মাওলানা মুহাম্মদ রেজাউল করিম : ভূমিকা : গোটা বিশ্ব যখন অসভ্যতা, বর্বরতা ও জাহেলিয়াতের ঘোর তমসায় আচ্ছাদিত; মানবতা, প্রেম, ভ্রাতৃত্ব ও মনুষ্যত্ববোধ তিরোহিত, তখন অধ:পতিত মানবজাতির চির মুক্তির নিমিত্তে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত; বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লøাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মানবতার রহমত ‘কল্যাণ’ রূপে ধরাবক্ষে প্রেরণ করেন। কোরআন কারীমে এরশাদ হয়েছে, আমি আপনাকে উভয় জগতের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি (সূরা আলে ইমরান)। মহানবী সাল্লøাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ওফাত শরীফের পর ইসলামের চিরশত্রু মুনাফিক, বেঈমান ও বাতিল শক্তির অপথাবায় যখন ইসলামের আক্বীদা-বিশ্বাসে ক্ষতি সাধিত হয়, তখনি আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লøাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের একান্ত অনুসারী, আশেক ও আল্লাহ প্রেমিকগণ কোরআন সুন্নাহর জ্ঞানে উদ্ভাসিত হয়ে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামকে বিকৃতি ও বিচ্যুতির হাত থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। এ সকল মর্দে মুজাহিদদের মধ্যে কলম স¤্রাট আশেকে রাসূল, ইমামে আহলে সুন্নাত, আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি অন্যতম।
জন্ম : আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, শাহ মাওলানা মুহাম্মদ আহমদ রেযা খাঁন ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ১২৭২ হিজরী সনের ১০ শাওয়াল ১৪ জুন ১৮৫৬ সালে ভারতের ইউপি প্রদেশের বেরলী শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষা অর্জন : আ’লা হযরত অত্যন্ত ধী শক্তি ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। মাত্র ৪ বছর বয়সে পবিত্র কোরআন শরীফ পঠন সমাপ্ত করেন এবং ৬ বছর বয়সে মিলাদে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিষয়ে সারগর্ভ বক্তব্য পেশ করে নন্দিত হন। আলেম ও মাশায়েখদের সান্নিধ্য অর্জন : আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত শাহ্ মাওলানা ইমাম মুহাম্মদ আহমদ রেযা খাঁন ফাজেলে বেরলভী রাহমাতুল্লøাহি আলায়হি যুগশ্রেষ্ঠ আলেম, পীর মাশায়েখ ও বুজুর্গানে দ্বীনের সান্নিধ্য অর্জনে ধন্য হয়েছেন। তিনি যুগশ্রেষ্ঠ আলেম মির্জা গোলাম কাদের বেগ আল্লামা আবদুল আলী রামপুরী, আল্লামা নকী আলী খাঁন-এর নিকট হতে শরিয়তÑ তরিক্বতের দ্বীক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ব্যাপক বুৎপত্তি অর্জন করেন। ১২৮৬ হিজরীর শা’বান মাসে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। খিলাফত লাভ : আ’লা হযরত ১২৯৪ হিজরী সনে স্বীয় পিতা আল্লামা নকী আলী খাঁন রাহমাতুল্লাহি আলায়হির সাথে শাহ আলে রাসূল মার হারাভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির হাতে সিলসিলায়ে আলীয়া ক্বাদেরীয়ায় বায়াত গ্রহণ করেন এবং স্বল্পসময়ে খেলাফত লাভে ধন্য হন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন হক্কানী সিলসিলায় অনুমতি ও খেলাফত লাভ করেন এবং ত্বরিকত জগতে উচ্চস্থানে অধিষ্ঠিত হন। মুজাদ্দিদে জামান : যুগে যুগে আবির্ভূত মুজাদ্দিদগণের মধ্যে হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম মুহাম্মদ আহমদ রেযা খান রাহমাতুল্লাহি আলায়হি অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি ঈমান, আক্বীদা, আমল, আখলাক, স্বভাব চরিত্র, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ মানুষের জীবনের প্রত্যেক বিষয়ে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সংস্কারকর্ম সম্পাদন করেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘‘মহান আল্লাহ এ উম্মতের জন্য প্রত্যেক শতাব্দীতে একজন মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক প্রেরণ করেন, যিনি উম্মতের জন্য তাঁর (প্রিয় নবীর) দ্বীনকে সজীব করে দেন। (আবু দাউদ শরিফ)। আর আ’লা হযরত (রাহ.) নবীর বাণীর সার্থক রূপকার ছিলেন।
মুজাদ্দিদের শর্ত : উপরিউক্ত হাদীস শরীফের মাধ্যমে আমরা অবগত হলাম যে, মুজাদ্দিদ বিশেষ কোনো পরিবারের উত্তরাধিকারী নয় এবং মুজাদ্দিদ হওয়ার জন্য গবেষক বা মুজতাহিদ হওয়াও অত্যাবশ্যকীয় নয়। তবে মুজাদ্দিদের জন্য নি¤েœাক্ত শর্তাবলী প্রযোজ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী হওয়া। বিশুদ্ধ ও সঠিক আক্বিদায় বিশ্বাসী হওয়া। ইসলামী জ্ঞানে গভীর, প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ ও অতুলনীয় হওয়া। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া। যুগের অদ্বিতীয়-প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব হওয়া। দ্বীনের নিঃস্বার্থ সেবক, অকুতোভয় ও আপোষহীন হওয়া। কুসংস্কার ও বেদআত বিদূরিতকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। মুত্তাকী ও পরহেজগার এবং আমলের দিক দিয়ে অনন্য হওয়া। শরিয়ত ও তরিকতের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী হওয়া। জাহেরী-বাতেনী জ্ঞানের অধিকারী হওয়া।
দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হওয়া ইত্যাদি।
আ’লা হযরত (রাহ.) উপরিউক্ত বিষয়াবলীর প্রত্যেকটি শাখায় যুগশ্রেষ্ঠ ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তৎকালীন প্রসিদ্ধ আলেমগণ শরিয়ত ও তরিক্বতের ক্ষেত্রে তার অনন্য অবদান লক্ষ্য করে তাঁকে হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হিসাবে অভিহিত করেন। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন