গত কয়েকদিনের ঘটনার বিশ্লেষণ করে পর্যবেক্ষকদের এটাই মনে হয়েছে বগুড়ায় বিএনপির রাজনীতি ব্যাকফুটে চলে গেছে। বিএনপির ঘাটি খ্যাত বগুড়ার এই চিত্র দলের তৃণমূল কর্মী, অনেক সমর্থক ও শুভাকাঙ্খীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়া বিএনপির কয়েকজন নেতা ঘটনার বিশ্লেষণ করে বলেন, বগুড়ায় জেদাজেদি করে রাজনীতির মাঠ দখলে লাভ কি? এতে তো সরকারের পতন ঘটবে না।
অপরদিকে কেউ কেউ অবশ্য এটাও বলেন, সবই লিয়াজোঁ রাজনীতি। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী গত শুক্রবার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচকের একটি বিরাট জনসভার কিছু ঘটনা বর্ণনা করেন। ওই জনসভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক রিজভী আহম্মেদ প্রধান অতিথি ছিলেন। জনসভা ভন্ডুল করার জন্য শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পুলিশ যেভাবে আক্রমনাত্মক আচরণ সিনিয়র নেতা ও সাংবাদিক এবং জনসাধারণের সাথে করেছে সেটা ছিলো যেমন উদ্বেগজনক তেমনি ভয়াবহ।
শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, প্রথমে জনসভাটি শিবগঞ্জ উপজেলার সেন্ট্রাল প্লেস আলিয়ার হাটে নেওয়া হয়। পরে চাপের মুখে জনসভাস্থল কিচক এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তারপরও পড়ন্ত বেলায় অনুষ্ঠিতব্য ওই জনসভাটি যাতে ভন্ডুল হয়ে যায় সেজন্য পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন ৫০টির মতো স্থানে চেকপোস্ট বসিয়েছিল। কোন যানবাহনকেই জনসভার দিকে যেতে দেওয়া হয়নি।
এমনকি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যাওয়ার পথে কয়েকজন সাংবাদিক পুলিশের হাতে চরমভাবে নাজেহাল হন। জনসভায় বগুড়া থেকে যোগ দিতে যাওয়া সিনিয়র নেতা ও বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল করিম বাদশা, আলী আজগর তালুকদার হেনা, ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল এবং মাফতুন আহম্মেদ রুবেলদের বহনকারী মাইক্রোবাস আটকে দেওয়া হয় জনসভাস্থলের ৫ কিলোমিটার আগেই। পরে বাধ্য হয়ে নেতৃবৃন্দ মাইকোবাস থেকে নেমে হেঁটে জনসভাস্থলে যান।
বিএনপি নেতারা অবশ্য এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যু না বানিয়ে চেপে যাওয়াকেই শ্রেয়তর মনে করেছেন। একটি সূত্র জানায়, বিএনপির ওই জনসভার আয়োজক শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী মীর শাহে আলমের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দী শিবগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও শিবগঞ্জ পৌর মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক নিজের যোগ্যতা জানাতেই এতকিছু করেছেন।
এদিকে একইদিন বগুড়া শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় শহর বিএনপির একটি পথসভা ছিলো। এই সভাস্থলেই জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকেও পাল্টা সভা ডাকা হয়। ফলে পুলিশ সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা বানচাল করে দেয়। এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বগুড়া সদর আসনের বিএনপির এমপি এবং দলের সদ্য বিদায়ী জেলা আহ্বায়ক জিএম সিরাজ।
এখানেও বিএনপি কোন শব্দ না করে নিশ্চুপ থাকলেও যুবলীগ জেলা শাখার সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন তার দলবল দিনভর টহল দিয়ে বেড়ান। এই ওয়ার্ডেই বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশার বাড়ি। এই ঘটনাকে বিএনপির জন্য ভীষণ পীড়াদায়ক ও লজ্জাজনক বলে মনে করছেন নেতা কর্মী ও সমর্থকরা।
বিএনপি’র এক নেতা অবশ্য বলেন, বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশার আপন ছোট ভাই বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলমের রাজনৈতিক অফিসও এই ওয়ার্ডে। সে জন্যই হয়তো এখানে দুই ভাইয়ের লিয়াজোঁ কাজ করে থাকতে পারে।
গত শুক্রবার বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাকুল্যা ইউনিয়নে বিএনপির একটি আঞ্চলিক জনসভা ছিলো। সেই জনসভার প্রধান অতিথি ছিলেন জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন চৌধুরী। জনসভার দু’দিন আগে মোশাররফ হোসেন চৌধুরীর ঢাকার বাসভবনে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশী চালিয়ে ত্রা সৃষ্টি করে। মোশাররফ হোসেন চৌধুরী আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী বিধায় তিনি যেমন এলাকায় প্রবেশ করতে না পারেন পুলিশী হয়রানির এটাই আসল কারণ বলে মনে করে তার সমর্থকরা। তবে অত্যন্ত সাহস ও বিচক্ষণতার সঙ্গে মোশাররফ চৌধুরী ওই সভায় যোগদান করেন।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় গত সপ্তাহ থেকেই বিএনপি কোন সভা সমাবেশই করতে পারছে না। নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা এ প্রসঙ্গে বলেন, নন্দীগ্রামে আওয়ামী লীগ কোন সন্ত্রাস করছে না। উল্টো বিএনপি এমপি মোশাররফ হোসেন দলে গ্রুপিং সৃষ্টি করে প্রাইভেট সংগঠন করে নিজেকে দুর্নীতিগ্রস্থ করেছেন। ফলে রাজনীতির মাঠে তার প্রাইভেট বাহিনী দাঁড়াতেই পারছে না।
নন্দীগ্রামের পাশে শাজাহানপুর উপজেলায় দলে কোটারী গ্রুপ তৈরি করে প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের দল থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করছে। ফলে এখানে আওয়ামী লীগের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ছে বিএনপি। এই অভিমত বিএনপি নেতা কর্মীদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন