কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে নিমিষেই কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, ব্র্যাক প্রি-প্রাইমারী স্কুল, মাদরাসা, মন্দিরসহ ৬০ পরিবারের বসতভিটা, আবাদি জমি ও আধা কিলোমিটার পাকা সড়ক নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ তাদের শেষ সম্বল সরিয়ে নিতে প্রানান্তর চেষ্টা করলেও পাউবো’র টনক নড়েনি। নেয়া হয়নি ভাঙনরোধে কোন পদক্ষেপ। কুড়িগ্রাম পাউবো’র মতে, আপোদকালীন প্রকল্পের মাধ্যমে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনরোধ করা সম্ভব নয়।
সরেজমিন গতকাল দুপুরে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ভাঙন কবলিত পশ্চিম বজরা, সাদুয়া দামার হাট, সাতালস্কর, কালপানি বজরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন তাদের শেষ সম্বল ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পাশ^বর্তি এলাকার উচু স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। এসময় পশ্চিম বজরা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, রন্জু মিয়াসহ অনেকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পশ্চিম বজরা কমিউনিটি ক্লিনিক, পশ্চিম বজরা জামে মসজিদ, পশ্চিম বজরা হাট, পশ্চিম কালপানি বজরা জামে মসজিদসহ একটি ঈদগাহ মাঠ, ব্র্যাক প্রি-প্রাইমারী স্কুল, পুরাতন বজরা কালী মন্দিরসহ ১০ একর আবাদি জমি ও বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে। পশ্চিম বজরা দাখিল মাদরাসা ভাঙনের মুখে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন এলাকাবাসি। বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়িসহ আবাদি জমি। পাউবো কর্তৃপক্ষ ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তিস্তা নদীর ভাঙনে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা, সাদুয়া দামার হাট ও কালাপানি বজরা গ্রামের ৬০টি পরিবার পরিবারের বসতবাড়ি, আধা কিলোমিটার পাকা রাস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পশ্চিম বজরা গ্রামের ভুক্তভোগীরা জানান, গত বছর থেকে এসব এলাকায় ভাঙন শুরু হলেও কর্তৃপক্ষ ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এ বছর ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। গত একমাসের ব্যবধানে ২ শতাধিক পরিবার বসতবাড়িসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে সাতালস্কর গ্রামটি নদীগর্ভে সম্পূর্ণরূপে বিলিন হয়ে গেছে। অনেকে অভিযোগ করে বলেন, তিস্তা নদীর অপর তীরে আলী বাবা থিম পার্ক নির্মান করায় ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
পশ্চিম বজরা দাখিল মাদরাসার সুপার মাও. রেফাকাত হোসেন বলেন, তিলে তিলে গড়া এ প্রতিষ্ঠান চোখের সামনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি রিলিফ চাই না, ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা চাই।
বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম সরদার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দফতরে ভাঙনের বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার বলেন, ভাঙনে বিষয়টি কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দফতরে জানানো হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভাঙনের তীব্রতার কারণে আপদকালীন প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়, তবুও আমরা কাজ করছি। ভাঙনরোধে প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে, অনুমোদন পেলে স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে কাজ শুরু হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন