বিএনপির সমাবেশে জনসমাগম দেখে সরকার উন্মাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রায় দেড় দশক ধরে দুঃশাসন কবলিত বাংলাদেশের মানুষ এবার হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে নিশিরাতের সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। আমাদের সভা সমাবেশগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন যেভাবে তৃণমূলের উত্থান হয়েছে তাতে অবৈধ সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির জনসভাগুলোতে মানুষ আসছে বানের মতো। কন্ঠে তাদের হারানো অধিকার ফিরে পাবার আত্মপ্রত্যয়ের আওয়াজ। এই বজ্র-নির্ঘোষ আওয়াজ শেলের মতো বিধছে শেখ হাসিনার বুকে। লুটপাট-খুন-গুম নির্যাতনে ডুবে থাকা সরকারের নেতারা ক্ষমতা হারানোর আতংকে নির্ঘুম হয়ে গেছেন। সরকারের পতনের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে দিক দিগন্তে। বিপুল জনসমাগম দেখে তারা উন্মাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। হুড়মুড় করে এই বুঝি গণভবনে ঢুকে পড়লো গণতন্ত্রকামী লাখো জনতার উত্তাল স্রোত-এমন দু:স্বপ্ন প্রতিমূহুর্তে মনে হয় তাড়া করছে শেখ হাসিনাকে। এ কারনে জনতার দুর্বার আন্দোলনের কথা শুনে হিংস্র হয়ে উঠেছেন তারা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন ভীরু ও কাপুরুষের দল। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রটেকশনে গুণ্ডা ও সন্ত্রাসীরা বাহাদুরী দেখায়। প্রকৃত সাহসী ও বীরদের কখনোই ভিন্ন কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার নজীর নেই সারা দুনিয়াতে। যারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশকে ধ্বংস করতে দ্বিধা করে না, তারাই রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় গুণ্ডাপাণ্ডাকে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে লেলিয়ে দেয়। জনগণের সমর্থন হারিয়ে এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, হিংসা ও হত্যায় আগ্রহী একটি দল। তারই কুৎসিত প্রমাণ দিলো চট্টগ্রাম বিভাগের মহাসমাবেশে আগত জনগণ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর রক্তাক্ত আক্রমণের বিভৎস রুপ দেখিয়ে। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ-যুবলীগকে খুনে-বাহিনী হিসেবে সংগঠিত করেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কয়েকদিন ধরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আবারো নিয়ে যাবার হুমকি দিচ্ছেন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস। তাদের এই হুংকারে আবারো জনগণের সামনে প্রমাণিত হলো দেশের মানুষের প্রাণের স্পন্দন সবচেয়ে জননন্দিত জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইতিহাসের চরমতম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারারুদ্ধ। শেখ হাসিনা তার ক্যাঙ্গারু কোর্টে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো মামলার ফরমায়েশি রায়ে দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করছেন। বিচারক এবং আদালত সর্বোপরি প্রশাসন আওয়ামী লীগের তল্পিবাহকের ভূমিকা পালন করে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কৃপা কিংবা ক্রোধের উপরই দেশ শাসিত হচ্ছে। দেশের ও তার নিজের দলের প্রকৃত অপরাধীদের তিনি কৃপা করছেন, আর ফ্যাসিবাদের সমালোচনাকারীদের পরিণতি হচ্ছে মিথ্যা মামলায় কারাবরণ কিংবা অন্য কোন ভয়ানক পরিণতি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে। অথচ বর্তমান সময়ে প্রতি বছর লাখো কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে এবং সেই টাকা পাচার হচ্ছে। এরাই আবার সিঙ্গাপুরে শ্রেষ্ঠ ধনী হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে। এরা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এরাই বিগত ১৩/১৪ বছর ধরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। এদেরকে শেখ হাসিনা দিয়েছেন আইন করে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি।
রুহুল কবির রিজভী, আমরা আগেও বলেছি, আইন আদালতে আওয়ামী চেতনার পরীক্ষিত ব্যক্তিদের বসিয়ে অভিনয় করানো হয়। কিন্তু আসল রায় আসে গণভবন থেকে। প্রাণ বাঁচাতে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এই কথা প্রকাশ্যে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বিচার আচার সব একজায়গা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।’ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে থাকবেন, না বাইরে থাকবেন সেটা প্রধানমন্ত্রী ঠিক করেন! খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলা-জেল এগুলো আসলে অপরাধের কারণে নয়, তিনি সম্পুর্ণরুপে নিরপরাধ। শুধুমাত্র নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ধরে রাখার চক্রান্তে নিজের পথের কাঁটা দুর করতে দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে অসত্য মামলায় সাজা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। দেশনেত্রীকে নিয়ে হাছান মাহমুদ ও শেখ ফজলে নুর তাপসের হুংকারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই মূহুর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় মহাসমাবেশে আসার পথে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও বাধা প্রদান করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি জেলাধীন মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ২৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবীব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন