বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলার মাটিতে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তত্ত¡াবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি কোন নির্বাচনে যাবে না। দলীয় সরকারের অধীনে নিরর্বাচন হলে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচন যদি হতে হয়, তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনেই হতে হবে। তত্ত¡াবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
তিনি গতকাল শুক্রবার বিকালে গাজীপুরের কাপাসিয়ার কৃতিসন্তান ও বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আ স ম হান্নান শাহ্’র ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঘাগটিয়া চালা ওয়েলফেয়ার ক্লাব মাঠে আয়োজিত দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নাম উল্লেখ করে বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেন তত্ত¡াবধায়ক সরকার দিবা স্বপ্ন। হাসান মাহমুদ, রাজ্জাকরা বলেন, তত্ত¡াবধায়ক সরকার হবে না। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের পদ্ধতির বিরুদ্ধে তাদের এসব বলার কারণ হলো, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা কোনদিনও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ২০টির অধিক সিট পাবে না। একারণে তারা তত্ত¡াবধায়ক সরকারকে ভয় পায়। আওয়ামী লীগ পর পর তিন বার জনগণের ভোট লুট করে, দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় এসেছে। জনগণের দাবি ও আন্দোলনের মুখে সংসদ ভেঙ্গে তত্ত¡াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে এবং সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অবিলম্বে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে তত্বাবধায়ক সরকার পূনঃপ্রতিষ্ঠিত করে জনগণের রুদ্ররোষ থেকে বাঁচুন।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, দশ টাকা কেজি চাল, বিনা পয়সায় সার, ঘরে ঘরে চাকুরী দেয়ার কথা বলে ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সাথে তামাশা করছেন। বর্তমানে ঘরে ঘরে এখন লক্ষ লক্ষ যুবক বেকার। শিক্ষকতার চাকুরী পেতে বিশ লাখ, কনষ্টেবল ২৫ লাখ, চৌকিদার - দফাদার বারো লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। একরাতে পেট্রোল, ডিজেল, কোরোসিনের দাম বেড়েছে ৫৪ ভাগ। তা ছাড়া চাল, ডাল, সবজির দাম আকাশ চুম্বি। সব কিছুর দাম এখন হাতের নাগালের বাইরে। দ্রব্যমূল্য এবং জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ভোলা, নারায়নগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে পুলিশের গুলিতে শাওনসহ নিহত হয় চার নেতা-কর্মী।
তিনি বলেন, গোটা পৃথিবী জানে বাংলাদেশে আজ মানবাধিকার নাই, আইনের শাসন নাই। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্ত ধর্মান্ধ নয়। খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। অথচ একই মামলায় অন্যদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। তারেক জিয়া ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আজ নির্বাসিত। অসংখ্য আলেম-ওলামা আজ কারাগারে বন্দি। একই সময়ে যারা ব্যাংক ডাকাতি, মানুষ হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন করেছে, তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। রাস্ট্র নির্মাণ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে যে কয়জন অকুতোভয় সৈনিক অবদান রেখে গেছেন, তাদের মধ্যে হান্নান শাহ্ অন্যতম। হান্নান শাহ্ দেশের চরম দূর্দিনে, পার্টির চরম দূর্দিনে হান্নান শাহ্ ছিলেন কান্ডারী। হান্নান শাহ্ চট্রগ্রাম থেকে শহীদ জিয়াউর রহমানের লাশ ঢাকায় এনেছিলেন। তিনি ছিলেন ১/১১ এর বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। তিনি ছিলেন আমাদের উজ্জ্বল নক্ষত্র ও প্রেরণার বাতিঘর।
হান্নান শাহ্ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন।
কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আজিজুর রহমান পেরার পরিচালনায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হান্নান শাহ্ পুত্র শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ, কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, বেনজির আহমেদ টিটু, ওমর ফারুক সাফিন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক বিশিষ্ট শিল্পপতি সোহরাব উদ্দিন, গাজীপুর জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক রাশেদুল হক, বিএনপি নেতা মাষ্টার হুমায়ূন কবির, শাহজাহান ফকির, হেলাল উদ্দিন, ড. অ্যাডভোকেট সাইদুজ্জামান, আ ন ম ইব্রাহীম খলিল, অ্যাড. কাজী খান, আবু তাহের মুসল্লি, মোয়াজ্জেম হোসেন, আকতারুজ্জামান বাবুল, হাসিবুর রহমান খান মুন্না, আতাউর রহমান মোল্লা, জান্নাতুল ফেরদৌসী, ইয়াসিন মোল্লা প্রমূখ। এছাড়া প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের নিয়ে হান্নান শাহ্’র কবরে ফাতেহা পাঠ এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন