মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পিবিআই প্রধানসহ ৬ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাবুল আক্তারের মামলার আবেদন

হেফাজতে নির্যাতন

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার আবেদন করেছেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জেবুন্নেছা বেগমের আদালতে মামলার আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আদালত ১৯ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আদেশের দিন নির্ধারণ করেছেন বলে জানিয়েছেন আদালতের পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী।

মামলার বাদী বাবুল আক্তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। আবেদনে আরও যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন- পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার মো. নাজমুল হাসান, মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা, পিবিআইয়ের সাবেক পরিদর্শক বর্তমানে খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ সন্তোষ কুমার চাকমা ও বর্তমানে সহকারী পুলিশ কমিশনার (পাহাড়তলী জোন) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম এবং পিবিআইয়ের জেলা পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবির।

বাদীপক্ষের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ জানান, অভিযোগে ঘটনার সময় উল্লেখ করেছেন ২০২১ সালের ১০ মে সকাল পৌনে ১০টা থেকে ১৭ মে বেলা ১টা পর্যন্ত পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো অফিস। মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুলের দায়ের করা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা তাকে হোয়াটস অ্যাপে কল দিয়ে বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশের কথা বলে পিবিআই অফিসে আসার জন্য বলেন। ১০ মে তিনি চট্টগ্রামে পৌঁছে পিবিআই অফিসে সন্তোষের কক্ষে যান। সেখানে সাতজনকে আসামি করে একটি খসড়া অভিযোগপত্র তাকে দেখান সন্তোষ। পরে তাকে এসপি নাঈমা সুলতানার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জেলার এসপি নাজমুল হাসানসহ ১০-১৫ জন অফিসার ছিলেন। নাজমুল বাবুলকে বলেন, তোমাকে আমার অফিসে যেতে হবে। বনজ স্যারের নির্দেশ।

সন্তোষ ও মহিউদ্দিন সেলিম বাবুলকে জোরপূর্বক দুইতলা থেকে নিচে নামিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে মেট্রো অফিস থেকে খুলশীতে পিবিআইয়ের জেলা অফিসে নিয়ে যান। সেখানে তাকে একটি কক্ষে রাখা হয়। বাবুল মোবাইল বের করে তার ভাই সাহাবুল হকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে এসপি নাজমুল মোবাইল কেড়ে নেন। বাবুল জানতে চান তাকে কেন সেখানে নেয়া হয়েছে। তখন নাজমুল বলেন, এবার তোরে মজা দেখাবো। কোনো বাপ এবার তোরে বাঁচাতে পারবে না। এরপর এনায়েত কবীর কিছুক্ষণ গালিগালাজ করেন। মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, বনজ স্যার চাইলে বাঘে মহিষে একঘাটে পানি খায়। আপনি কোনোভাবে বাঁচতে পারবেন না। আপনাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতেই হবে। না দিলে আরও বড় বিপদে পড়বেন। আপনার পরিবারের সদস্যদের ডিস্টার্ব করব। তখন বাবুল কান্না করতে থাকেন।

আবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, ৫৩ ঘণ্টা পিবিআই অফিসে আটকে রেখে সাদা কাগজে ও বিভিন্ন বইয়ের পাতায় বাংলা ও ইংরেজিতে নাজমুল ও নাঈমার বলা বিভিন্ন কথা সন্তোষ কুমার চাকমা বাবুলকে লিখতে বাধ্য করেন। ১০ মে সন্ধ্যায় সন্তোষ আবার বাবুলের কক্ষে ঢুকে বলেন, আপনার মামলা শেষ। আপনার বিরুদ্ধে এখন নতুন মামলা হবে। বনজ স্যার আপনার শ্বশুরের বাসায় পিবিআইয়ের গাড়ি পাঠিয়েছে। আপনার শ্বশুর আসলে তাকে দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দেয়া হবে। আপনি যদি এখন বলেন, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেবেন, তাহলে আপনাকে রিমান্ডে নেয়া হবে না। না দিলে জবানবন্দি কীভাবে নিতে হয় আমাদের জানা আছে। এরপর নাঈমা, নাজমুল ও একেএম মহিউদ্দিন সেলিম গিয়ে তাকে আবার ভয়ভীতি দেখান।

১৬ মে জবানবন্দিতে বাবুল কী বলবেন সেটা একটি কাগজে লিখে তাকে পড়ে শোনানো হয়। সন্তোষ কুমার চাকমা ও মহিউদ্দিন সেলিম কয়েকটি কাগজে বাংলা ও ইংরেজিতে স্বাক্ষর নেন। বনজ মজুমদারের নির্দেশের কথা বলে ক্যামেরায় রেকর্ড করে তার জবানবন্দি নেয়ার চেষ্টা করেন এই দুই পিবিআই অফিসার। দু’জন সাবেক সিনিয়র অফিসারের নাম জড়িয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে বলা হয়। ১৭ মে সকাল ১০টায় তাকে একটি প্রাইভেটকারে করে আদালতে নেয়া হয়। সরকারি গাড়ি ব্যবহার না করে একটি খয়েরি রংয়ের কারে করে নেয়া হয়, যাতে মহিউদ্দিন সেলিম ও দু’জন পিবিআই সদস্য ছিলেন। যেতে যেতে মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, জবানবন্দি না দিলে আপনার অবস্থা কী হবে আল্লাহ জানেন, হয়তো আর কোনোদিন বাচ্চার মুখ দেখবেন না। কিন্তু এরপরও তিনি জবানবন্দি আদালতে দেননি।

বাবুলের অভিযোগ, পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের প্ররোচনায় ও নির্দেশে বাকি পুলিশ কর্মকর্তারা ১০ মে সকাল ১০টা থেকে ১২ মে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রেখে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ভয়ভীতি দেখায়, লাঞ্ছিত করে এবং নির্যাতন করে। তিনি পুলিশ নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থার বাইরে অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছেন আবেদনে। বাবুল আক্তার এখন কারাবন্দি থাকায় মামলার আবেদনে স্বাক্ষর করতে পারেননি। মামলার আবেদনে স্বাক্ষর এবং ২০০ ধারায় জবানবন্দি নেয়ার জন্য বাবুলকে আদালতে হাজিরেরও আবেদন করেছেন আইনজীবী। এতদিন পরে মামলা কেনো এ প্রশ্নের জবাবে বাবুল আক্তারের আইনজীবী আহমেদ কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা পুলিশের কর্মকর্তা। তাই ভয়ে এতদিন মামলা করেননি। তবে জিজ্ঞাসাবাদে বাবুলকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন