বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত¡াবধায় সরকারের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ লক্ষ্যে সরকার বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখাও তৈরি করছে দলটি। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রথম দফার সংলাপ শেষে এখন দ্বিতীয় দফা আলোচনা চলছে। একইসাথে চলছে দেশব্যাপী কর্মসূচিও। তৃণমূলের এসব কর্মসূচি সফলভাবে পালনের পর এবার কেন্দ্রীয় নেতাদেরও উপর চাপ বাড়াচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা। আন্দোলন সফল করতে শীর্ষ নেতাদের মাঠে নামার দাবী জানিয়েছেন তারা। একইসাথে বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের মতো এবার কোন নেতা বেঈমানী করলে তৃণমূল থেকেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন তারা।
জ্বালানী তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে সারাদেশে সমাবেশ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ধারাবাহিক এসব কর্মসূচির অংশ হিসেবে এবার ১০ বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এসব কর্মসূচি সফল করতে এবং কৌশল নির্ধারণে গত ১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ১০টি বিভাগের জেলার সভাপতি/আহŸায়ক, সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব এবং সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
এর মধ্যে ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম ও খুলনা, ২ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও সিলেট, ৩ অক্টোবর রাজশাহী, রংপুর ও কুমিল্লা এবং ৪ অক্টোবর ঢাকা, বরিশাল ও ফরিদপুর বিভাগের নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা হয়।
বৈঠকে অংশ নেতা নেতাদের সূত্রে জানা যায়, সভায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জেলা ও বিভাগীয় নেতাদের বক্তব্য শুনেন। তাদের কাছে জানতে চান তারা কিভাবে আন্দোলন-সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে চান। কোন পর্যায়ে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে? আন্দোলন সফল করতে তাদের কাছ থেকে পরামর্শও নেন তারেক রহমান। এরপর বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল করতে দিক নির্দেশনা দেন তিনি।
বিএনপি নেতারা জানান, চলমান দেশব্যাপী আন্দোলন সফল হয়েছে বলে তারা মনে করেন। এই কর্মসূচিগুলোতে সারাদেশের মানুষের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে, সাধারণ মানুষ এসব কর্মসূচিতে স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণও করেছে। একইসাথে তারা বিএনপির যেসব দাবী রয়েছে- বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রতি তারা সমর্থন জানিয়েছেন। তৃণমূলের সফল এসব কর্মসূচি এবার চূড়ান্ত পর্যায়ে নেয়ার দায়িত্ব শীর্ষ নেতাদের বলেও মন্তব্য করেন কোন কোন নেতা।
রংপুর বিভাগের এক নেতা বলেন, সভায় কয়েকজন নেতা বলেছেন, দলের পক্ষ থেকে তৃণমূলের জন্য যে নির্দেশনা দেয়া হবে জীবন বাজী রেখে সেসব নির্দেশনা পালন করা হবে। সাম্প্রতিক সময়ের কর্মসূচির উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, শতবাধা, হামলা, মামলা, গ্রেফতার উপেক্ষা করে সকল উপজেলায় সফলভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এখন এই সফলতার চূড়ান্ত পরিণতি দেয়ার সময় এসেছে। এজন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দকে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগের এক নেতা বলেন, তাদের মতবিনিময় সভায় জেলার বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, চলমান আন্দোলনের ফলে সরকার সম্পূর্ণরূপে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং মাঠ এখন বিএনপির দখলে। হাইকমান্ড আগামী দিনে যেমন নির্দেশনা দিবে সে অনুযায়ী সকল জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই আন্দোলন আব্দুর রহিম, নূরে আলম, শাওনদের মতো তারাও বুকে গুলি পেতে নিতে প্রস্তুত আছেন। তবে তারা কেন্দ্রের নেতাদেরকেও মাঠে উপস্থিত থেকে আওয়ামী লীগ ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে মোকাবেলার দাবী জানান।
ঢাকা বিভাগের এক নেতা বলেন, বিএনপির তৃণমূল কখনো বেইমানি করেননি। কেন্দ্রীয় কিছু নেতা লোভে পড়ে বিগত দিনে দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, ভুল সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছেন। কিন্তু এবার যদি একইরকমভাবে কেউ ভুল করার সাহস দেখান তাহলে তাকে অপমানের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
নেতারা আরও বলেন, সারাদেশে নেতাকর্মীদের এবার বাঁচা-মরার লড়াই। হয় জিততে হবে, নয় মরতে হবে। এই মন্ত্র নিয়ে সবাইকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এ আন্দোলন সফল করতে কেন্দ্রের নেতাদেরকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর থেকে বেরিয়ে মাঠে থাকার আহবান জানিয়েছেন নেতারা।
এছাড়াও সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক শক্তিতে আন্দোলন করার আহবান জানিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড বিভাগীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, এই মুহূর্তে কার পদ আছে, কার পদ নেই, কে উপরে, কে নিচে কিংবা কে মূল্যায়িত হন নাই সেসব নিয়ে কোন্দল করা যাবে না। আগে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কর্মীরা প্রস্তুত আছে। তারা জীবন দিয়েছে সামনেও রক্ত দেয়ার জন্য তৈরি। কিন্তু আমরা কতটা প্রস্তুত সেটা দেখতে হবে? কারণ কর্মীরা হামলা, মামলা, গ্রেফতারের শিকার হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে। আমরা নেতারা মার খেতে চাই না, জেলে যেতে চাই না। এখন আমরা যারা নীতিনির্ধারক আছি তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কর্মীদের সাথে তাল মেলাবো নাকি পিছিয়ে থাকবো। তবে কর্মীরা মাঠে নামলে নেতাদের না নেমে উপায় থাকবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন