শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ব্রিটেনের আনুষ্ঠানিক রাজা হলেন চার্লস

বদলে যাবে জাতীয় সঙ্গীতসহ অনেক কিছু : শেষকৃত্যে যোগ দেবেন বাইডেন : রানির ৫০ কোটি ডলারের উত্তরাধিকারী তৃতীয় চার্লস

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সেন্ট জেমস প্যালেসে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তৃতীয় চার্লসকে ব্রিটেনের রাজা ঘোষণা করা হয়েছে। চার্লসের মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরপরই তিনি রাজা হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে যান, তবে গতকাল শনিবার সকালে ঐতিহাসিক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন রাজা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

অ্যাকসেশন কাউন্সিল হিসেবে পরিচিত তার সিংহাসনে আরোহণ সংক্রান্ত এক পরিষদে রাজা তৃতীয় চার্লস সদ্যমৃত রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। তবে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কবে হবে তা এখনও জানা যায়নি।

সিংহাসনে আরোহণের এ অনুষ্ঠানের শুরুতে রাজা উপস্থিত না থাকলেও পরে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে যোগদান করেন। এসময় তিনি প্রিভি কাউন্সিলের সঙ্গে তার প্রথম বৈঠকটি করেন। শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এ প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য যারা রাজাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রিভি কাউন্সিলের কর্মকর্তা রিচার্ড টিলব্রুক চার্লসকে রাজা হিসেবে ঘোষণা করে বলেন, ‘রাজা, কমনওয়েলথের প্রধান, ধর্মবিশ্বাসের রক্ষক’ এবং তার পরেই তিনি বলেন, ‘গড সেভ দ্য কিং’। তৃতীয় চার্লসকে রাজা হিসেবে ঘোষণার সময় প্যালেসের কক্ষটি ছিল জনাকীর্ণ। অনুষ্ঠানে শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ, বিচারক এবং কর্মকর্তারাও যোগদান করেন।

এসময় রাজা তৃতীয় চার্লস বলেন, তার মায়ের মৃত্যুর খবরটি ঘোষণার ‘অত্যন্ত দুঃখজনক দায়িত্বটি’ তার ওপর পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আপনারা, পুরো জাতি এবং আমি বলবো পুরো বিশ্ব আমাদের এরকম এক অপূরণীয় ক্ষতিতে কতোটা গভীরভাবে সহানুভূতি প্রকাশ করছে’। এসময় তিনি রানির উদাহরণ অনুসরণ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
প্রিভি কাউন্সিলের প্রায় দু’শ সদস্য অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, থেরেসা মে, ডেভিড ক্যামেরন, গর্ডন ব্রাউন, টনি ব্লেয়ার এবং জন মেজর।

চার্লসকে রাজা হিসেবে ঘোষণার আগে প্যালেসে ট্রাম্পেট বাজানো হয় এবং ঘোষণার সাথে সাথে হাইড পার্ক এবং টাওয়ার অব লন্ডনে তোপধ্বনি করা হয়। চার্লসকে রাজা হিসেবে ঘোষণার পর সেন্ট জেমসেস প্যালেসের বাইরে সমবেত কয়েক হাজার জনতা করতালি ও হর্ষ-ধ্বনি সহযোগে ‘গড সেভ দ্য কিং’ জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে ওঠেন। এবারই প্রথম সিংহাসনে আরোহণ সংক্রান্ত পরিষদের সভায় টেলিভিশনের ক্যামেরা ঢুকতে দেওয়া হয় এবং রাজা তৃতীয় চার্লস নিজেই এ সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে সারা দেশের জনগণ টেলিভিশনের পর্দায় এ পরিষদের কার্যক্রম সরাসরি দেখতে পায়।

বিবিসির রাজ-পরিবার বিষয়ক সংবাদদাতা সিন কফলান বলছেন, নতুন রাজা তার মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান, আবার একই সময়ে তাকে তার নিজের শাসনকালও শুরু করতে হয়েছে। অ্যাকসেশন কাউন্সিলের সামনে রাজা চার্লস ঘোষণা করেন যে, একজন রাজা হিসেবে তিনি তার বাকি জীবন উৎসর্গ করে যাবেন। রাজা তৃতীয় চার্লস এখন ব্রিটেনের রাষ্ট্রপ্রধান যার শপথ-গ্রহণ ও স্বাক্ষর-দানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। তিনি যে কালি দিয়ে সই করেছেন তার দোয়াতটি তার দুই ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্স হ্যারি তার হাতে তুলে দেন।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত রানি : রানির কফিন লন্ডনে এসে পৌঁছার পর তার লাশ শায়িত রাখা হবে ওয়েস্টমিনস্টার হলে। শেষকৃত্য সম্পন্ন হবার আগে চারদিন তার লাশ সেখানে থাকবে যাতে সাধারণ মানুষ রানিকে তাদের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে। ব্রিটিশ সরকারের প্রাণকেন্দ্র ওয়েস্টমিনস্টার প্যালেসের সবচেয়ে পুরনো অংশে অবস্থিত বিশাল এ হলঘর ওয়েস্টমিনস্টার হল।

রাজপরিবারের শেষ যে সদস্যের লাশ ২০০২ সালে এই হলঘরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাখা হয়েছিল তিনি হলেন রানির মা কুইন মাদার। সেসময় দুই লাখ মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল।
রানির কফিন রাখা হবে কিছুটা উঁচু এক প্ল্যাটফর্মের পের, যাকে বলা হয় ক্যাটাফাল্ক। ঘরের মাথার ওপর একাদশ শতব্দীর মধ্যযুগীয় কাঠের ছাদ। কফিনের প্রতিটি কোনায় পাহারায় থাকবেন রাজকীয় বাহিনী রয়াল হাউসহোল্ডের ইউনিটে কর্মরত সৈন্যরা। বাকিংহাম রাজপ্রাসাদ থেকে সামরিক কুচকাওয়াজ সহযোগে ধীরগতিতে শোভাযাত্রা করে রানির কফিন নিয়ে আসা হবে ওয়েস্টমিনস্টার হলে। কফিনের সাথে শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন রাজপরিবারের সদস্যরা। রাস্তা দিয়ে যাওয়া এ শোভাযাত্রা দেখতে পাবেন সাধারণ মানুষ। লন্ডনের রাজকীয় উদ্যানগুলোয় এ শোভাযাত্রা দেখার জন্য বসানো হবে বিশাল বিশাল পর্দা যেখানে সম্প্রচারিত হবে পুরো শোক মিছিল।

রানির কফিন আচ্ছাদিত থাকবে রাজকীয় পতাকা রয়াল স্ট্যান্ডার্ডে এবং কফিন ওয়েস্টমিনস্টার হলে আনার পর তার ওপর বসানো হবে রাজমুকুট ইম্পিরিয়াল স্টেট ক্রাউন, রাজকীয় গোলক এবং রাজদণ্ড। ওয়েস্টমিনস্টার হলে কফিন রাখার পর একটি প্রার্থনা অনুষ্ঠান হবে। তারপর সাধারণ মানুষকে সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রানির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে গির্জায় এবং দু’সপ্তাহের মধ্যেই এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে একটি ঐতিহাসকি গির্জা যেখানে ব্রিটেনের রাজা ও রানিদের মাথায় রাজমুকুট পরানোর অনুষ্ঠান হয়েছে। এখানেই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছে ১৯৫৩ সালে এবং এখানেই ১৯৪৭ সালে প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে রানির। তবে অষ্টাদশ শতাব্দীর পর থেকে এ গির্জায় কোন রাজা বা রানির শেষকৃত্যানুষ্ঠান হয়নি। তবে ২০০২ সালে রানির মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

পৃথিবীর নানা দেশ থেকে রাষ্ট্রপ্রধানরা আসবেন এই শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে রাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগ দিতে। রানির জীবন ও কর্মজীবনকে স্মরণ করা হবে ওই বিশেষ শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন ব্রিটেনের শীর্ষ রাজনীতিকরা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীরাও।

দিনের শুরুতে রাজকীয় নৌবাহিনীর রাষ্ট্রীয় কামানবাহী শকটে করে রানির কফিন নিয়ে যাওয়া হবে ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে গির্জায়। কামানবাহী এই রাষ্ট্রীয় শকট শেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৭৯ সালে, যখন প্রিন্স ফিলিপের কাকা লর্ড মাউন্টব্যাটেনের শেষকৃত্যে তা টেনে নিয়ে যায় রয়াল নেভির ১৪২জন নাবিক। এ শোভাযাত্রায় অংশ নেবার কথা রয়েছে নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রাজ পরিবারের ঊর্ধ্বতন সদস্যদের।
এখনও পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে ওয়েস্টমিনস্টার গির্জার ডিন বা প্রধান ডেভিড হয়েল এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন। তার সঙ্গে থাকবেন ক্যান্টারবেরি গির্জার আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি, যিনি ধর্মকথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে হয়ত কিছু পাঠ করতে বলা হবে।

শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের পর রানির কফিন পদযাত্রা করে অ্যাবে থেকে নিয়ে যাওয়া হবে লন্ডনের কেন্দ্রে হাইড পার্ক কর্নারে ওয়েলিংটন আর্চ নামে এক ঐতিহাসিক খিলান স্তম্ভে। সেখান থেকে তার কফিনবাহী শকট রওয়ানা হবে উইন্ডসর রাজপ্রাসাদের উদ্দেশ্যে। শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের দিন বিকালেই রানির কফিন অন্তিম যাত্রা করবে তার চূড়ান্ত গন্তব্য উইন্ডসর কাসেলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল অভিমুখে।

কফিন সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে সমাহিত করার প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আগে উইন্ডসর কাসেলের চৌকনো চত্বরে শোভাযাত্রায় অংশ নেবার কথা রয়েছে রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রাজ পরিবারের ঊর্ধ্বতন সদস্যদের। রাজপরিবারের সদস্যরা সচরাচর সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল নামে উইন্ডসরের এই গির্জাটি বেছে নেন বিবাহ অনুষ্ঠান, সদ্যোজাতের জন্য ঈশ্বরের আর্শীবাদ প্রার্থনা অনুষ্ঠান এবং শেষকৃত্যানুষ্ঠানের জন্য। এ গির্জাতেই ডিউক ও ডাচেস অফ সাসেক্স, প্রিন্স হ্যারি ও মেগান বিয়ে করেছেন এবং এ গির্জাতেই সম্পন্ন হয়েছে রানির স্বামী প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্যানুষ্ঠান। রানির কফিন এখানে নামানো হবে রাজ পরিবারের এক প্রকোষ্ঠ রয়াল ভল্ট-এ। এরপর সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলের অভ্যন্তরে রাজা ষষ্ঠ জর্জের স্মৃতিসৌধ কিং জর্জ সিক্সথ মেমোরিয়াল চ্যাপেলের ভেতর রানির লাশ সমাহিত করা হবে।

রানির জন্য প্রার্থনা সভায় গাওয়া হলো ‘গড সেভ দ্য কিং’ : রাজনীতিবিদ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিস ট্রাস এবং শুভাকাক্সক্ষীরা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্য প্রার্থনা সভায় শুক্রবার প্রথম জনসমক্ষে ব্রিটেনের জাতীয় সংগীত ‘গড সেভ দ্য কিং’ গাইলেন। রানিকে উৎসর্গ করে গানটির ৭০ বছর পরে মৃত রানির পুত্র রাজা তৃতীয় চার্লসের সিংহাসনে আরোহনের প্রতিফলন ঘটানোর জন্য সেন্ট পল ক্যাথেড্রালে গানটি গাওয়া হয়। গত ৭০ বছর ধরে সঙ্গীতটি ছিল ‘গড সেভ দ্য কুইন’। চার্লস রাজা হওয়ার এখন থেকে এটি হবে-‘গড সেভ দ্য কিং’।
শেষকৃত্যে যোগ দেবেন বাইডেন : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সাংবাদিকদের শুক্রবার তিনি এ কথা জানিয়ে বলেন, আমি এখনও বিস্তারিত জানি না। তবে আমি যাচ্ছি।

রানির শেষকৃত্যানুষ্ঠানের তারিখ এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে ১৯ সেপ্টেম্বর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। বাইডেন বলেন, তিনি এখনও রানির ছেলে রাজা তৃতীয় চার্লসের সাথে কথা বলেননি। বাইডেন ওহায়োর কলম্বাস ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরের উদ্দেশে এয়ার ফোর্স ওয়ানে চড়ার আগে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন।
বদলে যাবে জাতীয় সংগীত : নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের সিংহাসনে বসার পর থেকেই বদলে যাবে ব্রিটেনের অনেক কিছুই। জাতীয় সংগীত থেকে শুরু করে নোট, মুদ্রা, স্ট্যাম্প, পোস্টবক্স এবং পাসপোর্ট-এ পরিবর্তন আসবে একের পর এক। বদলে যাবে অনেক প্রতিষ্ঠানের নামও। ব্রিটেনের কয়েন ও নোটগুলোতে প্রদর্শিত হবে নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রতিকৃতি। ১৯৩৬ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জের ৩২৬ দিনের শাসনামলে ট্রায়াল কয়েনগুলো আনা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি সেগুলো বাতিল করে দেন। পুরো ব্রিটিশ স্ট্যাম্পে স্থাপিত হবে রাজার মাথার ছাপ। মুদ্রার মতো বদলে যাবে পুলিশের হেলমেটের চিহ্নও।

পুরুষ সংস্করণের কথা নিয়ে জাতীয় সংগীত ‘গড সেভ দ্য কিং’-এ ফিরে যাবে ব্রিটেন। ধারণা করা হচ্ছে ১৯৫২ সাল থেকে এটি গাওয়া হয় না। এটি নিউজিল্যান্ডের একটি জাতীয় সংগীত এবং অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার রাজকীয় সংগীত। ব্রিটিশ পাসপোর্টের ভেতরের কভারের শব্দগুলো আপডেট করতে হবে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং নিউজিল্যান্ডের পাসপোর্টও বদলে যেতে পারে একইভাবে।

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ক্ষমতা : ব্রিটিশ রাজা প্রধানত একটি আনুষ্ঠানিক ব্যক্তিত্ব এবং সাধারণত রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না বলে আশা করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে তারা কিছু সাংবিধানিক ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। পার্লামেন্ট হল ইউনাইটেড কিংডমের সর্বোচ্চ আইনি কর্তৃপক্ষ এবং এতে হাউজ অব কমন্স, হাউজ অব লর্ডস ও ক্রাউন রয়েছে-যা রাজতন্ত্র সম্পর্কিত কয়েকটি শব্দ। ক্রাউন হলো ব্রিটেনের সরকারব্যবস্থার প্রাচীনতম অংশ। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এর ক্ষমতাগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে।

সরকার নিয়োগ : একটি সাধারণ নির্বাচনের পরের দিন রাজা হাউজ অব কমন্সে সবচেয়ে বেশি আসন জয়ী দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ও সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান।
সংসদ খোলা ও ভাঙা : রাজা প্রতি বছর ঐতিহ্যগতভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্বোধনের মাধ্যমে সংসদ খোলেন এবং পরবর্তী ১২ মাসের জন্য সরকারের পরিকল্পনা পড়েন। অনুষ্ঠানটি সাধারণত বাকিংহাম প্যালেস থেকে ওয়েস্টমিনস্টার পর্যন্ত মিছিলের মাধ্যমে শুরু হয়। ইম্পেরিয়াল স্টেট ক্রাউন পরে রাজা হাউজ অব লর্ডসে চলে যান। ক্রাউন একটি সাধারণ নির্বাচনের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদ ভেঙে দেয়।

রাজকীয় সম্মতি : হাউজ অব কমন্স এবং হাউজ অব লর্ডস দ্বারা কোনো বিল পাসের পর এটি অনুমোদন করে আইনে পরিণত করার জন্য রাজার কাছে পাঠানো হয়। ইচ্ছে করলে রাজা এটি প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে এটি রাবার-স্ট্যাম্পিং পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। ১৭০৮ সালে সম্মতি প্রত্যাখ্যানকারী হয়েছিলেন রানি অ্যান।

প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন : রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার সব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাপ্তাহিক বৈঠক করতেন- যেখানে প্রধানমন্ত্রীরা রানিকে তাদের পরিকল্পনা এবং উদ্বেগের কথা জানাতেন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাজত্বকারী ব্রিটিশ রানি। আর প্রিন্স চার্লস ছিলেন সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে এ শাসনের উত্তরাধিকারী। রানি নিজেও তার রাজত্বের ৭০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে ছেলের এ দীর্ঘ সময় উৎসর্গের প্রশংসা করেছিলেন। কয়েক দশকের প্রস্তুতির পর বৃহস্পতিবার তার মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু চার্লসের দীর্ঘ অঘোষিত অপেক্ষার অবসান ঘটাল।

রানির ৫০ কোটি ডলারের উত্তরাধিকারী তৃতীয় চার্লস : রানি এলিজাবেথের সম্পত্তি নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে। রানির সম্পত্তির পরিমাণ হিসাব করে একটি প্রতিবেদনে ছেপেছে বিখ্যাত ফরচুন ম্যাগাজিন। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী রানির ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ ৫০ কোটি ডলার। ৭০ বছরের বেশি সময় সিংহাসনে আসীন ছিলেন তিনি। ওই সময়েই এই পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করেছেন তিনি। এ ছাড়া ব্রিটিশ রাজপরিবারের ২৮ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা রয়েছে, যাকে রয়্যাল ফার্ম বলা হয়। রাজা ষষ্ঠ জর্জ ও প্রিন্স ফিলিপ এটিকে পারিবারিক ব্যবসাও বলে থাকেন।

৯৬ বছর বয়সে রানির মৃত্যু হয়। তিনি তার আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে গেলেন ৫০ কোটি ডলারের সম্পত্তি। ছেলে প্রিন্স চার্লস রাজার আসনে বসার পরপরই বিপুল এ সম্পত্তির মালিক বনে যাবেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা, রয়টার্স ও ডেইলি মেইল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Asraf Mirza ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
রাজতন্ত্র স্বীকার করার অর্থই হলো দাসত্ব স্বীকার করা। আধুনিক যুগে রাজা ও রানী গনতন্ত্রের পরিপন্থী।
Total Reply(0)
Souvik Mitra ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
আমাদের এসব নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই।
Total Reply(0)
KrAman Humanity Norm ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৫৮ এএম says : 0
সুশৃঙ্খল সুশিক্ষিত পরিশ্রম এবং নেতৃত্ব মান্যতা কমান্ডারের আদেশ নির্দেশ পালন বৃটেনের নাগরিকরা সুফল ভোগ করছেন। যেটা অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম।
Total Reply(0)
Naim H Bhuiyan ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:১২ এএম says : 0
মা ছিল দীর্ঘ সময়ের রানী আর ছেলে হলো দীর্ঘ অপেক্ষার পর রাজা!
Total Reply(0)
Sirajul Islam Shipon ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:১২ এএম says : 0
অবশ্যই ভালো হবে, রাজার কোনো শত্রু নেই, আছে অগনিত বন্ধু। ক্ষমতার দ্বন্দ নেই, আছে অপরিসীম শ্রদ্ধা ও বুকভরা ভালোবাসা। God save the king.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন