উত্তরের ঠান্ডা হাওয়া আছে, আছে এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে থাকা কিছু বিচ্ছিন্ন কুয়াশা, অনন্য হেমন্ত বলে কথা! তার মাঝে যদি থাকে চাঁদ, ঝকঝকে জোছনা, কি এক অপরূপ সৌর্ন্দয তা ভাবতেই ভালো লাগে। হেমন্তের এই জোছনা কবিদের উদ্বেলিত করবেনা তা কি হয়? কবিদের এই আনন্দকে উৎসবে পরিণত করতে ‘উড়–ক উড়–ক তারা হৃদয়ের শব্দহীন জোছনার ভিতর’ স্লোগানকে সামনে রেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য সংগঠন চিরকুটের আয়োজনে ৬ নভেম্বর, রোববার এক মনোমুগ্ধকর আয়োজনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জোছনায় কবি ও কবিতা শীর্ষক অনুষ্ঠান, যেখানে অংশগ্রহণ করেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শতাধিক কবি, সাহিত্যিক ও সাহিত্যপ্রেমী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা অনুষদের ইংরেজি বিভাগের ১০২ নং রুমে সন্ধ্যা ছয় ঘটিকার সময় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়ে চলে প্রায় রাত দশটা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি খালেদ হোসাইন এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরের সুপারি বাগানে, যেখানে বসে দীঘির পানিতে আছড়ে পড়া জোছনার নাচন দেখা যায়, কিন্তু নভেম্বর রেইন এখানে বেরসিক তাই বিল্ডিংয়ের ভেতরেই করতে হলো জোছনা বিলাস! তবে আবহের কোনো ঘাটতি ছিলনা। চিমনি দিয়ে ঢাকা মোমবাতির মিহি আলো, প্রাঞ্জল সাজসজ্জ্বা জোছনাকে যেন হাজির করে দেয় বিল্ডিংয়ের ভেতরেও। অনুষ্ঠানের পূর্বে অনুষদের সামনে ফুল দিয়ে চিরকুট লিখে তার মাঝে প্রদীপ জ¦ালিয়ে কবিদের অভর্থনা জানানো হয়, বাঁশির সুরে তৈরি হয় কাব্যিক আবহের। পাটের চটে লিখে তৈরি করা নান্দনিক ব্যানারও মুগ্ধ করে সবাইকে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, খালেদ হোসাইন, শামীম রেজা, আহমেদ রেজা, শোয়াইব জিবরান, মামুন রশীদ, মজিদ মাহমুদ, ফরিদ কবির, মাসুদুজ্জামান, চঞ্চল আশরাফ, মুজিব মেহেদী, মুম রহমান, সঞ্জীব পুরোহিত, সাকিরা পারভিন, নওশাদ জামিল, রেজাউল করিম মৃদুল, মঈন মুনতাসীর, আসমাউল বিশ^াস, হামীম কামরুল হক, অনন্ত সুজন, মাজুল হাসান, নওশাদ জামিল, আহমেদ স্বপন মাহমুদসহ আরো অনেকে। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন কবি তসলিম হাসান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন আহ্বায়ক জুলফিকার রবিন। দীর্ঘ চার ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পড়েন প্রায় ৫২ জন কবি। এরই ফাঁকে ফাঁকে কবিতা নিয়ে চলে নাতিদীর্ঘ আলোচনাও।
কবিদের আপ্যায়ন করা হয় মাটির শানকিতে মুড়ি, খই, সন্দেশ, খুরমা, বাতাশা, যা অনুষ্ঠানটিতে যুক্ত করে বাড়তি নান্দনিকতা। অনুষ্ঠানে আগতদের উপহার দেয়া হয় চিরকুটের বিভিন্ন প্রকাশনা। অনুষ্ঠানে মুগ্ধ হয়ে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেনÑ ‘জাহাঙ্গীরনগর কবিতার জন্য একটি সুন্দর জায়গা। আমরা যেখানে আমাদের অতীতকে ভুলে গিয়ে গ্রাম থেকে শহরে এসে নাগরিক কবি হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত, সেখানে জাহাঙ্গীরনগরের কবিতার টোন সম্পূর্ণ আলাদা, সুন্দর। এর কারণটা হচ্ছে এর কাব্যিক পরিবেশ, কাব্যিক আবহাওয়া। সেখানে চিরকুট সাহিত্য নিয়ে এতবড় কাজ করে যাচ্ছে যা আসলে সত্যিই অনেক ভালোলাগার বিষয়, এজন্য তারা ধন্যবাদের যোগ্য।’ অনুষ্ঠানের সভাপতি কবি খালেদ হোসাইন বলেনÑ ‘এত দীর্ঘক্ষণ ধরে যে কবিতার অনুষ্ঠান চলছে, এতক্ষণ বসে থেকেও যেন খুব একটা খারাপ লাগছে না, কারণ একসাথে এত কবির কবিতা শোনা আসলেই একটি বিরাট অভিজ্ঞতা। নতুনদের কবিতা নিয়েও আমি বেশ আশাবাদী। সাহিত্য নিয়ে চিরকুটের এসব প্রয়াসের সাথে সবসময় ছিলাম, সবসময় পাশে থাকব। এরপর চিরকুটের নতুন কমিটি ২০১৬-১৭ ঘোষণা করেন সম্পাদক আনজুম সানি। চিরকুটের নতুন সভাপতি হিসেবে জুলফিকার রবিন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হাসানুজ্জামিল মেহেদীর নাম ঘোষণা করা হয়। চিরকুটের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সম্মানিত করা হয় কবি শামিম রেজাকে। সর্বশেষ অধ্যাপক আহমদ রেজার সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
ষ হাসানুজ্জামিল মেহেদী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন