তুরস্কের প্রতি গ্রীসের সম্ভাব্য হুমকির প্রতিক্রিয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান মঙ্গলবার তার সতর্কতা দ্বিগুণ করে বলেছেন, তুরস্কের বাহিনী ‘হঠাৎ কোনো এক রাতে’ চলে আসতে পারে তার মানে হচ্ছে তার প্রতিবেশীর উপর তুরস্কের আক্রমণকে নিছক উড়িয়ে দেয়া যায় না। ন্যাটো মিত্রের বিরুদ্ধে তুরস্কের সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, এরদোগান এভাবেই তার অভিব্যক্তিটি আবারো পুনর্ব্যক্ত করেন। বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি যা বলছি, তা স্বপ্ন নয়। যেমনটা আমি বলেছিলাম যে আমরা হঠাৎ করে যেকোনো এক রাতে আসতে পারি (এর মানে) সময় হলে, সত্যিই হঠাৎ যেকোনো আক্রমণ শুরু হয়ে যেতে পারে।’ তুরস্ক এবং গ্রীসের মধ্যে এজিয়ান সাগরের আঞ্চলিক দাবি এবং সেখানকার আকাশসীমা নিয়ে মতবিরোধসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গত কয়েক দশকের পুরনো বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে গত অর্ধশতাব্দীতে অন্তত তিনবার যুদ্ধের প্রায় দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিল দেশ দুটি। আঙ্কারা বলেছে, গ্রীস তুরস্কের এজিয়ান উপক‚লরেখার কাছাকাছি দ্বীপগুলোকে সামরিকীকরণ করে আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করছে। তারা পূর্ব ভ‚মধ্যসাগরে ন্যাটোর মহড়া চলাকালীন গ্রীক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তুরস্কের যুদ্ধবিমান আটকানোর অভিযোগও করেছে। তবে এথেন্স তুরস্কের বিরুদ্ধে তাদের আকাশসীমা লংঘনের পাল্টা অভিযোগ করেছে। বসনিয়ার প্রেসিডেন্টের তিনজন প্রতিনিধির পাশাপাশি বসে এরদোগান আরো বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অবৈধ হুমকি দেয়া হচ্ছে এবং যদি এই অবৈধ হুমকিগুলো চলতে থাকে, তবে তাদের মনে রাখা উচিত, আমাদেরও ধৈর্যের একটা সীমা আছে।’ ‘যখন সময় হবে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ আমাদের বিমানগুলোকে তাদের রাডারে সংযুক্ত করে রাখা মোটেও ভালো কোনো লক্ষণ নয়। গ্রীসের নেয়া এমন পদক্ষেপও ভালো লক্ষণ নয়। ভয়েস অফ আমেরিকা। অপর এক খবরে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার প্রতিশোধ হিসেবে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রবাহ কমিয়ে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ইউরোপ ‘যা বপন করেছে এখন তারই বিনিময় পাচ্ছে’। ইউরোপে গ্যাস সমস্যার জন্য ক্রেমলিনের সুরেই সুর মিলিয়েছেন এরদোগান। তিনি ইউরোপের জ্বালানি-সংকটের জন্য রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেন। ‘ইউরোপ আসলে যা বপন করেছে এখন সেই ফসলই কাটছে,’ মঙ্গলবার আঙ্কারায় সাংবাদিকদের এরদোগান বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা পুতিনকে গ্যাস সরবরাহ ব্যবহার করে প্রতিশোধ নিতে বাধ্য করেছে। এরদোগান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। একই সঙ্গে তিনি সংঘাতে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন। এরদোগান বলেন, ‘পুতিনের প্রতি ইউরোপের আচরণ, তাদের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা পুতিনকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এটা বলতে বাধ্য করেছে যে তোমরা যদি এটা করো, তবে আমি ওইটা করব। পুতিন তার সবকিছু ও অস্ত্র ব্যবহার করছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসও তার একটি।’ এদিকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে না নিলে ইউরোপে গ্যাস দেওয়া হবে না। নর্ড স্ট্রিম-১ নামের পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওই পাইপলাইনে তিন দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল রাশিয়া। মস্কো এখন পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করে বলছে, এসব দেশের জন্যই ইউরোপে পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করছে তারা। নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলে রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ক্রেমলিনের এক মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘অবশ্যই’। ভিওএ, রয়টার্স, বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন