গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ৮ তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। র্যাব ওই নিখোঁজের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তদন্তে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা গৃহ ত্যাগ করেছে বলে উঠে আসে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর বেশি। যারা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিরুদ্দেশ বা নিখোঁজ। এসব তরুণদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই তথ্যসমূহ দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্মিলিত অভিযান চলমান রয়েছে।
রোববার রাতে জঙ্গি সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সাথে জড়িত সংগঠনের দাওয়াতী ও অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী অর্থ সরবরাহকারী ও বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ৩ জন সহ মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তাররা হলো- শাহ মো. হাবিবুল্লাহ ওরফে হাবিব (৩২), নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), মো. হোসাইন (২২), রাকিব হাসনাত ওরফে নিলয় (২৮) এবং মো. সাইফুল ইসলাম রণি ওরফে জায়দ চৌধুরীকে (১৯) গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এসময় উদ্ধার করা হয় ৫টি উগ্রবাদী পুস্তিকা, প্রায় তিনশত লিফলেট এবং ৫টি ব্যাগ।
গ্রেপ্তারের পর সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টার সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোমলমতি তরুণদেরকে সংগঠনের সদস্যরা টার্গেট করত। পরবর্তীতে তাদেরকে বিভিন্ন সময় মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিপীড়নের বিভিন্ন ভিডিও দেখানো এবং বিভিন্ন অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করত। উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করার পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে তরুণদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলত।
উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রেপ্তার হোসাইন ১ বছর আগে, গ্রেপ্তার সাইফুল দেড় মাস আগে এবং গ্রেপ্তার রাকিব ২ মাস আগে নিখোঁজ হয়।
র্যাব জানায়, নিখোঁজ হওয়া তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদেরকে বিভিন্ন সেইফ হাউজে রেখে পটুয়াখালী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়াও, আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদেরকে রাজমিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরী প্রশিক্ষণ দেয়া হত।
কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর বেশি। যারা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিরুদ্দেশ বা নিখোঁজ ছিল বলে জানা যায়। এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার জানেন তারা চাকরির জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত পরিবারকে অর্থ পাঠাত।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে তাদের নাম ও ঠিকানা পাওয়া গেছে; ক্ষেত্র বিশেষে নাম ও ঠিকানায় কিছুটা তারতম্য থাকতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত এই তথ্যসমূহ দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্মিলিত অভিযান চলমান রয়েছে।
খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার হাবিবুল্লাহ কুমিল্লায় কুবা মসজিদের নামাজ পড়াতেন। এছাড়াও তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন, তিনি ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) সংগঠনটিতে যুক্ত হন। তিনি সংগঠনটির অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী ছিলেন। তার নেতৃত্বে কুমিল্লা অঞ্চলে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালিত হত।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি সংগঠনের জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করতেন ও উগ্রবাদী কার্যক্রমে অর্থ সরবরাহ করতেন। পার্বত্য অঞ্চলের নাইক্ষংছড়িতে তিনি প্রায় ২ বছর ধরে একটি মাদ্রাসা পরিচালনা করছেন। তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্র সংগ্রহ করে তার মাদ্রাসায় রাখতেন। এছাড়াও, তিনি এখন পর্যন্ত ১৫-২০ জন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণে পাঠায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন