মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সীমান্তের কাছে। এতে পুলিশের ১৯ সদস্য নিহত হয়েছেন। এরপর আরাকান আর্মির ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। মিয়ানমার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতী এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাখাইনে বুধবার আরাকান আর্মি ১৯ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। এছাড়া রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াইয়ে থাকা বিদ্রোহী সংগঠনটি পুলিশ ফাঁড়িও দখল করে নিয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বৃহস্পতিবার জান্তা সরকার এলাকাটিতে হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে হামলা শুরু করে। তবে মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ২টি গোলা বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরেও পড়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রেজু আমতলী বিজিবি বিওপি আওতাধীন সীমান্ত পিলার ৪০-৪১ এর মাঝামাঝি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অপর এক খবরে বলা হয়, বিদ্রোহের আগুনে জ্বলতে থাকা মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্বের রাজ্য কায়াহতেই গত ১৫ মাসে জান্তা সরকারের অন্তত ১৫০০ সৈন্য নিহত হয়েছে। আর এ সময়ের মধ্যে প্রাণ গেছে ১৫০ জন প্রতিরোধ যোদ্ধারও। শনিবার মিয়ানমারের স্থানীয় দৈনিক দ্য ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, দেশটির সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গত বছরের মে মাস থেকে রাজ্যটিতে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানে তীব্র গোলাগুলি এবং ভারী বিমান ও কামান হামলা প্রায় প্রতিদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারেনি ন্যাশনালিস্ট ডিফেন্স ফোর্স (কেএসডিএফ), কারেনি ন্যাশনাল প্রোগ্রেটিভ পার্টির সশস্ত্র শাখা- কারেনি আর্মি (কেএ) এবং আরো বেশ কয়েকটি পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) যৌথভাবে কায়াহতে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এ গ্রæপগুলো পার্শ্ববর্তী শান রাজ্যেও একই ধরনের প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রোগ্রেসিভ কারেনি পিপল ফোর্স (পিকেপিএফ), যাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ রয়েছে, বৃহস্পতিবার বলেছে, কায়াহতে গত ৩১ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪৯৯ জন সরকারি সৈন্য ও ১৫১ জন প্রতিরোধ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে ৪৫৪টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ নাগরিক ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের লক্ষ করে ১৫৮টির মতো বিমান হামলা চালিয়েছে সরকারি বাহিনী। পিকেপিএফ বলেছে, জান্তা বাহিনী গত ১৫ মাসে অন্তত ২৬১ জন সাধারণ নাগরিক ও ৬১ জন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত (আইডিএফ) ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। এছাড়া গ্রেফতার করেছে ২৬১ জনকে। রাজ্যটিতে সরকারি বাহিনীর বিমান ও কামান হামলা, অগ্নিসংযোগ ও আক্রমণে ধ্বংস হয়েছে ১ হাজার ১৮০টির মতো বাড়ি ও ২৫টি ধর্মীয় স্থাপনা। বর্তমানে কায়াহর প্রায় ২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে আছে। জান্তা সরকার সরবরাহ রুটগুলো অবরুদ্ধ করে রাখায় বাস্তুচ্যুত লোকগুলো খাদ্যসঙ্কটে ভুগছে। সেন্ট্রাল রেজিওন স্পেশাল অপারেশন গ্রæপ নামে আরেকটি বিদ্রোহী গ্রæপ শুক্রবার জানিয়েছে, কায়াহতে কেএনডিএফ, কেএ ও পিডিএফের যৌথ আক্রমণে গত ১৬ থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে ৬১ জন জান্তা সৈন্য নিহত হয়েছে। এ নিহতদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা ও ছয়জন স্নিপার (বন্দুক চালনায় বিশেষ পারদর্শী) রয়েছে, জানায় গ্রæপটি। জান্তা সরকার কায়াহতে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে। এরা গ্রামগুলোতে ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অবস্থানে অভিযান চালাচ্ছে। সরকারি সৈন্যরা পিডিএফ ও অন্যান্য নৃতাত্তি¡ক সশস্ত্র সংস্থাগুলোর হাতে কায়াহসহ মিয়ানমার জুড়ে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে। ইরাবতী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন