ধর্ষণ মামলায় জামিন পেয়েছেন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন। খবর পেয়ে মামলার বাদী আদালতে ছুটে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি আদালত চত্বরে নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়ার হুমকি দেন।
তিনি দাবি করেছেন, জামিন বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে কথা বলতে চাইলেও বিচারক তার কোনো কথাই শোনেননি।
ওই তরুণী বলেন, দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, মালামাল জব্দের একটি আদেশ মাথায় নিয়ে দেড় বছর পরে আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন লাভ করায় আইন তার (তরুণী) ওপরে অবিচার করেছে।
রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত জসিম উদ্দিনের জামিনের সংবাদে আদালত চত্বরে ওই তরুণীর কান্নায় ভেঙে পড়ার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সেখানে ওই তরুণীকে বলতে শোনা যায়, আমি আজকে পেট্রল ঢেলে আমার শরীর জ্বালিয়ে দিব। কোন আইন ঠেকাতে পারে তা আমি দেখব। আজকে কীভাবে আদালত জামিন দেয়, সেটা বলুন? ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে মামলা করেছি। গত মাসেও খোঁজ নিয়ে গেছি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পৌঁছেছে কিনা। ওর মালামাল জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আমি গতকাল পুলিশ কমিশনারের অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পৌঁছেছে কিনা।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, চার্জশিটভুক্ত ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, মালামাল জব্দের আদেশ মাথায় নিয়ে আদালতে দাঁড়িয়ে কীভাবে আসামি জামিন লাভ করে? আজকে কোর্টের সামনে আমি আত্মহত্যা করলে এর দায় কে নেবে?
ওই তরুণী মুঠোফোনে বলেন, অর্থের বিনিময়ে আসামি জসিম উদ্দিনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর যদি শক্ত থাকতেন, তাহলে জামিন হতো না। সে (জসিম উদ্দিন) জামিন পাওয়ায় আমি চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি। আইন আমার প্রতি অবিচার করেছে। মামলার নির্ধারিত তারিখ ছিল অক্টোবর মাসের ৪ তারিখ। কিন্তু যোগসাজশ করে আগাম আদালতে গিয়ে স্থায়ী জামিন নিয়েছে বলে জেনেছি।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলী অ্যাডভোকেট ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলে আসামি যেকোনো দিন আদালতে হাজির হতে পারেন। আজকে আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছেন। আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। তবে খবর পেয়ে মামলার বাদী আদালতে এসেছিলেন, কিন্তু ততক্ষণে আদালত জামিন মঞ্জুর করে ফেলেছেন। আমাদের আর কিছু করার ছিল না।
অন্যদিকে অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৯ এপ্রিল নগরীর এয়ারপোর্ট থানায় লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২১ এপ্রিল রাতে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা গ্রহণ করে পুলিশ।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, জসিম উদ্দিনের সঙ্গে আট বছর ধরে সর্ম্পক চলে আসছিল ওই তরুণীর। সম্পর্কের বিভিন্ন সময় শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন। ওই তরুণী প্রস্তাবে রাজি না হলে জসিম উদ্দিন বিয়ের প্রলোভন দেখান। এ সময় জসিম উদ্দিন বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী দিয়ে আকৃষ্ট ও বিশ্বাস অর্জন করতে চান। সেই সূত্র ধরে ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ওই তরুণীর বাসায় বেড়াতে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। এতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন ওই তরুণী। জসিম উদ্দিন এই খবর শুনে গর্ভপাত করার প্রস্তাব দেন। রাজি না হলে সমাজে মুখ দেখানোর উপায় থাকবে না বলে বোঝান। শেষে গর্ভপাত করার জন্য পিল এনে দেন জসিম।
এতেও কাজ না হলে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ডা. তানিয়া আফরোজের মাধ্যমে গর্ভপাত করান। পরবর্তীতে ঢাকা, বরিশালের বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় দেখা করার সময় বিয়ের প্রলোভন দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় ওই তরুণীর বাসায় গিয়ে সারারাত একসঙ্গে থাকেন জসিম উদ্দিন। এ সময় তরুণীকে তিন বার ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন