জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে রাখা সঠিক ছিল বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নানামুখী নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনলে, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে আপত্তি করবে না বলে মনে করছেন তিনি। বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচন স্বচ্ছ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখানে স্বাধীন। সকল আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করেই নির্বাচন হবে। বিদ্যুতের সঙ্কট আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে কেটে যাবে বলে আশা করেন তিনি।
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এ কথা বলেন। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেন করেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি হোসে ফার্নান্দেজের সঙ্গে আলাপে তার এই ‘উপলব্ধি’ হয়েছে। জ্বালানি তেলের দরবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, এনবিআরের পুরো ট্যাক্স কমালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর দরকার নেই, কিন্তু কর না দিলে বাজেট কী করে হবে? ফলে এনবিআরের ট্যাক্স কমিয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমানো যথাযথ না। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যে তেল বিক্রির দিকেই যেতে হবে।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, যুদ্ধের ফলে আমাদের মতো দেশগুলো যে অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে, সেই পরিস্থিতি আমি আন্ডার সেক্রেটারি ফার্নান্দেজের সঙ্গে বৈঠকে তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ যেটা হচ্ছে, সেটা উন্নয়নশীল দেশের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এটা উচিত হচ্ছে না। আমার মনে হয়েছে, আমেরিকার প্রশাসন এ বিষয়ে অবগত আছে। যুদ্ধের অভিঘাতকে কীভাবে সীমিত করা যায়, তারা সেটা ভাবছে। আমার নিজের ধারণা, এ যুদ্ধের প্রকোপ কমবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অর্জনকে একটা উদাহারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি (ফার্নান্দেজ)। আমি বললাম, উন্নয়নশীল দেশের উদাহরণ যদি হয়, তাহলে তো আমাদের আপানাদের সমর্থন দেয়া দরকার। আমাদের জ্বালানির দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। এটা কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই।
তিনি বলেন, খাদ্য, সার ও জ্বালানির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেয়নি। রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে জ্বালানি তেল আনার কথা ভাবছে সরকার। দেশের কিছু পক্ষ, কিছু কিছু মিডিয়া জ্বালানি সঙ্কটের বিষয়টিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলছে। এটা একদম তুল কথা।’ বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। সে সময় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা ঠিক করা হয়। এ ছাড়া প্রতি লিটার অকটেনের দাম ১৩৫ এবং পেট্রলের মূল্য ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ওই দর নির্ধারণের তিন সপ্তাহের বেশি সময় পর লিটারে ৫ টাকা কমানো হয় জ্বালানি তেলের মূল্য। নতুন এ মূল্য কার্যকর হয় ২৯ আগস্ট মধ্যরাত থেকে।
তিনি বলেন, তখন কথায় কথায় ফার্নান্দেজ বললেন, ফার্টিলাইজার, ফুড ও তেলের ওপর কোনো স্যাংশন নেই। আমি তখন সরাসরি প্রশ্ন করলাম, তাহলে আমরা কি অন্য জায়গা (রাশিয়া) থেকে ডিজেল আনতে পারব? কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দিলেন না। হ্যাঁ বললেন না, না-ও বললেন না। আমি সাধারণ মানুষ। আমি এটাকে হ্যাঁ ধরে নিয়েছি। এখন ডিপ্লোম্যাটরা বিস্তারিত বলতে পারবেন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্নভাবে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের ইউরোপীয় জোটের শরিকরা। বেশ কিছু পাল্টা নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে রাশিয়া। যুদ্ধ, পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার ফলে সারা বিশ্বে সার, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও খাবারের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। সঙ্কটময় বৈশ্বিক এ পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ।
রাশিয়ার ওপর সুইফটের নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম পরিশোধ সম্ভব না। রাশিয়া থেকে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে দাম পরিশোধের এ জটিলতা সমাধানে বিকল্প উপায় খুঁজতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তেল আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকি কমাতে এবং ডলার বাঁচাতে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করে। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিক ঘটনা হলেও আমাদের দেশের কিছু মানুষ এটাকে বাংলাদেশের সমস্যা হিসাবে উপস্থাপন করছে। এটা আমাদের এত বড় অর্জনকে আন্ডারমাইন করছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিনিয়োগ করতে চায়। ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন-ডিএফসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।
জ্বালানি তেলের দরবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তৌফিক বলেন, এনবিআরের পুরো ট্যাক্স কমালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর দরকার নেই, কিন্তু কর না দিলে বাজেট কী করে হবে? ফলে এনবিআরের ট্যাক্স কমিয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমানো যথাযথ না। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যে তেল বিক্রির দিকেই যেতে হবে। তার দাবি, বিশ্বের বর্তমান সঙ্কটে অনেক দেশ পড়ে যাবে; কিন্তু বাংলাদেশ টিকে যাবে। বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে দেশটির আন্ডার সেক্রেটারি জোসেফ ফার্নান্দেজের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তৌফিক ইলাহী।
সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি সচিব মো. মাহবুব হোসেন ছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন