শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন : কীভাবে শ্রেষ্ঠ হলেন আবু বকর সিদ্দিক রা.?

আবদুল আউওয়াল | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:৫৪ এএম

উত্তর: নবিজির প্রিয় সঙ্গী: যে লোকটির সঙ্গে বাল্যকাল থেকেই নবিজির সা. সবচেয়ে বেশি মিল-মহব্বত ও বন্ধুত্ব ছিল তিনি হলেন আবু বকর সিদ্দিক রা.। অনেক আচার-আচরণে প্রিয় নবির সঙ্গে মিল থাকায় তাঁদের ভাব ছিল গলায় গলায়। যে কারণে শামের প্রথম দ্বিতীয় সফরে আবু বকর রা: নবিজির সাথে ছিলেন। এবং সফরগুলোতে বুহাইরা ও নাসতুরা নামের দুই খ্রিস্টান পাদ্রীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোও তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এবং সেই সফরে বুহাইরার মুখ থেকে ভবিষ্যতে নবিজির সা. নবুয়ত লাভ ও তিনি তাঁর সঙ্গী হওয়ার সুসংবাদ পেয়েছিলেন।

প্রথম মুসলমান পুরুষ: পূর্ব থেকেই তিনি প্রিয় নবির সা. নবুয়ত লাভের অপেক্ষায় ছিলেন। নবুয়তের দ্বিতীয় দিনে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ইয়ামেনের সফর থেকে ফিরে এসে শুনতে পেলেন মুহাম্মাদ সা. নবি দাবি করেছেন। আবু বকর রা. তখন তাঁর বাড়িতে গেলে নবিজি সা. তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দেন। তিনিও সঙ্গে সঙ্গে দাওয়াত কবুল করে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে যান। তাঁর সম্পর্কে নবিজি সা. বলেন, ‘আমি যার কাছেই ইসলাম উপস্থাপন করেছি সেই কিছু না কিছু ইসস্ততাবোধ করেছে কিন্তু আবু বকর বিন্দুমাত্র সন্দেহেও করে নি।’ (উয়ুনুল আসার)

প্রথম দা’য়ি: হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে ইসলামের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দেয়া শুরু করেন। তাঁর দাওয়াতে হযরত উসমান বিন আফফান, যুবাইর বিন আওয়াম, আবদুর রহমান বিন আউফ, তালহা বিন উবাইদুল্লাহ ও সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের রা. মতো বড় বড় ব্যক্তিবর্গ ইসলাম গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও আরো বহু সাহাবা তাঁর হাত ধরে ইসলামের ছায়াতলে আসেন। ( সীরাতে মুস্তফা)

দ্বীনের জন্য প্রথম সর্বাদিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি: ইসলাম গ্রহণ করে কমবেশি সকল সাহাবা কষ্ট স্বীকার করেছেন। নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তন্মধ্যে আবু বকর সিদ্দিক রা. হলেন আল্লাহর রাসুলের সা. পর সর্বপ্রথম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও কষ্টপ্রাপ্ত ব্যক্তি। কাফেরদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি শেষ পর্যন্ত হাবশায় হিযরতের উদ্দেশ্যে ‘বারকুল গামাদ’ পর্যন্ত গমন করেন। পথিমধ্যে ইবনুদ দাগানার সঙ্গে সাক্ষাত হলে তিনি তাঁর দেশ ত্যাগের কারণ জানতে চান। সব শুনে নিজে মক্কায় আসেন এবং কাবার তাওয়াফ শেষে কুরাইশ নেতাদের লক্ষ্য করে জ¦ালাময়ী ভাষণ দেন। তিনি বলেন,‘আবু বকরের মতো লোক হয় না। কোনো অবস্থাতেই তাঁকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা যায় না। তোমরা এমন লোককে দেশ ত্যাগে বাধ্য করছো যিনি গরিব-অসহায়ের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করেন, আত্মীয়তার হক আদায় করেন, জন সাধারণের ঋণের বোঝা বহন করেন, মেহমানদারি করেন, ন্যায়-অন্যায়ের তফাৎ বজায় রাখেন? আমি তাঁকে আশ্রয় প্রদান করছি।’ এ বলে তিনি কুরাইশদের তিরস্কার করে তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যান। (বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

নবিজিকে প্রথম রক্ষাকারী: আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস বর্ণনা করেন, ‘একবার নবিজি সা. হাতিমে কাবায় নামাজ পড়ছিলেন। এমন সময় উকবা বিন আবি মুুয়িত তাঁর গর্দান মুবারকে কাপর পেঁচিয়ে এমন জোরে টানতে লাগল যে, তিনি শ^াসরুদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ার উপক্রম হলেন। ইতোমধ্যে আবু বকর রা. এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরান এবং কুরআনের এই আয়াত পাঠ করেন, ‘তোমরা কি এমন লোককে হত্যা করতে চাচ্ছো যিনি বলেন, আমার রব আল্লাহ। আর তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে তিনি নিয়ে এসেছে সুস্পস্ট প্রমাণাদি?’ (সুরা মুমিন: ২৮) [বুখারি] মুসনাদে বাযযারে মুহাম্মাদ বিন আলি রা. হতে বর্ণিত হয়েছে-‘ হযরত আলি রা. একবার বক্তৃতা কালে জনগণকে লক্ষ করে বলেন, তোমরা বল তো সর্বাপেক্ষা বীর-বাহাদুর কে? লোকেরা বলল, ‘আপনি’। তিনি বললেন, ‘কেউ আমার মোকাবেলা করলে আমি তার প্রতিশোধ গ্রহণ করি।’ মূলত সর্বাপেক্ষা বীর-বাহাদুর আবু বকর সিদ্দিক রা.। কারণ আমি দেখেছি কুরাইশরা নবিজিকে সা. আঘাত করছিল আর বলছিল-‘তুমিই সকল মাবুদকে এক মাবুদে পরিণত করেছো। অবস্থা এমন ভয়ানক ছিল যে, আমাদের কেউ কাছে যাওয়ার সাহস করতে পারছিলাম না। এমন সময় আবু বকর রা. এসে বীরের মতো শত্রæদলের ভেতরে ঢুকে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। মুসনালে আবি ইয়ালায় আনাস রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে-‘ একবার কুরাইশরা নবিজিকে সা. এমন জোড়ে প্রহার করে , তিনি বেহুশ হয়ে যান। এমন সময় হযরত আবু বকর রা. তাঁকে সাহায্য করতে এলে কুরাইশরা নবিজিকে সা. রেখে আবু বকরকে বেদমভাবে প্রহার করতে শুরু করে। এ ধরনের বহু ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন মহামতি আবু বকর সিদ্দিক রা.।

উত্তর দিচ্ছেন : আবদুল আউওয়াল, শিক্ষাবিদ, গবেষক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন