বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

একদল ‘লিথালের’ গল্পের পরিসমাপ্তি!

| প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ক্লাসে সামনের আসনে বসা নিয়ে প্রথম দিনেই সমস্যার শুরু হয়েছিল। স্নাতকের প্রথম ক্লাস শেষে সামনে গিয়ে একদল শিক্ষার্থী অন্যদের বলল, ‘একসাথে ক্লাস করলেও আমরা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমাদের থেকে এক বছর আগে এসেছি। সামনে আর পেছনের দুইটা সারি ছেড়ে দিয়ে বসবে তোমরা।’ নতুনদের বুঝতে বাকি রইল না, এঁনারা দ্বিতীয়বার মেডিকেল কলেজে ভর্তির বিফল চেষ্টা করে এক বছর গচ্চা দিয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিখিত নিয়মানুসারে একসাথে ক্লাস করলেও জ্যেষ্ঠদের সম্মান করতে হবে। যাই হোক, সেই থেকে নতুন আর পুনঃভর্তির মধ্যে ছোট-খাটো সমস্যা লেগেই থাকত।
সব মিলে ক্লাসে আমরা ‘লিথাল’-এর মতো ছিলাম। লিথাল জিন যেমন কারো সাথে অবস্থান করলে তার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে দেয় না বা তাকে ধ্বংস করে দেয়। নতুনদের কাছে আমাদের ব্যাপারটা ঠিক তেমনই। এটা লিথাল চিন্তাবিদ নাহিদুলের অভিমত। আর কাকতালীয়ভাবে আমাদের ব্যবহারিক গ্রুপের নাম ‘এল’। সেই থেকে বিনা বিজ্ঞাপনে আমাদের গ্রুপকে সকলে ‘লিথাল’ বলেই চিনে।
সাতজন ছাত্রীসহ লিথালদের সংখ্যা ২২। সকল বিষয়ে পারদর্শিতার দরুন বিশ্ববিদ্যালয়ে লিথালদের এক অন্যরকম সুনাম রয়েছে। প্রথম শ্রেণীতে প্রথমসহ রয়েছে ব্যাচের সবচেয়ে কম ফলধারীও। তা ছাড়া প্রযুক্তিবিদ, ইতিহাসবিদ, বিতার্কিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। অবশ্য শুরুর দিকে লিথালদের সম্পর্কে সবার ধারণা এ রকম ছিল না। পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি, দুষ্টু আর পরীক্ষা পিছানোর হোঁতা হিসেবে আমাদের দায়ী করা হতো। শিক্ষকেরা এ গ্রুপটিকে দায়িত্ব দিতে সাতবার ভাবতেন, দ্বিধাবোধও করতেন। অবশ্য সময়ের সাথে সাথে সবার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। মূল কারণ ছিল সবক্ষেত্রে ‘লিথাল’ সদস্যদের সরব পদচারণা।
লিথালদের মধ্যে মিনিস্টার (্ওমর), কাফি, স্বপন, রিয়াদ এবং ইমরানকে চিনে না বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন লোকের সংখ্যা কম। তবে বিশেষভাবে ‘ভাইয়া’ নামে পরিচিত ছিল আমাদের জসীম। ব্যবহারিক ক্লাসের ‘লেট বয়’ নাইম। তত্ত্বীয় ক্লাসে ‘লেট গার্ল’-এর সুনাম দীর্ঘ নামের অধিকারিণী তমানিনা বিনতে রহমতুল্লাহ ওরফে চেরী। এরা ক্লাসে ঢুকলে মোটামুটি ধরে নেয়া হতো আর কেউ বাকি নাই।
প্রযুক্তিগত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের একমাত্র ভরসা লিথাল সদস্য আশিক। লিথালদের গর্ব আহাদের কথা না বললেই নয়। তার কাজের জন্য পুরো ক্যাম্পাসে বেশ পরিচিত সে। দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই সে একটা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ক্যাম্পাসের সুদর্শন ছেলেদের মধ্যে লিথাল সদস্য মাহমুদুল হাসান লিখন আর মাসরুর হোসেন রিফাত অন্যতম। প্রান্তবন্ত ও অতিভদ্র  সদস্য আবুল হাসান ফয়সাল। এ তালিকার নাহিদুল ইসলাম, গৌতম রায়ও লিথালের অন্যতম সদস্য।  
লিথালদের সাত মেয়ে সদস্যের অবদান আজীবন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ রাখবে ছেলে সদস্যরা। পরীক্ষার আগে ক্লাস খাতা কিংবা সাজেশন দিয়ে এরাই প্রতিটি ছেলের গ্র্যাজুয়েশনের পেছনে অবদান রেখেছে। মেয়েদের কথা বলতে গেলে প্রথম উঠে আসে নাহিদ আক্তার ইরানীর কথা। ওকে সুপার কম্পিউটার বললেও ভুল হবে না। ও পুরো ব্যাচের মধ্যেই প্রথম। দুইটা সেমিস্টারে ৪ মিস না হলে সিজিপিএ ৪রই থাকত। ইতোমধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্যে জার্মানি চলে যাওয়ার প্রস্তুতিতে সেরে ফেলেছে সামিহা সিদ্দিকী পিংকি। আরো রয়েছে নিশি, রিনি, স্বর্ণা এবং মনি। যাদের নীরব পদচারণা আর অধিক সাহায্য প্রবণতার কথা কখনো ভুলবার নয়।
আনুষ্ঠানিক পড়াশোনার সমাপ্তি হয়েছে অনেক আগেই। কয়েকদিন আগে ¯œাতকের ফাইনাল পরীক্ষাও শেষ করলাম। এখন আর লিথাল সদস্যদের এক সাথে ক্লাস করা হবে না। ব্যবহারিক ক্লাসে বসে গল্প করাও হবে না। আমার বিশ্বাস বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যেমন সবদিকে চষে বেড়িয়েছি, ভবিষ্যতেও আমরা সবক্ষেত্রে এগিয়ে থাকব। একজন ‘লিথাল’ সদস্য হতে পেরে গর্ব বোধ করছি।
ষ আহমেদ শাহরিয়ার অনিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন