আতিকুর রহমান নগরী : প্রতিনিয়ত আমরা কারো না কারো কাছ থেকে উপকৃত হয়ে থাকি। কেউ আমাদের উপকার করেছে, সেই উপকার সম্পর্কে যে আমরা সচেতন তা ওই ব্যক্তিকে অবহিত করার এবং তাতে আনন্দ প্রকাশ করার একটি উপায় হলো শুকরিয়া আদায় বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। উপকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য আমরা আমাদের ভাষায় ‘ধন্যবাদ’ বলে থাকি। যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো সময় নিজ নিজ ভাষায় উপকারী লোককে ধন্যবাদ বলে। ইসলামে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আমরা প্রায় সবাই আমাদের জীবনে বিভিন্ন সমস্যা ও অসুবিধার সম্মুখীন হই। সুসময় ও দুঃসময় তথা সর্বাবস্থায় আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করা ও আমাদের দুর্বলতা ও শক্তি সবসময় তাঁর কৃতজ্ঞ হওয়াই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। কিন্তু কেউ প্রশ্ন করতে পারে : একজন দরিদ্র মানুষ তার দারিদ্র্যের জন্য কেন আল্লাহতায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে?
প্রকৃতপক্ষে, দারিদ্র্য কঠিনতম পরীক্ষাগুলোর মধ্যে একটি, যা দ্বারা আল্লাহতায়ালা একজন দরিদ্র মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। তিনি দেখেন, সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে কিনা। যদি সে কৃতজ্ঞ হয় তাহলে তার পুরস্কার মহানবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর এই বাণীতে ঘোষিত হয়েছে : “বিত্তবানের পাঁচশত বছর পূর্বে বিত্তহীন জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (তিরমিজি : ২৩৫১; রিয়াযুস সালেহীন : ৪৮৭)
কোরআন : আমরা যদি আল্লাহতায়ালার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি তাহলে তিনি আমাদের প্রতি তাঁর কল্যাণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহতায়ালা বলেন : “যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর”। [সূরা ইব্রাহিম ১৪:৭]
আল্লাহতায়ালার আমাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার প্রয়োজন নেই, পক্ষান্তরে তাঁর কৃতজ্ঞ হলে আমাদেরই কল্যাণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল স্বীয় কল্যাণের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর সে অকৃতজ্ঞ হলে তো আল্লাহঅভাবমুক্ত প্রশংসিত’। (সূরা লুক্বমান ৩১:১২)
আল্লাহতায়ালা মুমিনদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তার বিনিময়ে তাদেরকে তাঁর স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে-‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখব এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও অকৃতজ্ঞ হয়ো না’। (সূরা লুকমান ২:১৫২)
হাদিসের দৃষ্টিতে কৃতজ্ঞতা : আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত আছে, মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন- ‘যে কেউ মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞ হয় না’। (তিরমিজি/১৯৫৫; আবুদাউদ/৪৮১১)
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের কৃতজ্ঞ হওয়া কত গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝানোর জন্য এর থেকে অধিক প্রাঞ্জল ও অর্থপূর্ণ বিবৃতি আর হতে পারে না।
আয়েশার বর্ণনায় পাওয়া যাচ্ছে যে, প্রিয়নবী (সা). রাতে দীর্ঘ সময় ধরে সালাত আদায় করতেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করছেন : মহানবী (সা.) রাতে এত দীর্ঘ সময় নিয়ে সালাত আদায় করতেন যে, তাঁর পাগুলো ফুলে যেত। আমি বললাম : ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এরকম কেন করছেন, অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আপনার পূর্বাপর সমস্ত পাপরাশি ক্ষমা করে দিয়েছেন?’ তিনি বললেন : ‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পছন্দ করব না?’ (সহিহ বুখারি ৬/৩৬১)
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন সম্পর্কে ইসলাম যা বলে : আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রতি যে নেয়ামত ও কল্যাণ দান করেছেন, তার জন্য শুধু তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের তারিফ করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন ওই সমস্ত লোকের কৃতজ্ঞ হতে যারা আমাদের উপকার ও কল্যাণ করবে। একজন বান্দার নিকট যেমন ‘হামদ’ (প্রশংসা) একটি কাম্য, অনুরূপ তার নিকট কাম্য ‘তাশাক্কুর’ (কৃতজ্ঞতা)। ইসলাম ধর্মের নির্দেশ : মানুষ আল্লাহতায়ালার প্রশংসা (হামদ) করবে এবং মানুষের কৃতজ্ঞ হবে যারা আমাদের কল্যাণ করে।
কৃতজ্ঞতা অনুগ্রহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে : আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর তাহলে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর’। (সূরা ইব্রাহিম ১৪:৭) অতএব, আমাদের জীবনে বৃহত্তর আকারে আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ ও কল্যাণ প্রাপ্তির জন্য সকাল-সন্ধ্যার জিকরসমূহে আল্লাহতায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব। (চলবে)
মন্তব্য করুন