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মোরশেদুল ইসলাম, তারিক আনাম খান, শ¤পা রেজা, আফসানা মিমি, নুরুল আলম আতিক, মাসুম রেজা, কামার আহমেদ সাইমন, অমিতাভ রেজা, পিপলু আর খান, মেজবাউর রহমান সুমন, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, গাউসুল আলম শাওন, ইরেশ যাকের, আজমেরী হক বাঁধন, জাকিয়া বারি মমসহ অনেকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন