মোহাঃ ইনামুল হক মাজেদী, গঙ্গাচড়া (রংপুর) থেকে
রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলায় দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দৈন্যদশা বিরাজ করছে। এর মধ্যে বড়রুপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁঁকি নিয়ে চলছে শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া চর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এবারের বন্যায় তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে। এ কারণে বিদ্যালয় দুটির সাড়ে ৫শ’ শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা বেকায়দায় পড়েছেন। উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের বড়রুপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করে। বর্তমানে যার প্রতিটি কক্ষের বিমে ফাটল ধরেছে এবং পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃষ্টি হলে পানি চুইয়ে পড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটি ইতিমধ্যেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তারপরও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সরেজমিন ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে নয়জন শিক্ষক ও ৩৭৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এ সময় বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহাগ মিয়া ও পুষ্প মনি বলে, প্রত্যেকদিন আমরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করি। চরম আতঙ্কে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। প্রধান শিক্ষক সুপর্ণা ভৌমিক বলেন, ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও জায়গা স্বল্পতার কারণে ঝুঁকি নিয়ে অফিস কার্যক্রম ও শ্রেণি পাঠদান চালাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে উপরের পলেস্তারা খসে পড়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহতের ঘটনা ঘটেছিল। তাছাড়া বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে উল্লেখ করে তিনি জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকবার অবহিত করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছাইয়াদুর রহমান বলেন, বিকল্প কোনো উপায় না পেয়ে পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আপাতত মেরামতের কোনো উপায় নেই। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ভবনের উপরের ছাদটি ভেঙে টিনসেড করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেকটাই তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এতে এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অনিশ্চতায় পড়েছে। এবারের বন্যায় বিদ্যালয়টি পানিতে তলিয়ে যায়। তিস্তার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথেই তীব্র ভাঙন দেখা দিলে বিদ্যালয়টির দুটি কক্ষ ও ল্যাট্রিন সম্পূর্ণ তিস্তায় বিলীন হয়। বিদ্যালয়ের বাকি অংশেও ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্তমানে ১৮০ জন শিক্ষার্থীর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানো হচ্ছে। চর চিলাখালের বাসিন্দা রফিকুল, বদরুল আলম, নুর ইসলাম, জয়নাল আবেদীন জানান, এই চরের একমাত্র বিদ্যালয়টি তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যালয়টি দ্রুত স্থানান্তরের দাবি জানান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বিদ্যালয় ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন